আদম মালেক | বুধবার, ১৮ নভেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট | 376 বার পঠিত
একযুগ আগেই জাহাজ আমদানিকারক দেশ থেকে উৎপাদনকারী দেশের খাতায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। এবার সরকারও যুদ্ধজাহাজ রফতানির স্বপ্ন দেখেন। অথচ করোনায় করুণ জাহাজ রফতানি। গত ৮ মাসে রফতানিশূন্য। উৎপাদনকারীদের মাথায় হাত।
সরকারও এ খাতের রফতানি বাড়াতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। রফতানিকারকদের নগদ সহায়তা, কর ছাড়সহ নানা প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। ব্যাংকগুলোও মোটা অংকের অর্থায়ন করেছে এই খাতে। একটি নীতিমালা তৈরির কাজও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় উচ্ছ্বসিত শেখ হাসিনা। শোনালেন আশার বাণী। বলেছেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ধীরে ধীরে ‘বায়ার নেভি’ থেকে ‘বিল্ডার নেভি’তে পরিণত করা হবে এবং একদিন আমরা যুদ্ধজাহাজ রফতানি করবো ইনশাআল্লাহ।’
অথচ করোনা মহামারী সব তছনছ করে দিয়েছে। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাহাজ রফতানি থেকে বাংলাদেশ এক কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার আয় করেছিল। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে এক কোটি ৮০ লাখ ডলারে উন্নীত করা হয়। কিন্তু অর্থবছরের প্রথম চার মাসে অর্থাৎ জুলাই-অক্টোবর সময়ে এক টাকার জাহাজও রফতানি হয়নি। শুধু তাই নয়, মার্চে মহামারী শুরুর পর আট মাসেও কোনো রফতানি হয়নি।
দেশের সবচেয়ে বড় জাহাজ নির্মাতা ও রফতানিকারক ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, সব শেষ। গত আট মাসে কোনো জাহাজ রফতানি করতে পারিনি আমরা। শুধু আমরা নয়, কেউই কোনো জাহাজ রফতানি করেনি। বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার হাতছানি নিয়ে এসেছিল যে জাহাজ নির্মাণশিল্প, কোভিড-১৯ তা একেবারে তছনছ করে দিয়েছে।
একযুগ আগে ২০০৭ সালে সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ রফতানির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে জাহাজ রফতানি খাতের যাত্রা শুরু হয়েছিল। জার্মানিতে জাহাজ রফতানির ফলে বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন একটা বার্তা যায় যে, দেশটি বিশেষায়িত এই শিল্পে দক্ষতা অর্জন করেছে। এতে দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি হয়। কিন্তু ২০০৮ সালে শুরু হওয়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং ২০১০ সালে ইউরো জোনের মন্দার কারণে সেই সম্ভাবনা কাজে লাগানো যায়নি। কারণ সমুদ্রগামী জাহাজের ৭০ ভাগের মালিকানা ইউরোপের দেশগুলোর। ওই সময়ে ইউরোপের ব্যাংকগুলো জাহাজ কেনায় অর্থায়ন বন্ধ রাখে। জাহাজ ভাড়াও ৭৫ শতাংশ কমে যায়।
রফতানিমুখী জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশের (এইওএসআইবি) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাইফুল বলেন, যে সময় জাহাজ রফতানি ‘টেক অফ’ করবে, সেই সময়ই ওই ধাক্কা আসে। ২০১০ সালের পর থেকে আমরা ‘টুকটাক’ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে আসছিলাম। আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলামও। এ বছরের শুরুতে ভারতের জিন্দাল স্টিল ওয়ার্কস চারটি আট হাজার টনের জাহাজ নিয়েছে।
তিনি বলেন, এই রফতানির মধ্য দিয়ে আমরা প্রমাণ করেছি, বাংলাদেশ শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যই উৎপাদন করে তা নয়, উচ্চ প্রযুক্তির ভারী শিল্পপণ্যও এখানে তৈরি হচ্ছে। জার্মানি, ডেনমার্ক, নিউজিল্যান্ড, কেনিয়া, পাকিস্তান ও ভারতে ইতোমধ্যে জাহাজ রফতানি হয়েছে। এসব জাহাজের মধ্যে পণ্যবাহী জাহাজের পাশাপাশি যাত্রীবাহী, বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী, মাছ ধরার জাহাজ এবং যুদ্ধজাহাজও ছিল।
‘কিন্তু কোভিড-১৯ সব কিছু শেষ করে দিয়েছে’ জানিয়ে সাইফুল বলেন, আমরা যখন জাহাজ তৈরি করি, তখন যে প্রতিষ্ঠানের জাহাজ তৈরি করি সেই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন। এমনকি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকেন। মার্চের পর থেকেই তারা চলে গেছেন। আমাদের সব কাজ বন্ধ।
Posted ২:১২ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৮ নভেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed