বিবিএনিউজ.নেট | শনিবার, ০৬ এপ্রিল ২০১৯ | প্রিন্ট | 597 বার পঠিত
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কাটছাঁটের পর চলতি অর্থবছরের বাজেটও ছোট করতে যাচ্ছে সরকার। মূল বাজেট থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত বাজেটের আকার নির্ধারিত হতে যাচ্ছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে পর্যালোচনা শেষে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত বাজেট কাঠামো তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনসাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার মূল বাজেট ঘোষণা করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাজেটে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জন্য নির্ধারিত হয় ২ লাখ ৯৬ হাজার ২১০ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৩৪ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে এনবিআর। এনবিআর-বহির্ভূত কর আদায় পরিস্থিতিও লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশ পিছিয়ে। তবে এডিপি বাস্তবায়নের হার সন্তোষজনক হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে মূল বাজেট থেকে ৫ শতাংশের বেশি কমানো হয়নি। বাজেটের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এনবিআরের রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এডিপি লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সংশোধিত বাজেট প্রণয়নের লক্ষ্যে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে অর্থ মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের অগ্রগতি ও বরাদ্দ চাহিদা পর্যালোচনা করে মূল বাজেট থেকে ২১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশ পিছিয়ে থাকায় সংশোধিত লক্ষ্য পূরণ নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট) হাবিবুর রহমান বলেন, বাজেট সংশোধন একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। প্রতি বছরই তা করা হয়। বিগত অর্থবছরে মূল বাজেট থেকে ৮ শতাংশ কমানো হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার আগের চেয়ে ভালো হওয়ায় বাজেট লক্ষ্যমাত্রা খুব বেশি কমানো হয়নি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য মূল বাজেট থেকে ৫ শতাংশ কমিয়ে ৪ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে আমাদের শঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে, অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ১ লাখ ৫১ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ লাখ ১৬ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণে সক্ষম হয়েছে এনবিআর। অর্থাৎ জুলাই-জানুয়ারি সময়ে লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে সংস্থাটি। এ অবস্থায় ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকার মূল লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৬ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার নতুন লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে। যদিও অর্থবছরের পুরো সময়ে ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আহরণ অসম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে গত কয়েক বছরের তুলনায় যথেষ্ট পিছিয়ে থাকলেও এবার এডিপি বাস্তবায়নের হার অন্যান্য অর্থবছরের তুলনায় ভালো। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৩৯ দশমিক ১৩ শতাংশ, গত অর্থবছরে একই সময়ে যা ছিল ৩৮ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। ফলে এডিপির আকারেও আগের তুলনায় কম কাটছাঁট করেছে সরকার। চলতি অর্থবছরে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকার মূল এডিপি থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মূল এডিপি ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা থেকে কমানো হয়েছিল ৭ হাজার কোটি টাকা। সেবার সংশোধিত এডিপি ছিল ১ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেটে প্রায় ৮ শতাংশ কাটছাঁট করে ৩ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। যদিও অর্থবছর শেষে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করতে পারেনি সরকার।
Posted ১:১১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৬ এপ্রিল ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed