বিশেষ প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট | 14 বার পঠিত
কারা হচ্ছেন দেশের বীমা খাতের সর্বোচ্চ অভিভাবক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য- খাত সংশ্লিষ্টদের মাঝে এই প্রশ্ন এখন আলোচনার তুঙ্গে। সম্প্রতি সরকারের সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করেন আইডিআরএ’র চার সদস্য। এর আগে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরপরই তৎকালীন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারীর পদত্যাগের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন আসে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী বা চেয়ারম্যান পদেও। গত ৭ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে নিজেদের পদত্যাগপত্র জমা দেন আইডিআরএ’র চার সদস্য বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, মো. দলিল উদ্দিন, মো. নজরুল ইসলাম ও কামরুল হাসান।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতার পালাবদলে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের প্রতিশ্রুতির মধ্যে পদত্যাগ, নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত আসে একের পর এক। পর্যায়ক্রমে প্রশাসনের সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। করা হয় চুক্তিতে নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকাও। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কর্মকর্তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া নিয়ে প্রশাসনের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
সরকারের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় যেসব বিতর্কিত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয়েছে পর্যায়ক্রমে তা বাতিল হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় পদত্যাগ করতে বলা হয় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া আইডিআরএ’র সদস্যদেরকেও। তবে সদস্যদের এসব পদে কারা নিয়োগ পাচ্ছেন তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে বীমা অঙ্গনে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতীতে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি এসব পদে নিয়োগপ্রাপ্ত অনেকেরই। যোগ্যতার প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করলেও অনেকটা রাজনৈতিক বিবেচনাতেই পদগুলোতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অনেককে। নিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক সৃষ্টি হয় লাইফ ও নন লাইফ সদস্য পদে। যে কারণে সদ্য পদত্যাগকারী সদস্যদের নিয়োগের আগে আইডিআরএ’র সদস্য (লাইফ) পদটি প্রায় দুই বছর এবং সদস্য (নন-লাইফ) পদটি পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে খালি ছিল। এসব পদে যোগ্য ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে সে সময় কয়েক দফা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তবে এবার এসব পদে নিয়োগের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেনি অর্থ মন্ত্রণালয়। সদস্য হতে অনেকের দৌড়-ঝাপ, চেষ্টা তদবিরের খবর শোনা গেলেও মন্ত্রণালয়ে কোনো আবেদন জমা পড়েনি বলে সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এবার আইডিআরএ’র সদস্য পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ বিচার-বিশ্লেষণ, যাচাই-বাছাই করার কথা রয়েছে। সে হিসেবে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের পর্ব রয়েছে। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে মন্ত্রণালয়। তবে এবার কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেও নিয়োগ চূড়ান্ত হতে পারে।
জানতে চাইলে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বীমা ও পুঁজিবাজার অনুবিভাগ) অমল কৃষ্ণ মন্ডল ব্যাংক বীমা অর্থনীতিকে জানান, আইডিআরএ’র সদস্য নিয়োগের বিষয়ে এখন পর্যন্ত তার কাছে হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন-২০১০ এর ধারা-৭ এ, চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে বীমা, ফিন্যান্স, ব্যাংকিং, মার্কেটিং, পরিসংখ্যান, হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, প্রশাসন বা আইনে অন্যূন ২০ বছরের অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে। তবে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী পাওয়া না গেলে অভিজ্ঞতার সময়সীমা শিথিল করা যাবে বলে আইনে উল্লেখ রয়েছে।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইনে বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি চেয়ারম্যান বা সদস্য হিসাবে নিযুক্ত হইবার বা থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি-
(ক) তিনি বাংলাদেশের নাগরিক না হন;
(খ) তিনি বীমা মধ্যস্থতাকারী বা কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন কোন সংস্থার বা উক্তরূপ নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী হন বা তিনি কোন কোম্পানি বা সংস্থার (সরকারী বা বেসরকারী) পরিচালক বা অন্য কোন পদে নিযুক্ত থাকেন;
(গ) তিনি শারীরিক বা মানসিক অসামর্থের কারণে দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন;
(ঘ) তিনি কোন উপযুক্ত আদালত কর্তৃক দেউলিয়া বা অপ্রকৃতিস্থ বলিয়া ঘোষিত হন; (ঙ) তিনি কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ঋণ খেলাপী হিসাবে ঘোষিত হন; (চ) তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোন অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হইয়া আদালত কর্তৃক অন্যূন ৬ (ছয়) মাস বা তদূর্ধ্ব মেয়াদের কারাদন্ডে দন্ডিত হন এবং উক্ত দন্ড হইতে মুক্তি লাভের পর ৫ (পাঁচ) বৎসর সময় অতিক্রান্ত না হয়; বা (ছ) তাহার বয়স ৬৭ (সাতষট্টি) বৎসর পূর্ণ হয়।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১০ এর ধারা-৫ এর উপধারা-১ অনুযায়ী চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য সমন্বয়ে কর্তৃপক্ষ গঠিত হইবে। উপধারা-২ এ বলা হয়েছে, তবে শর্ত থাকে যে, ধারা ৭ এর বিধান সাপেক্ষে, লাইফ ইন্স্যুরেন্স বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অন্যূন একজন এবং নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স বিষয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অন্যূন একজন ব্যক্তিকে কর্তৃপক্ষের সদস্য হিসাবে নিয়োগ করিতে হইবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনে থাকলেও বিভিন্ন সময়ে সদস্য পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এসব শর্ত মানা হয়নি। অধিকন্তু কম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও আইনে অযোগ্য ব্যক্তিদেরই অনেক সময় নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বীমা খাতকে এগিয়ে নিতে হলে লাইফ ও নন-লাইফ এ দুটি সদস্য পদে অবশ্যই মেধাবী, অভিজ্ঞ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আর যথাযোগ্য ব্যক্তিদের এ পদে আনতে হলে বেতন-ভাতাও যথোপযুক্তভাবে নির্ধারণ করতে হবে। জানতে চাইলে বিশিষ্ট বীমা বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্টের (বিআইপিডি) মহাপরিচালক কাজী মো. মোরতুজা আলী বলেন, “বীমা খাতের উন্নয়ন চাইলে অবশ্যই এ খাতের অভিজ্ঞ, দক্ষ, মেধাবী এবং পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির ব্যক্তিদের সদস্য পদে নিয়োগ দেয়া উচিত।”
এসব বিষয় বিবেচনায় আইডিআরএ’র সদস্য (লাইফ) পদে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মেধাবী বীমা ব্যক্তিত্ব মো. জালালুল আজিম, প্রগ্রেসিভ ও সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা অজিত চন্দ্র আইচ, বেঙ্গল ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম মনিরুল আলম, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জিয়াউল হক, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এন সি রুদ্র প্রমুখের নাম আলোচনায় উঠে এসেছে। সদস্য (নন-লাইফ) পদে মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের সাবেক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খালেদ মামুন, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমাম শাহীন, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জামিরুল ইসলাম, পিপলস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম আজিজুল হোসেইন প্রমুখের নাম উঠে এসেছে।
Posted ৯:১০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪
bankbimaarthonity.com | rina sristy