| রবিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | প্রিন্ট | 377 বার পঠিত
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) অনুমোদন নিয়ে ২০১৩ সালের ১১ আগস্ট যাত্রা শুরু করে দেশের বেসরকারি লাইফ বীমা কোম্পানি জেনিথ ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। এরই মধ্যে গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে বেশ সফলতা দেখিয়েছে চতুর্থ প্রজন্মের এ বীমা কোম্পানি। বাংলাদেশের বীমাখাতের সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় নিয়ে সম্প্রতি ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম নুরুজ্জামান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাসির আহমাদ রাসেল।
প্রশ্ন : আপনার দৃষ্টিতে বীমা কী এবং গ্রাহকদের কেন বীমা করা উচিত বলে মনে করেন?
এসএম নুরুজ্জামান : প্রথমত. বীমা হচ্ছে এক ধরনের বাধ্যতামূলক সঞ্চয়। আপনি ব্যাংকে সঞ্চয় করলে যে কোনো সময় তুলে নিতে পারেন, কিন্তু বীমাতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবশ্যই সঞ্চয় করতে হবে। এরপর তুলতে পারবেন। দ্বিতীয়ত. এটি আর্থিক নিরাপত্তা। তৃতীয়ত. অর্থ সাশ্রয়ীও বলা যায়। যেমন, বীমা গ্রাহকদের সরকার প্রিমিয়ামের উপর নির্দিষ্ট হারে আয়কর রেয়াত দিয়ে থাকে।
প্রশ্ন : আপনার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের বীমাখাতের সম্ভাবনা কতটা?
এসএম নুরুজ্জামান : বাংলাদেশের বীমাখাত ব্যাপক সম্ভাবনাময়। বর্তমান সরকার বীমাখাতের উন্নয়নে অনেক কিছু করেছে। পয়লা মার্চকে বীমা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। ফলে সারাদেশে বীমা নিয়ে ব্যাপক ইতিবাচক প্রচার-প্রচারণা হচ্ছে। এতে বীমা সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দূর হচ্ছে। জনগণ বীমাকে আর্থিক নিরাপত্তা হিসেবে মনে করা শুরু করেছে। তারা বীমার দিকে ঝুঁকছে। বীমা পেশাজীবীদের জন্য এটি একটি বিশাল অর্জন। অতীতে শিক্ষিত লোকেরা খুব বেশি বীমা পেশায় আসত না। এখন শিক্ষিত লোকেরা এ পেশায় আসছেন। এসবই সম্ভাবনা।
প্রশ্ন : বীমাখাতের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় অন্তরায় ইমেজ সংকট। বীমাশিল্পে এই ইমেজ সংকট কাটিয়ে ওঠা এবং আস্থা ফিরিয়ে আনতে আপনার কোম্পানি কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে?
এসএম নুরুজ্জামান : বীমাকে অনেক সময় মানুষ এমএলএম, হায় হায় কোম্পানি মনে করে। শিক্ষিতদেরও বীমা সম্পর্কে ধারণা সঠিক নয়। এজন্য সব পক্ষই কমবেশি দায়ী। গণমাধ্যমেও এসব খাত নিয়ে নেতিবাচক খবরগুলো যেভাবে প্রচার হয় ইতিবাচক বিষয়গুলো ততটা প্রচার হয় না। কোনো একটি কোম্পানির কোনো একজন কর্মকর্তা দুর্নীতি কিংবা অর্থ আত্মসাৎ করলে এর দোষ গোটা ইন্ডাস্ট্রির উপর চাপিয়ে দেয়া উচিত না। আইডিআরএ এখন অনেক শক্তিশালী। বীমাখাতে আস্থা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আইডিআরএ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে জনগণের আস্থা বাড়ছে। বীমা সম্পর্কে আমরা সচেতনতা বাড়াতে নানা কর্মসূচি নিয়েছি।
আমরা গত বছর গ্রাহককে ১১ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছি। এর মধ্যে ক্লেইম আছে, এসবি, ম্যাচিউরিটি, সারেন্ডার আছে। এতে মানুষ মনে করছে বীমা কোম্পানি শুধু টাকা নিচ্ছে না দিচ্ছেও। আমরা বীমা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ছোট ছোট কিছু ভিডিও তৈরি করেছি। বীমা কী এবং কেন সেসব জানানোর চেষ্টা করছি। যাতে ইমেজ সংকট কাটিয়ে বীমাখাত গ্রাহকের আস্থার জায়গায় পৌঁছাতে পারে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের বীমাখাতের চ্যালেঞ্জগুলো কী কী এবং উত্তরণের উপায় কী?
এসএম নুরুজ্জামান : বীমাখাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সঠিক সময়ে ও ঠিকমত গ্রাহককে বীমা দাবি পরিশোধ না করা। যার ফলে এ খাতে ইমেজ সংকট দেখা দিয়েছে। বীমার ওপর সাধারণ মানুষ আস্থা রাখতে পারছেন না। ম্যাচিউরিটি হয়ে গেলেই গ্রাহকের অর্থ পরিশোধ করতে কোম্পানিগুলোকে উদ্যোগী হতে হবে। অনেক কোম্পানিই এক্ষেত্রে দেরি করছে। ফলে গ্রাহকরা হতাশ হচ্ছেন। বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে এসব বিষয়েও নজর দিতে হবে।
প্রশ্ন : গ্রাহকদের জন্য আপনাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম কতটা শক্তিশালী?
এসএম নুরুজ্জামান : গ্রাহকদের সেবাপ্রাপ্তির প্রক্রিয়াকে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ করতে বাংলা ভাষায় আমাদের ওয়েবসাইট ও অ্যাপস রয়েছে। গ্রাহকরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও জেনিথের প্রিমিয়াম জমা দিতে পারছেন। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাথেও আমাদের চুক্তি রয়েছে। প্রিমিয়াম জমা দেয়ার সাথে সাথে একজন গ্রাহক মোবাইল এসএমএস, অ্যাপস অথবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হিসাব সম্পর্কিত তথ্য জানতে পারছেন। আমাদের সকল কর্মী এবং কর্মকর্তারাও মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে তাদের পারফরম্যান্স, র্যাংকিং, আর্নিং, বিজনেস স্ট্যাটাসসহ সকল আপডেট তথ্য দেখতে পারছেন। কর্মীদের পদোন্নতিসহ ব্যবসায়িক সকল প্রণোদনামূলক অর্জন কোম্পানির স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হচ্ছে।
প্রশ্ন : দেশে ৩৫টি জীবন বীমা কোম্পানি রয়েছে। এতগুলো কোম্পানির মধ্যে কী কী বৈশিষ্ট্য বা সুবিধার কারণে গ্রাহকদের আপনার কোম্পানিকে পলিসির জন্য বেছে নেয়া উচিত?
এসএম নুরুজ্জামান : আমি মনে করি, গ্রাহকদের এ কারণেইজেনিথ ইন্স্যুরেন্সকে বেছে নেয়া উচিৎ কারণ আমাদের সব সেবা গ্রাহকবান্ধব। জেনিথের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপস বাংলায় করা হয়েছে। যাতে সব শ্রেণির গ্রাহক তাদের প্রিমিয়াম জমা দিয়ে অনলাইন ও মোবাইলের মাধ্যমে সব তথ্য জানতে পারেন। অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রমী কিছু পরিকল্পও আছে জেনিথের। যেমন আমাদের ৬ বছর মেয়াদি একটি পরিকল্প রয়েছে, যা অনেকেরই নেই। স্টুডেন্ট গ্রুপবীমা, আমাদের একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের গ্রুপবীমা পলিসি করেছে। সারাদেশেরএকশ’টি হাসপাতালের সাথে আমাদের কর্পোরেট চুক্তি রয়েছে। আমাদের পলিসিহোল্ডাররা সেখানে হ্রাসকৃত মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। এছাড়াও আমাদের কিছু সিঙ্গেল পলিসি রয়েছে যেটাকে এফডিআর বলা হয়, মাসিক ডিপিএস রয়েছে। যেখানে মাঝখান থেকেই টাকা তোলার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া জেনিথকে আরো বেশি গ্রাহকবান্ধব ও শক্তিশালী করতে আমরা সিটি প্রজেক্ট, মেট্রো প্রজেক্ট, দেশ প্রজেক্টের মাধ্যমে কাজ করছি।
প্রশ্ন : জীবন বীমা আর ইসলামি বীমার মধ্যে পার্থক্য কী? গ্রাহকদের কেন ইসলামি বীমা পলিসি করা উচিত?
এসএম নুরুজ্জামান : বাহ্যিকভাবে দেখলে জীবন বীমা আর ইসলামি বীমার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তবে অন্তর্গত পার্থক্য রয়েছে। ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স মূলত ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক। ইসলামি বীমা বলে, সুদ থেকে বাঁচতে হবে। লেনদেনটা হতে হবে ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক পরিচালিত ব্যাংকে। সুদ নেয়া যাবে না। ইসলামি শরীয়াহ’র বিধি বিধান অনুসরণ করতে জেনিথ ইসলামি লাইফ ইন্সুরেন্সের একটি শক্তিশালী শরীয়াহ কাউন্সিল রয়েছে।
প্রশ্ন : আপনাদের কী কী পলিসি রয়েছে?
এসএম নুরুজ্জামান : আমাদের পলিসিগুলোর মধ্যে রয়েছে মেয়াদি বীমা, কিস্তি বীমা, পেনশন পলিসি, দেনমোহর পলিসি, শিশু নিরাপত্তা পলিসি, এফডিআর, মাসিক ডিপিএস, ছয় বছর মেয়াদি পলিসি, গ্রুপ পলিসি ইত্যাদি।
প্রশ্ন : গত বছরে আপনাদের ইস্যুকৃত পলিসি সংখ্যা কত?
এসএম নুরুজ্জামান : ২০২১ সালে আমাদের ইস্যুকৃত পলিসি সংখ্যা ১০ হাজার ৫১৩টি।
প্রশ্ন : আইডিআরএ অনুমোদনের ৩ বছরের মধ্যে একটি বীমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তাদের শেয়ার অবমুক্ত করতে হয়, আপনারা কেন এখনও আসতে পারছেন না?
এস এম নুরুজ্জামান : আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি প্রক্রিয়ার অনেক কিছুই আমরা সম্পন্ন করেছি ইতিমধ্যে।
প্রশ্ন : অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন (বীমা দাবির সম্ভাব্য অংক) কত? এটি কোন সাল পর্যন্ত করা রয়েছে?
এসএম নুরুজ্জামান : অ্যাকচুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন ২০২০ সাল পর্যন্ত করা রয়েছে।
প্রশ্ন : স্থায়ী ও খন্ডকালীনভিত্তিতে কতজনের কর্ম সংস্থান হয়েছে এ বীমা কোম্পানিতে? বর্তমানে কোম্পানিটির কতগুলো শাখা রয়েছে?
এসএম নুরুজ্জামান : স্থায়ী ও খন্ডকালীনমিলিয়ে এই মুহূর্তে ৫ হাজারেরও বেশি কর্মী জেনিথের সঙ্গে কাজ করছে। এজেন্সি অফিস, সার্ভিস সেন্টার সব মিলিয়ে আমাদের ৪৬টি শাখা রয়েছে। ৪০টি জেলায় আমাদের কার্যক্রম রয়েছে।
ব্যাংক-বীমা অর্থনীতির পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
এসএম নুরুজ্জামান : আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
Posted ২:০৮ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy