শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

জাতির উদ্দেশ্যে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:   |   সোমবার, ১৩ এপ্রিল ২০২০   |   প্রিন্ট   |   638 বার পঠিত

জাতির উদ্দেশ্যে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

নববর্ষ উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ঘরের বাইরে নববর্ষের সব অনুষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এটা করা হয়েছে বৃহত্তর জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে। কারণ, ইতোমধ্যেই এই ভাইরাস আমাদের দেশেও ভয়াল থাবা বসাতে শুরু করেছে।’

সোমবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বাংলা নববর্ষ ১৪২৭ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাঙালির সার্বজনীন উৎসব বাংলা নববর্ষ। প্রতিটি বাঙালি আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে উদযাপন করে থাকেন এই উৎসব। এ বছর বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে পয়লা বৈশাখের বহিরাঙ্গণের সব অনুষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এটা করা হয়েছে বৃহত্তর জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে। কারণ, ইতোমধ্যেই এই ভাইরাস আমাদের দেশেও ভয়াল থাবা বসাতে শুরু করেছে। বাংলা নতুন বছরে মহান আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা, মহামারির এই প্রলয় দ্রুত থেমে যাক।’

ইতঃপূর্বে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান এবং স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানও জনসমাগম এড়িয়ে রেডিও, টেলিভিশন এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সম্প্রচার করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানও আমরা একইভাবে উদযাপন করবো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ঘরে বসেই এবারের নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করবো। কবিগুরুর কালজয়ী গান ‘‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো/মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা” গেয়ে আহ্বান করবো নতুন বছরকে। অতীতের সকল জঞ্জাল-গ্লানি ধুয়ে-মুছে আমরা সামনে দৃপ্ত-পায়ে এগিয়ে যাবো; গড়বো আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যত।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের যে গভীর আঁধার আমাদের বিশ্বকে গ্রাস করেছে, সে আঁধার ভেদ করে বেরিয়ে আসতে হবে নতুন দিনের সূর্যালোকে। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষায় তাই বলতে চাই: মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়/আড়ালে তার সূর্য হাসে/হারা শশীর হারা হাসি/অন্ধকারেই ফিরে আসে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমগ্র বাংলাদেশে এবং প্রবাসে বাঙালিরা বাংলা নববর্ষ আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করে থাকেন। রাজধানীতে রমনা পার্ক, চারুকলা চত্বর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ নগরীর নানা স্থান মানুষের ভিড়ে মুখরিত থাকে এদিনটি। গ্রামীণ মেলা, হালখাতাসহ নানা অনুষ্ঠানে গোটা দেশ মেতে উঠে।’

‘এবার সবাইকে অনুরোধ করবো কাঁচা আম, জাম, পেয়ারা, তরমুজসহ নানা মৌসুমি ফল সংগ্রহ করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়িতে বসেই নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করুন। আপনারা বিনা কারণে ঘরের বাইরে যাবেন না। অযথা কোথাও ভিড় করবেন না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন, পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করুন।’

করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবায় সামনের কাতারে থাকা চিকিৎসক, নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের দেশবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীগণ সম্পদের সীমাবদ্ধতা এবং মৃত্যু ঝুঁকি উপেক্ষা করে একেবারে সামনের কাতারে থেকে করোনাভাইরাস-আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের পেশাটাই এ রকম চ্যালেঞ্জের। এই ক্রান্তিকালে মনোবল হারাবেন না। গোটা দেশবাসী আপনাদের পাশে রয়েছে। আমি দেশবাসীর পক্ষ থেকে আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।

যেসব সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী প্রত্যক্ষভাবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে কাজ করছেন ইতোমধ্যেই তাদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। তাদের বিশেষ সম্মানী দেওয়া হবে। এজন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। দায়িত্ব পালনকালে যদি কেউ আক্রান্ত হন, তাহলে পদমর্যদা অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য থাকছে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবীমা এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া করোনা প্রতিরোধ যুদ্ধে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবি সদস্যসহ প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্য কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা ও জীবনবীমা বাবদ ৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুরক্ষা সরঞ্জামের কোনো ঘাটতি নেই। নিজেকে সুরক্ষিত রেখে স্বাস্থ্যকর্মীগণ সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাবেন- এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা। একইসঙ্গে সাধারণ রোগীরা যাতে কোনোভাবেই চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সেদিকে নজর রাখার জন্য আমি প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে নিয়োজিত পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা, সরকারি কর্মকর্তা, মিডিয়া কর্মী, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী আনা-নেওয়ার কাজে এবং মৃত ব্যক্তির দাফন ও সৎকারের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মীসহ জরুরি সেবা কাজে যারা নিয়োজিত সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

ত্রাণসামগ্রী ও সহায়তা বিছিন্নভাবে না বিলিয়ে সমন্বিতভাবে বিতরণ করতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অনেক সদাশয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দরিদ্র জনগণের সহায়তায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণে এগিয়ে এসেছেন। তবে, এসব ত্রাণসামগ্রী ও সহায়তা বিচ্ছিন্নভাবে না বিলিয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে শৃঙ্খলার সঙ্গে বিতরণ করা প্রয়োজন। তা না হলে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যাবে। আমি বিত্তবানদের এই সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

এ সময় মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে সাহস ও ধৈর্যের সঙ্গে করোনা কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভয় পাবেন না। ভয় মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে। আমাদের সকলকে সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। সরকার সব সময় আপনার পাশে আছে।’

এছাড়া গুজবে বিভ্রান্ত না হতে পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ আতঙ্ক ছড়াবেন না। কিছু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এ সঙ্কটকালে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না।’ গুজব প্রতিরোধে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সঠিক তথ্য তুলে ধরে এই মহামারি মোকাবিলা করতে সরকারকে সহায়তা করতে মিডিয়া কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

সংকট একসময় কেটে যাবে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে আঁধার আমাদের চারপাশকে ঘিরে ধরেছে, তা একদিন কেটে যাবেই। বৈশাখের রুদ্র রূপ আমাদের সাহসী হতে উদ্বুদ্ধ করে। মাতিয়ে তোলে ধ্বংসের মধ্য থেকে নতুন সৃষ্টির নেশায়।’

করোনা ভাইরাস মহামারির এই দুঃসময়ে কৃষি উৎপাদন আরও বাড়ানোর তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই দুঃসময়ে আমাদের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা শুধু সচল রাখা নয়, আরও জোরদার করতে হবে। সামনের দিনগুলোতে যাতে কোনোপ্রকার খাদ্য সঙ্কট না হয়, সেজন্য আমাদের একখণ্ড জমিও ফেলে রাখা চলবে না। এজন্য কৃষি-সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বীজ, সার, কীটনাশকসহ সকল ধরনের কৃষি উপকরণের ঘাটতি যাতে না হয় এবং সময়মত কৃষকের হাতে পৌঁছে- সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।’

গত বারের চেয়ে সরকার এবার বেশি ধান ক্রয় করবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষকেরা যাতে উৎপাদিত বোরো ধানের ন্যায্যমূল্য পান সে জন্য চলতি মওসুমে গত বছরের চেয়ে ২ লাখ মেট্রিক টন অতিরিক্ত ধান ক্রয় করা হবে। এজন্য অতিরিক্ত ৮৬০ কোটি টাকা ব্যয় হবে।’ আবার কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

কৃষকদের জন্য ঘোষিত ৫ হাজার কোটি টাকার মূলধনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষি খাতে চলতি মূলধন সরবরাহের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হচ্ছে। এ তহবিল থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিদের কৃষি, মৎস্য, ডেইরি এবং পোল্ট্রি খাতে ৪ শতাংশ সুদহারে ঋণ প্রদান করা হবে।’

কৃষি ভর্তুকি বাবদ ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা।

সবাইকে আশ্বস্ত করে সরকার প্রধান বলেন, ‘করোনা ভাইরাস মহামারি থেকে আমাদের বাঁচতে হবে। আমরা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। যখন যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা নেওয়া হচ্ছে। এ মুহূর্তে আমাদের কোনো খাদ্য সঙ্কট নেই। সরকারি গুদামে যেমন পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার মজুত রয়েছে, তেমনি রয়েছে গৃহস্থদের ঘরে ঘরে।’

‘আল্লাহর রহমতে গত মৌসুমে আমাদের রোপা আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি মওসুমে বোরো ধানেরও ভালো ফলন হওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। খাদ্য ও কৃষি পণ্য সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থা অটুট রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্টি সঙ্কটময় পরিস্থিতির পর থেকে কয়েকটি ধাপে শিল্প ও কৃষি খাতে বেশ কয়েকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পাশাপাশি বিভিন্ন সেক্টরে সরকারের ভর্তুকি ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।

নববর্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিশ্ব ব্যবস্থার বাইরে নই। বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা আমাদের অর্থনীতির জন্য দুঃচিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘জানিনে, এই সঙ্কট কতদিন থাকবে এবং তা আমাদের অর্থনীতিকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তবুও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা ইতোমধ্যে ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। যা জিডিপি’র ৩.৩ শতাংশ। ’

করোনা ভাইসের কারণে গোটা বিশ্ব আজ অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা যে আভাস দিয়েছে তা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘এই রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে কোয়ারেন্টিন বা সঙ্গনিরোধ। অর্থাৎ নিজেকে ঘরবন্দি করে রাখা। বিশ্বের ২৫০ কোটিরও বেশি মানুষ আজ ঘরবন্দি। কোথাও লকডাউন, কোথাও গণছুটি আবার কোথাও কারফিউ জারি করে মানুষকে ঘরবন্দি করা হয়েছে।’

‘বাংলাদেশেও গত ২৫-এ মার্চ থেকে ২৫-এ এপ্রিল পর্যন্ত একটানা ৩২ দিন সাধারণ ছুটি বলবৎ হয়েছে। জরুরি সেবা কার্যক্রম ছাড়া সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ দেশের সিংহভাগ শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ছোট-খাটো কারখানা বন্ধ। গণপরিবহন ও বিমান চলাচল স্থগিত।’

ইতোমধ্যে দেশের আমদানি-রপ্তানির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এবং প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে বেশিরভাগ দেশে প্রবাসী ভাই-বোনেরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় দেশের রেমিটেন্স প্রবাহে স্থবিরতা নেমে আসার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

করোনা ভাইরাসের কারণে অর্থনীতির উপর সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব উত্তরণে চারটি মূল কার্যক্রম নির্ধারণ করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবিলম্বে অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের অবশিষ্ট তিন মাসে, স্বল্প-মেয়াদে -আগামী অর্থবছরে এবং মধ্য-মেয়াদে – পরবর্তী তিন অর্থবছরে – এই তিন পর্যায়ে কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে উল্লেখিত চারটি কার্যক্রম হচ্ছে:
(১) সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা: সরকরি ব্যয়ের ক্ষেত্রে ‘কর্মসৃজনকেই’ প্রাধান্য দেওয়া হবে।

(২) আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ প্রণয়ন: অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখাই হলো আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্য।

(৩) সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি: দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা হবে।

বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমসমূহ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি করোনা ভাইরাসজনিত কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির সুরক্ষায় যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে:

(ক) স্বল্প-আয়ের মানুষদের বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করার জন্য ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল এবং ১ লাখ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মোট মূল্য ২ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা।

(খ) শহরাঞ্চলে বসবাসরত নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ওএমএস-এর আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাউল বিক্রয় কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। আগামী তিন মাসে ৭৪ হাজার মেট্রিক টন চাল এই কার্যক্রমের আওতায় বিতরণ করা হবে। এ জন্য ২৫১ কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করতে হবে।

(গ) দিনমজুর, রিকশা বা ভ্যান চালক, মটর শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, পত্রিকার হকার, হোটেল শ্রমিকসহ অন্যান্য পেশার মানুষ যারা দীর্ঘ ছুটি বা আংশিক লকডাউনের ফলে কাজ হারিয়েছেন তাদের নামের তালিকা ব্যাংক হিসাবসহ দ্রুত তৈরির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই তালিকা প্রণয়ন সম্পন্ন হলে এককালীন নগদ অর্থ সরাসরি তাদের ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হবে। এ খাতে ৭৬০ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে।

(ঘ) সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতায় পরিচালিত ‘বয়স্ক ভাতা’ ও ‘বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের জন্য ভাতা’ কর্মসূচির আওতা সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় শতভাগে উন্নীত করা হবে। বাজেটে এর জন্য বরাদ্দের পরিমাণ ৮১৫ কোটি টাকা।

(ঙ) জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত অন্যতম কার্যক্রম গৃহহীন মানুষদের জন্য গৃহ নির্মাণ কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। এ বাবদ সর্বমোট ২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। কেউ গৃহহীন থাকবেন না।

(৪) মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা: অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ এমনভাবে বৃদ্ধি করা যেন মুদ্রাস্ফীতি না ঘটে।

আর্থিক সহায়তার প্যাকেজের আওতায় শিল্পখাতে যেসব আর্থিক প্যাকেজ গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানসমূহের ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা, অতি-ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা, এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) এর সুবিধা বাড়ানোর জন্য ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিমের আওতায় ৫ হাজার কোটি টাকা এবং রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য বিশেষ তহবিল বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১১:১৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৩ এপ্রিল ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11388 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।