আদম মালেক | মঙ্গলবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট | 357 বার পঠিত
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভোল্টে বড় হচ্ছে জব্দকৃত স্বর্ণের স্ত‚প। এসব অবৈধ স্বর্ণ আটক করে কখনো শুল্ক বিভাগ, কখনোবা পুলিশ, আবার কখনো এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গত একযুগ ধরে এ স্বর্ণের নিলাম বন্ধ রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে। সূত্র মতে, দুই কারণে স্বর্ণের নিলাম হচ্ছে না। প্রথমত. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে জমা রাখা বেশিরভাগ সোনার বিষয়ে মামলা এখনো বিচারাধীন। দ্বিতীয়ত. নিলাম ডাকা হলে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা দাম হাঁকেন খুবই কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অস্থায়ী ভল্টে অবৈধভাবে বিভিন্ন পথে আসা আটককৃত স্বর্ণের বার চলতি মাসের অক্টোবর পর্যন্ত তালাবদ্ধ সিলগালা প্যাকেট জমা রয়েছে ১০টি। যার পরিমাণ ২ হাজার কেজির ওপরে, অন্যদিকে একই সময়ে স্বর্ণালঙ্কারের তালাবদ্ধ সিলগালা প্যাকেট জমা রয়েছে ৯টি, যার পরিমাণ ৮শ কেজির ওপরে ও রৌপ্য খাতে জমাকৃত প্যাকেট রয়েছে ১টি। এসব স্বর্ণের পরিমাণ ৩ হাজার কেজির ওপরে। যার মধ্যে মামলা প্রক্রিয়াধীন স্বর্ণের বারের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ১১১ কেজি ও স্বর্ণালঙ্কারের পরিমাণ প্রায় ৮১৯ কেজির ওপরে। স্বাধীনতার পর থেকে জব্দ হওয়া স্বর্ণের মধ্যে রাষ্ট্রের অনুক‚লে আদালত থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া ২ হাজার ৩শ কেজি স্বর্ণ কিনে রিজার্ভে যোগ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ ২০০৮ সালে ৪ দফায় ৯১ কেজি স্বর্ণ নিলাম হয়। এরপর আর কোনো নিলাম হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব স্বর্ণের বিপরীতে করা মামলার নিষ্পত্তি হয় এবং ভল্টে রাখা স্বর্ণ যদি আদালতের মাধ্যমে সরকারের অনুক‚লে জব্দ করা হয়, সেসব স্বর্ণ নিলাম করা হয়। তবে যেসব স্বর্ণের বার বা বিস্কুট আকারে আছে, সেগুলোকে বিশুদ্ধ স্বর্ণ মনে করা হয়। এগুলো সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংক কিনে নেয়। পরে তারা এগুলোকে রিজার্ভে দেখানোর জন্য ভল্টে রেখে দেয়। নিলামের টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারকে দিয়ে দেয়। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্বর্ণালঙ্কার নিলামে দেয়া হলেও স্বর্ণের বার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিলামে দেয় না। প্রয়োজন মনে করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বর্ণের বার কিনে নিয়ে রিজার্ভে যুক্ত করে, অন্যদিকে বিভিন্ন পথে আসা বেশিরভাগ স্বর্ণের মামলা বিচারাধীন। বিচারাধীন থাকার কারণে স্বর্ণালঙ্কার নিলামে দেয়া যাচ্ছে না।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, জব্দ স্বর্ণ বছরের পর বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে জমা থাকা উচিত নয়। সেই সঙ্গে এসব স্বর্ণের মামলাগুলো দ্রæত নিষ্পত্তির মাধ্যমে নিলাম ডাকা হোক। এতে একদিকে দেশের রাজস্ব বাড়বে, অন্যদিকে স্থানীয়ভাবে স্বর্ণের সংকট দূর হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব হলো স্বর্ণগুলো জমা রাখা। তবে দিনের পর দিন জমা থাকা মোটেও সমীচীন নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুল্ক বেশি থাকায় লাইসেন্স পাওয়ার পরও ৬ মাস স্বর্ণ আমদানি করেননি ব্যবসায়ীরা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ২০ শতাংশ কর প্রত্যাহার করা হয়। প্রতি ভরি স্বর্ণ আমদানিতে বর্তমানে ২ হাজার টাকা সম্পূরক শুল্ক দিতে হয়। ব্যাগেজ রুলসেও একই শুল্ক লাগে। শুল্ক কমানোর পর ১০ জুন ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড ১১ হাজার গ্রাম স্বর্ণ আমদানির জন্য আবেদন করে। দ্রæত সময়ে অনাপত্তিও দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। দুবাই থেকে ৩০ জুন স্বর্ণের বার আমদানি করে নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। পরে অরোসা গোল্ড করপোরেশন ১৫ হাজার গ্রাম স্বর্ণ আমদানি করে। প্রথম চালান আনার পরপরই ২০ হাজার গ্রাম বা ১ হাজার ৭১৪ ভরি স্বর্ণ আমদানির জন্য ঢাকা ব্যাংকের মাধ্যমে আবেদন করে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড। সেই আবেদনের ২০ দিন পর বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি হওয়া স্বর্ণের মান যাচাইয়ে জাহাজিকরণের আগে ও পরে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা জানতে চায়। ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড সেসবের জবাব দিলেও অনাপত্তি পায়নি। এদিকে গত ৩ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে স্বর্ণ আমদানির ক্ষেত্রে জাহাজিকরণের প্রাক্কালে সরবরাহকারী প্রান্তে ও দেশে আসার পর পণ্যের মান যাচাইয়ে সঠিক পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার বিষয়ে মতামত চেয়ে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
Posted ২:২৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed