নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট | 162 বার পঠিত
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) টার্নওভার গত ২০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। এর কারণ বাজার তারল্য সংকটে ভুগছে। ফ্লোর প্রাইস, আস্থার অভাব, মুদ্রাস্ফীতি এবং আর্থিক খাতে তারল্য সংকটকে বাজার সংশ্লিষ্টরা দায়ী করছেন।
মঙ্গলবার দেশের প্রিমিয়ার শেয়ারে টার্নওভার ২৭১ কোটিতে নেমে এসেছে। এর আগে, ৫ এপ্রিল ২০২১-এ সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছিল ২৩৫ কোটি টাকা।
ডিএসইএক্স-ডিএসইর বোর্ড সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৬ পয়েন্ট বেড়ে ৬,২২৯-এ দাঁড়িয়েছে।
আর লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৫০টি শেয়ারের দাম বেড়েছে, ২৫টি কমেছে এবং ২২৮টি একই অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও গ্লোবাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিচার্ড ডি’ রোজারিও বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক আরোপিত ফ্লোর প্রাইসের কারণে শেয়ারবাজারে নতুন বিনিয়োগ আসছে না।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে শেয়ারবাজারে ব্যাপক পতন ঘটেছে। এই পতন ঠেকাতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২৯ জুলাই ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে। এতে কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসের নিচে নামতে পারবে না।
ফ্লোর প্রাইস উঠলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের মূলধন হারাবেন বলে মনে করছে বিএসইসি। বিশেষ করে যারা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অর্থনীতির অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হলে, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বাজার পতন হতে পারে। তবে তা আবার ঘুরে দাঁড়াবে। কৃত্রিমভাবে শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। যা সমাধান নয়।’
একটি ব্রোকারেজ হাউজের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, আর্থিক খাতে তারল্য সংকটের কারণে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলে নতু ঋণ দেয়ার পরিবর্তে ব্যাংকগুলি এখন ক্রেডিট লিমিটের অধীনে নেওয়া ঋণ পরিশোধের জন্য নোটিশ জারি করেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় থাকতে পারছেন না।
ইতিমধ্যে, ব্যাংকে তারল্য সংকট নিয়ে সাম্প্রতিক “গুজব” এর পরে আতঙ্কিত গ্রাহকরা কোটি কোটি টাকা তুলে নিয়েছে।
সাম্প্রতিক এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘ব্যাঙ্কে টাকা নেই বলার পর সত্যিকারের প্রভাব পড়েছে। মানুষ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত তারল্য ছিল ২.০৩ লাখ কোটি টাকা কিন্তু অক্টোবরে তা কমে দাঁড়ায় ১.৬৯ লাখ কোটি টাকায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা ‘মুদ্রাস্ফীতির চাপের মধ্যে আমানতের বৃদ্ধি সেই সময়ে ঋণের তুলনায় অনেক ধীর ছিল, যার ফলে তারল্য হ্রাস পেয়েছে।’
ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ডলার ক্রয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত রিজার্ভ থেকে সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ৫ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি হয়েছে। সে অনুযায়ী ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে গেছে।
তবে রিচার্ড ডি’ রোজারিও বলেন, ‘প্রতি বছরই স্টক মার্কেট থেকে টাকা তোলার জন্য ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর চাপ থাকে। ফলে চলমান দরপতনের প্রভাব তা বলার সুযোগ নেই। শেয়ারবাজারে আর্থিক খাতে তারল্য সংকট। কিন্তু ২০২২ সালে, ডিএসইএক্স ৬০০ পয়েন্ট হারিয়েছে এবং সারা বছর ধরে দৈনিক টার্নওভার কম ছিল।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সায়েদুর রহমান বলেন, ‘তারল্য সংকট শেয়ারবাজারে প্রভাব ফেলেছে কিনা তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। কারণ বাজার ভালো থাকলে মানুষ ঋণ নিয়েও বিনিয়োগ করে। আর যখন মন্দা থাকে তখন শেয়ার বিক্রি করে চলে যান। দূরে।’
২০২১ সালে, ডিএসই’র সূচক ২০% বা ১,১৩৮ পয়েন্ট বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ওই বছর ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে ৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে যা আগের বছরের তুলনায় ৫৮ শতাংশ বেশি। এবং ২০২১ সালে, ডিএসই’র দৈনিক টার্নওভার প্রায় ২,৫০০ কোটি টাকা ছুঁয়েছে।
এ অবস্থায় শেয়ার মার্কেটে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারিদের সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নীতিগত সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন যেসব সহায়তা চেয়েছে এর মধ্যে রয়েছে স্টক মার্কেটে বিনিয়োগের জন্য ব্যাঙ্কের নিজস্ব সহায়ক সংস্থাগুলিকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে একক ঋণগ্রহীতার এক্সপোজার সীমা শিথিল করা, ঋণের বিপরীতে বিধান ২% থেকে কমিয়ে ১% করা এবং একত্রিত পুঁজিবাজার এক্সপোজার রিপোর্টিং স্থগিত করা।
Posted ৬:০৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy