মো. নূর-উল-আলম এসিএস | সোমবার, ১২ অক্টোবর ২০২০ | প্রিন্ট | 1620 বার পঠিত
সারা বিশ্বে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি সমূহে হিসাব সংরক্ষণ এবং জনগনের সামনে তা প্রকাশ করার বিষয়ে চূড়ান্ত হিসাব বা আর্থিক বিবরণী একটি প্রতিষ্ঠিত ধারণা। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়, এখানেও এটি একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়। আর্থিক বিবরণীর পাঁচটি অংশ রয়েছে। চারটি বিবরণী এবং অন্যটি নোটস বা টীকা সমূহ। আমাদের দেশে সব পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি আর্থিক বিবরণীর পাঁচটি অংশই তৈরী করে এবং জনগনের সামনে তা প্রকাশ করে। অথচ বাংলাদেশে জীবন বীমা কোম্পানিগুলো খন্ডিতভাবে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করে। অর্থাৎ যথাযথভাবে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করে না, লাভ-লোকসান হিসাব তৈরী করে না। এ প্রবন্ধে বীমা আইন ১৯৩৮ এবং বীমা আইন ২০১০, আইএফআরএস-৪ (বীমা চুক্তিসমূহ), আইডিআরএ সার্কুলার, আমাদের প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর লাভ-লোকসান হিসাব প্রস্তুতি বিষয়ক ভাবনা, বাস্তবতা এবং এ বিষয়ে সম্ভাব্য সংস্কার তুলে ধরা হয়েছে।
স্থিতিপত্র তথা ব্যালেন্স শীট বা স্টেটমেন্ট অব ফাইন্যান্সিয়াল পজিশন, ইনকাম স্টেটমেন্ট তথা আয় বিবরণী বা লাভ-লোকসান হিসাব এবং স্টেটমেন্ট অব চেঞ্জেস অব ওনার্স ইকুইটি তথা সাধারণ শেয়ারে পরিবর্তনের বিবরণী হলো একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির আর্থিক বিবরণীর তিনটি অবিচ্ছদ্য অংশ। এছাড়া ক্যাশ ফ্লো স্টেটমেন্ট বা নগদ বিচলন বিবরণী এবং ব্যালেন্স শীট বা স্টেটমেন্ট অব ফাইনান্সিয়াল পজিশনের টীকাগুলোও আর্থিক বিবরণীর অংশ হিসেবে হিসাব বিজ্ঞানীদের নিকট সমাদৃত।
অতএব অতীতে চূড়ান্ত হিসাব হালে আর্থিক বিবরণী যে নামেই ডাকা হোক না কেন লাভ-লোকসান হিসাব তার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে সবাই জানেন এবং তা মানেন। এটা হিসাব রক্ষণের এতটাই মৌলিক বিষয় যে এ বিষয়টিতে কারোই দ্বিমত থাকার কথা নয়। একটি হিসাব বছরে অর্জিত সকল আয়-ব্যয়ের পার্থক্য থেকে উক্ত বছরের নীট মুনাফা বের করা হয়। যার উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে বন্টনযোগ্য মুনাফা বের করা হয়।
কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে জন্মলগ্ন থেকে অদ্যাবধি প্রায় দু’শ বছর ধরে এদেশের জীবন বীমা কোম্পানিগুলো কোন বার্ষিক লাভ-লোকসান হিসাব প্রস্তুত করছে না। ফলে জীবন বীমা কোম্পানিগুলো সঠিকভাবে তাদের বার্ষিক আয়-ব্যয় নির্ণয় করতে পারছে না। এতে একদিকে সরকার যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে সঠিক মুনাফা বের না হওয়ায় ‘বিনিয়োগকারী’রাও বঞ্চিত হচ্ছে তাদের প্রাপ্য ডিভিডেন্ড থেকে। উপরন্ত সব বীমা গ্রাহকরাও বঞ্চিত হচ্ছে তাদের প্রাপ্য মুনাফা থেকে। সকলেই জানেন বিনিয়োগকারীরা লাভ-লোকসান হিসাবের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করে তাদের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেন। ফলে সঠিক লাভ-লোকসান হিসাব প্রস্তুতির অভাবে তাদের অধিকার ব্যাপকভাবে খর্ব হচ্ছে।
কোম্পানি আইন ১৯৯৪, বীমা আইন ২০১০ এবং সিকিরিটিজ এক্সচেঞ্জ রুল ১৯৮৭ এ পরিষ্কারভাবে সব পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য লাভ-লোকসান হিসাব প্রস্তুতের নির্দেশনা রয়েছে। তাছাড়া, আর্থিক বিবরণী বিষয়ে বিশ্বজনিন নিয়ম কানুনগুলোও বেশ সুস্পষ্ট। আন্তর্জাতিক আর্থিক বিবরণী প্রকাশন মান-৪ (IFRS-4) জীবন বীমা এবং সাধারণ বীমাসহ সকল প্রকার পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিগুলোর আয় বিবরণী প্রস্তুতি বিষয়ে সুস্পষ্ট মান বজায় রাখতে বলা হয়েছে। শ্রীলংকা, পাকিস্তান, ভারত এবং নেপালসহ আমাদের সকল প্রতিবেশী দেশের জীবন বীমা কোম্পানিগুলো লাভ-লোকসান হিসাব প্রস্তুত করে। পিছিয়ে নেই বীমা জগতে নবীনতম দেশ মায়ানমারও। অথচ আমাদের দেশ রয়েছে সেই তিমিরেই।
স্বীকার করতে হবে যে বীমা কোম্পানির আর্থিক বিবরণী অন্যান্য পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির চাইতে কিছুটা ভিন্ন। সব চেয়ে বড় ভিন্নতা হলো এক্ষেত্রে রাজস্ব হিসাব বা রেভেনিউ একাউন্ট নামে বাড়তি একটি হিসাব বিবরণী প্রস্তুত করতে হয়। দেশের সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর আর্থিক বিবরণী পর্যালোচনা করলে আমরা দেখব যে স্থিতিপত্র ছাড়াও তারা যে সকল হিসাব প্রস্তুত করে তা হলো: ক) লাভ-লোকসান হিসাব খ) মিলিত রাজস্ব হিসাব এবং প্রোডাক্ট অনুযায়ী আলাদা আলাদ রাজস্ব হিসাব গ) নগদ বিচলন বিবরণী ঘ) সাধারণ শেয়ারে পরিবর্তনের বিবরণী ঙ)টীকা সমূহ। অর্থাৎ দেশের সাধারন বীমা কোম্পানির আর্থিক বিবরণীর অংশ ছয়টি। কিন্ত জীবন বিমা কোম্পানিগুলো লাভ-লোকসান হিসাব প্রস্তুত করে না।
হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে যারা অতটা পরিপক্ক না তাদের মনে হয়তো ইতোমধ্যেই প্রশ্ন উদয় হতে শুরু করেছে যে তাহলে আমাদের দেশে জীবন বীমা কোম্পানিগুলো যা প্রস্তুত করে তা আসলে কী। মুলত আমাদের জীবন বীমা কোম্পানিগুলো রেভেনিউ একাউন্টের মাধ্যমে একটি দীর্ঘ মেয়াদি সলভেন্সি সারপ্লাস নির্নয় করে থাকে। এ সারপ্লাস নির্ণয় করা হয় লাইফ ফান্ড থেকে অনুমান নির্ভর বীমা দায় বাদ দিয়ে। অর্থাৎ বছর শেষে পুঞ্জিভূত লাইফ ফান্ড থেকে সারা বছরের অনুমানিক বীমা দায় বিয়োগ করে সারপ্লাস নির্ণয় করে তা রেভেনিউ একাউন্টে দেখানো হচ্ছে। কোন প্রকার লাভ বা লোকসান হিসাব প্রস্তুত করছে না। এত বড় অনিয়মের মূলে রয়েছে বৃটিশ ভারতের বিমা আইন ১৯৩৮ এর ধারা ১৩ যা বাংলাদেশে প্রণিত বীমা আইন ২০১০ এর ধারা ৩০এ হুবহু প্রতিস্থাপিত হয়েছে ।অথচ এ সারপ্লাস কখনোই বাৎসরিক পারফরমেন্স বা লাভ নয়। বরং উক্ত সারপ্লাস হলো একচ্যুয়ারী প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নির্ণিত অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সম্ভ্ব্যা অর্জনের একত্রিত একটি রূপ যা কোন কোম্পানির দীর্ঘ মেয়াদী আর্থিক স্বচ্ছলতা বিষয়ক একটি তথ্য মাত্র। লাভ কখনোই অনুমান নির্ভর হতে পারে না। এজন্যই চলতি বছরে সংঘঠিত পারফরমেন্স হলো বিশ্বজুড়ে জীবন বীমা কোম্পানি গুলোর আয় নির্ণয়ের ভিত্তি। ফলে সেটিই কর্পোরেট টেক্স নির্নয়েরও ভিত্তি হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত ধারণা । সারপ্লাসকে লাভ হিসেবে দেখানো তাই বাতিল ধারণা ছাড়া কিছুই নয়।
উপরন্ত বিমা আইন ২০১০ এর ধারা ২৭ এ সুস্পষ্টভাবে সকল বীমা কোম্পানিকে লাভ-লোকসান হিসাব প্রস্তুতের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলো বিষয়টি মেনে চললেও মানছে না জীবন বীমা কোম্পানিগুলো। এ বিষয়ে আরো জানতে প্রতিবেশী দেশসমূহের জীবন বীমা কোম্পানি সমূহের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসন্ধানে লাভ-লোকসান হিসাবের পাশাপাশি রাজস্ব হিসাব তৈরী করার প্রমান পাওয়া যায়। এইচ.এন.এস ইন্স্যুরেন্সসহ শ্রীলংকার বিমা কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায় তারা আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের সকল আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখছে। অর্থাৎ লাভ-লোকসান হিসাব প্রস্তুত করছে। অধিকন্তু কোম্পানিগুলো বার্ষিক প্রতিবেদনে একচ্যুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন বিষয়ক একচ্যুয়ারি কর্তৃক স্বাক্ষরিত সার্টিফিকেশন প্রদর্শিত হয়েছে। রয়েছে ক্লেইম রিজার্ভ বিষয়ক পৃথক একচ্যুয়ারি কর্তৃক স্বাক্ষরিত সার্টিফিকেশন। অথচ বাংলাদেশে একচ্যুয়ারিরা সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের উদ্দেশ্যে এধরণের কোন প্রত্যয়ণ পত্র প্রদান করছেন না। এতে ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে সাধারণ শেয়ার মালিক, গ্রাহক এবং অপরাপর অংশীজনদের স্বার্থ।
তাছাড়া সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে যথাযথ রাজস্ব থেকে। আমাদের জীবন বীমা কোম্পানিগুলো দাবী করে ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স ১৯৮৪ এর চতুর্থ শিডিউলে বর্নিত সারপ্লাসের (যা কোনভাবেই প্রফিট নয়) ভিত্তিতে তারা মুনাফা নির্নয় করে এবং তদনুযায়ী ট্যাক্স প্রদান করে। বিষয়টি আসলে তা নয় । বরং তা হলো তারা যা বলে তা পরিষ্কারভাবে ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স ১৯৮৪ এর অর্থকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার। আসুন দেখি ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স ১৯৮৪ এ বিষয়ে আসলে কী বলেছে। ইনকাম ট্যাক্স অর্ডিন্যান্স ১৯৮৪ শুধু বলেছে জীবন বীমা কোম্পানির সারপ্লাস নির্নয় করতে হবে বীমা আইন-২০১০ এ বর্নিত একচ্যুয়ারিয়াল ভেল্যুয়েশনের ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে উল্ল্যেখ্য যে একচ্যুয়ারিয়াল ভেল্যুয়েশনের ভিত্তিতে নির্নিত বীমা দায় আমাদের আলোচ্য লাভ-লোকসান হিসাবেরও অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ। অধিকন্তু সারা বিশ্বের সব দেশে একচ্যুয়ারিয়াল ভেল্যুয়েশনের ভিত্তিতে নির্নিত উক্ত বীমা দায়কে লাভ-লোকসান হিসাবে দেখানো হয়। এর ব্যতিক্রম নয় আমাদের প্রতিবেশী দেশ দেশগুলেতেও।
তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে আমাদের দেশে জীবন বিমা কোম্পানি গুলো কেন লাভ-লোকসান হিসাব করছে না, কেন তারা শুধু মাত্র রেভেনিউ হিসাব করে তাদের দায় সারছে? এর মূলে রয়েছে ২০১২ সালের ১১ই জুনে ইস্যুকৃত আইডিআরএ সার্কুলার লাইফ-৪/২০১২: হিসাব এবং আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতি বিষয়ক নির্দেশনা যেখানে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর জন্য কোন লাভ-লোকসান হিসাব প্রস্তুতির বিধান রাখা হয়নি। এ বিষয়ে উক্ত সার্কুলারে প্রদত্ত বীমা আইন ২০১০ এর ১৬০ ধারার যে উদ্ধৃতি দিয়েছে তা বিশ্লেষণের দাবী রাখে। উক্ত সার্কুলারে বীমা আইনের ১৬০(২)ধারার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে যেহেতু অদ্যাবধি বীমা আইন ২০১০ এর কোন রুলস বা বিধিমালা জারী হয়নি তাই নতুন আইনের ব্যাখ্যায় ১৯৩৮ সালের বীমা আইনের বিধিসমূহ (বীমা বিধিমালা ১৯৫৮) বহাল থাকবে। দু’টি আলাদা আইন যেটি একটি অন্যটিকে রিফিল করেছে সেক্ষেত্রে প্রতিস্থাপিত আইনের সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা কি কখনও বাতিলকৃত আইনের রুল দিয়ে দেয়া সম্ভব? বিষয়টি আইন বিশেষজ্ঞদের আলোচনার ভালো একটি বিষয় হতে পারে। আইনের ছাত্র হিসেবে আমার মনে হয় বিষয়টি এরূপ হবার কথা, যে সকল বিষয়ে বীমা আইন ২০১০ বীমা আইন ১৯৩৮ এর অনুরূপ, সেসব ক্ষেত্রে আইনের ব্যাখায় বীমা বিধিমালা ১৯৫৮ প্রযোজ্য হবে।
এক্ষেত্রে আপনাদেরকে আরো মনে করিয়ে দিতে চাই যে বাংলাদেশে প্রণীত জাতীয় বীমা নীতিতে বলা হয়েছে,আমাদের বীমা নীতি হবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের বীমা নীতি সমূহের অনুরূপ। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকা বীমা সংক্রান্ত তাদের মূল বিধি-বিধান সমূহ পেয়েছে বৃটেন থেকে। এসকল দেশের জীবন বীমা কোম্পানি সমূহ লাভ-ক্ষতি হিসাব প্রস্তুত করছে। একমাত্র ব্যতিক্রম বাংলাদেশ।
আগেই বলেছি সারপ্লাস কোন ভাবেই লাভ নয় বরং লাভ নির্ণয়ের অনুঘটক মাত্র। আশ্চর্যজনভাবে বাংলাদেশের জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর প্রদর্শিত লাভের হার বিশ্ব গড়ের অর্ধেক। ফলে আমাদের জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর করের হার বিশ্ব গড়ের প্রায় দ্বিগুন হওয়া সত্ত্বেও কোম্পানি গুলোর প্রদর্শিত স্বল্প রাজস্বের বিপরীতে কোম্পানিগুলোর প্রদত্ত করের পরিমান বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। এতে একদিকে সরকার যেমন বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে সঠিক মুনাফা বের না হওয়ায় বিনিয়োগকারীরাও বঞ্চিত হচ্ছে প্রাপ্য ডিভিডেন্ড থেকে। উপরন্তু সকল বীমা গ্রাহকরাও বঞ্চিত হচ্ছে প্রাপ্য মুনাফা থেকে।
লেখক : মো. নূর-উল-আলম এসিএস-এলএলবি
সহযোগী সদস্য, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি)
মোবাইল : ০১৬১০-১২৩২২৩
ইমেইল : csnoor.bd@gmail.com
ব্যক্তিগত তথ্য বাতায়ন : www.csnoor.com
Posted ৭:৫৯ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১২ অক্টোবর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed