সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x
মালয়েশিয়ায় ‘সেকেন্ড হোম’ ও ব্যাংক একাউন্ট

এরশাদপুত্রসহ ২০ জনের অর্থ পাচার অনুসন্ধানে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ১১ মে ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   93 বার পঠিত

এরশাদপুত্রসহ ২০ জনের অর্থ পাচার অনুসন্ধানে দুদক

মালয়েশিয়ায় ‘সেকেন্ড হোম’ গড়ে তোলা এবং ব্যাংক একাউন্ট থকায় ২০ জনের অর্থ পাচারের অনুসন্ধান করছে দুদক। দুদক বলছে, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম কর্মসূচিতে বিনিয়োগকারী অনেক ব্যক্তির নাম দুদকের কাছে রয়েছে। সেগুলো যাচাই করে ওই ২০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। মালয়েশিয়া সরকারের কাছ থেকে অর্থ পাচারের তথ্য পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হবে। এর পাশাপশি দেশে তাদের সম্পদের হিসাবও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত অর্থ পাচারের দালিলিক প্রমাণ না পাওয়া গেলে প্রয়োজনে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হবে।

দুদক সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ায় ১১ বাংলাদেশির অর্থ পাচারের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। তারা দেশটিতে ফ্ল্যাট কিনেছেন। সে দেশে ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে এমন আরও ৯ বাংলাদেশির তথ্যও পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে।

মালয়েশিয়ায় দ্বিতীয় নিবাস গড়ার ‘মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম’ কর্মসূচিতে বাংলাদেশিরা বিনিয়োগ করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আট হাজারের বেশি বাংলাদেশি অর্থ পাচার (মানি লন্ডারিং) করে মালয়েশিয়ায় আবাসন খাতে বিনিয়োগ করেছেন। আরও চার হাজার বাংলাদেশি কর্মসূচিভুক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মালয়েশিয়া থেকে দালিলিক প্রমাণ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। দুদক মালয়েশিয়াগামী বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশির তথ্য যাচাই করেছে। অর্থ পাচারের অনুসন্ধানের পাশাপাশি তাদের সম্পদের হিসাব নিয়েও অনুসন্ধান করা হচ্ছে বলে দুদকের একটি সূত্র জানায়।

সূত্র মতে, মালয়েশিয়ার আবাসন খাতে বিনিয়োগ করা ১১ জন ও ব্যাংক একাউন্ট খোলা ৯ জন বাংলাদেশির অর্থ পাচারের তথ্য-প্রমাণ পুলিশ বিভাগ, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য সংস্থা থেকেও মালয়েশিয়া ভ্রমণকারীদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম কর্মসূচিতে বিনিয়োগকারী অনেক ব্যক্তির নাম দুদকের কাছে রয়েছে। সেগুলো যাচাই করে ওই ২০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। মালয়েশিয়া সরকারের কাছ থেকে অর্থ পাচারের তথ্য পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হবে। এর পাশাপশি দেশে তাদের সম্পদের হিসাবও অনুসন্ধান করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত অর্থ পাচারের দালিলিক প্রমাণ না পাওয়া গেলে প্রয়োজনে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হবে।
অর্থ পাচারকারী চিহ্নিতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দুদককে ওই দেশের সরকারের কাছ থেকে আদালতে আমলযোগ্য দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। ২০ জন দেশটিতে অর্থ পাচার করে আবাসন খাতে বিনিয়োগ করেছেন, ব্যাংকে হিসাব খুলে টাকা জমা করেছেন এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পরই মালয়েশিয়া সরকারের কাছ থেকে ওইসব সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাবের নথিপত্র সংগ্রহ করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। এ লক্ষ্যে দুদক ওই দেশের সরকারের কাছে বাংলাদেশিদের অর্থ পাচার সংক্রান্ত অফিসিয়াল নথিপত্র চেয়ে একাধিকবার মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকুয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠিয়েছে। দুদকের এ চিঠিতে দেশটির সরকার সাড়া দেয়নি।

এবার দুদক পাচার হওয়া অর্থ ও পাচার করা অর্থে অর্জিত সম্পত্তির তথ্য চেয়ে জাতিসংঘের নতুন প্ল্যাটফর্ম গ্লোব-ই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকারের কাছে চিঠি পাঠাবে। দুদক প্রথমে গ্লোব-ই কর্তৃপক্ষের অফিসে চিঠি পাঠাবে। এরপর এ অফিস থেকে মালয়েশিয়ার ফোকাল পয়েন্ট ন্যাশনাল অ্যান্টি-ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম সেন্টার (এনএফসিসি) ও মালয়েশিয়ান অ্যান্টি-করাপশন কমিশনের (এমএসিসি) মধ্যে যে কোনো একটির কাছে দুদকের চিঠি পাঠিয়ে দেবে। গ্লোব-ই নেটওয়ার্কের বাংলাদেশের ফোকাল পয়েন্ট দুদক। গ্লোব-ই থেকে চিঠি পাঠানোর পর দুই দেশের ফোকাল পয়েন্ট আলোচনার মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করবে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি দেশটিতে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের হিসাব সে দেশের সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে। যে ১১ বাংলাদেশির অর্থ পাচার সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে, তাদের মধ্যে আছেন সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান সিরাজ (প্রয়াত), নিজাম উদ্দিন হাজারি এমপি, বরখাস্ত যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের বড় ছেলে ও সাবেক এমপি নাসের রহমান, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছেলে রাহগীর আল মাহী এরশাদ (সাদ), বিলুপ্ত ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের ম্যানেজার হারুন অর রশিদ।

বাকি চারজনের নামে কেনা ফ্ল্যাট মালয়েশিয়ার কোন অঞ্চলে রয়েছে, সে তথ্যও মিলেছে। এর মধ্যে ওরিয়ন গ্রুপের সাবেক কর্মকর্তা মুজিবুর রহমানের নামে মালয়েশিয়ার ক্রাউন প্লাজায় ফ্ল্যাট, সরকারের সাবেক সচিব হারুনুর রশিদের নামে শ্রীহারতামাস এলাকায়, সাবেক এমপি প্রফেসর এম আব্দুল্লাহর নামে আমপাং তেয়ারকুন্ডতে এবং পল্টনের রোকেয়া ম্যানশন ও কারপ্লাস গাড়ির শোরুমের মালিক এবিএম আজিজুল ইসলামের নামে আমপাং অ্যাভিনিউতে ফ্ল্যাট রয়েছে।

দেশটিতে যে ৯ জনের নামে ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে তারা হলেন ঢাকার রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শোরুম কারপ্লাসের মালিক মো. রুমি, চাঁদপুরের শেখ ফরিদ উদ্দিন মানিক, জনৈক আলী আকবর চৌধুরী, সৈয়দ ইলিয়াস সিরাজী, ইসমাইল মো. জামাল, এএইচএম সুলতানুর রেজা, এম আকতারুজ্জামান, মো. শামসুল আলম ও মনিরুল ইসলাম।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থ পাচার নিয়ে গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০২ থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত ১২ বছরে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ১ লাখ ২৮ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা (১ হাজার ৬০৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার) পাচার হয়েছে। বিশ্বের যে ১৫০টি উন্নয়নশীল দেশ থেকে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৭তম। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অবস্থান দ্বিতীয়।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৯:১৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১১ মে ২০২৪

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।