নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১১ জুন ২০২০ | প্রিন্ট | 499 বার পঠিত
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর করোনা ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
একইসঙ্গে এবারের বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মানুষকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা এবং এই করোনা মোকাবিলার যুদ্ধেজয়ী হওয়ার প্রত্যয় তিনি ব্যক্ত করেন।
আজ বৃহস্পতিবার (১১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বৃক্ততায় তিনি এ কথা বলেন। বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে এক প্রতিকূল পরিবেশে এবারের বাজেট উপস্থাপন করা হয়।
‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথপরিক্রমা’ শিরোনামে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করা হয়। করোনা ভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে এই বাজেট পেশ করা হয়।
বাজেট পেশে সংসদে এ দিন বৈঠক চলে সবমিলে ৫০ মিনিট। অর্থমন্ত্রীর এবারের বাজেট বক্তৃতা ছিল ১৩০ পৃষ্ঠার। যেটা চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সমানই। কিন্তু অর্থমন্ত্রী ৪৭ মিনিটের মতো বাজেট বক্তব্য দিলেও নিজে পাঠ করেছেন মাত্র পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মতো। আর বাকি সময়টা তিনি ডিজিটাল পদ্ধতিতে উপস্থাপন করেন।
বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা আত্মপ্রত্যয়ী ছিলাম এ বছর আমরা আমাদের অর্থনীতিতে দেশের সেরা প্রবৃদ্ধি জাতিকে উপহার দেব। এক্ষেত্রে আমাদের ইঙ্গিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল শতকরা ৮.২ ভাগ বা ৮.৩ ভাগ। আমরা শুরুও করেছিলাম সুন্দর আশাদীপ্তভাবে অসাধারণ গতিতে। অর্থবছরের প্রথম আট মাস পর্যন্ত যখন পর্যন্ত করোনায় বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হয়নি, আমরা অর্থনীতিতে একটি অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলাম।
‘বিশ্বের প্রখ্যাত সব থিংকট্যাংক ও গণমাধ্যম আমাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বছরের প্রথম আট মাসের হিসেবে আমাদের প্রবৃদ্ধির হিসাব কষেছিল ৭.৮ ভাগ। কিন্তু দুঃখের বিষয় করোনার প্রভাব সারা বিশ্বের অর্থনীতির হিসাব-নিকাশকে সম্পূর্ণ ওলটপালট করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতে, ২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৩.০ শতাংশ সংকুচিত হবে এবং বিশ্ব ব্যাংক দক্ষিণ এশিয়ার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১.৮ থেকে ২.৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মতে, ২০২০ সালে বৈশ্বিক পণ্য বাণিজ্য ১৩ থেকে ২০ শতাংশ হ্রাস পাবে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী ১৯ কোটি ৫০ লাখ কর্মীর পূর্ণকালীন চাকরি হ্রাস পাবে। আঙ্কটাডের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২০ বৈশ্বিক এফডিআই প্রবাহ ৫.২৫ শতাংশ হ্রাস পাবে। এছাড়া লকডাউন ও তেলের মূল্য হ্রাসের কারণে বৈশ্বিক রেমিটেন্স ২০ শতাংশ হ্রাস পাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাপী এই দুর্যোগের সময় প্রধানমন্ত্রী এক লাখ কোটি টাকার বেশি প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছেন। এই প্যাকেজ জিডিপির ৩.৭ শতাংশ এবং তা দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দ্য ইকোনমিস্ট গত ২ মে গবেষণামূলক এক প্রতিবেদনে চারটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে বাংলাদেশ নবম স্থানে। এই হিসেবে এখনও আমরা অন্যদের তুলনায় ভালো অবস্থানে অবস্থান করছি। গত এক দশকের সুশৃঙ্খল মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতি বাস্তবায়নের ফলে আমাদের ঋণের স্থিতি-জিডিপির অনুপাত অত্যন্ত কম (৩৪ শতাংশ) হওয়ায় প্রাদুর্ভাবজনিত কারণে সরকারি ব্যয় বড় আকারে বাড়লেও তা সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।
করোনাযুদ্ধে জয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকবে মানুষকে এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় রচিত এই বাজেটের হাত ধরেই আমরা অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে আগের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক ভিত রচনা করব। যে অমানিশার অন্ধকার আমাদের চারপাশ ঘিরে ধরেছে, তা একদিন কেটে যাবেই।
জাতির পিতার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা শত্রুর মোকাবিলা করে বিজয় অর্জন করেছি। তেমনি একইভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সবাই এক পরিবার হয়ে, একে অপরের সাহায্যে করোনা ভাইরাস মোকাবিলা যুদ্ধেও জয়ী হব, যোগ করেন অর্থমন্ত্রী।
Posted ১১:৫৮ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ জুন ২০২০
bankbimaarthonity.com | saed khan