| সোমবার, ১২ জুলাই ২০২১ | প্রিন্ট | 385 বার পঠিত
গতকাল পালিত হয়েছে বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার ড. এম জহিরের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী। দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ৭৪ বছর বয়সে ২০১৩ সালের ১১ জুলাই তিনি ইন্তেকাল করেন। রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তাঁর পিতার পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। তার পিতা মুহাম্মদ আসির ছিলেন ঢাকা হাইকোর্টের বিচারপতি।
ব্যারিস্টার ড. এম জহির ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বি.এ ও এম.এ সম্পন্ন করার পর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.এম ও কোম্পানিস আইনে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি লন্ডনের লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টার হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ২০ বছর শিক্ষকতা করেন। দেশ-বিদেশে স্বনামধন্য অসংখ্য গুণগ্রাহী ও ছাত্রছাত্রী রয়েছে তার।
কোম্পানি ও সিকিউরিটিজ আইনের ওপর লেখা তাঁর একটি বই দেশ-বিদেশে বহুল পঠিত ও সমাদৃত। ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ছিল তার অগাধ পাণ্ডিত্য। তিনি ছিলেন আদর্শ শিক্ষক, দূরদর্শী রাজনৈতিক বক্তা ও সমালোচক, একাধারে নিবিড় সংগীত অনুরাগী এবং দক্ষ ক্রীড়াবিদ ও আবৃত্তিকার।
ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে তিনি যখন শেক্সপিয়ার কিংবা টিএস ইলিয়ট থেকে আবৃত্তি করতেন তখন অডিয়েন্সে থাকতো পিনপতন নীরবতা এবং মুগ্ধ শ্রোতাদের দৃষ্টি থাকতো তার ওপর। তার সারল্যমিশ্রিত হাসি আর মিষ্টি ভাষার জাদু সবাইকে মুগ্ধ করতো। তিনি বিশ্বাস করতেন, টেনিস না খেললে সুস্থ থাকা যায় না। ৩০ বছর তিনি তার ভাই সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মোহাম্মদ জমিরের টেনিস খেলার পার্টনার ছিলেন। সংগীতের প্রতি তার ছিল গভীর অনুরাগ। তিনি আত্মার শান্তির জন্য গান-বাজনা ভালোবাসতেন। কলকাতা আদি নিবাস হওয়ার সুবাদে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সাথেও ছিল জানা-শোনা।
আদালত কক্ষে ও একইভাবে মুগ্ধ হতেন বিচারক এবং প্রতিপক্ষ আইনজীবী। অভিনব ও আকর্ষণীয় উপস্থাপনার কারণেই সমাদৃত হয়েছেন তিনি। তার মতো সহজ-সরল চিন্তা-চেতনার মানুষ আজকাল খুঁজে পাওয়া ভার। তিনি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। কিন্তু রাজনীতি বিষয়ে তার জ্ঞানের পরিধির কাছে প্রশ্ন তোলার মানুষও ছিলেন না কেউ। এ কারণেই তিনি দেশের যে কোনো সংকটে নিরপেক্ষভাবে মতামত দিতে পারতেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তিনি ছিলেন বরাবরই সোচ্চার। কোম্পানি আইনের ওপর পিএইচডি করেও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ছিলেন তিনি।
অসাধারণ প্রতিভাবান আইনজীবী, অগাধ প্রজ্ঞা ও পাণ্ডিত্যের অধিকারী ক্ষণজন্মা মানুষটির এ চলে যাওয়া ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পরিবারকে যে শূন্যতায় ফেলে দিয়েছে, তা কোনোদিনই পূরণ হওয়ার নয়। সদাহাস্যোজ্জ্বল, সদালাপী, বিনয়ী, অমায়িক, নিরহঙ্কার, প্রাণচঞ্চল মানুষটি ছিলেন ব্যাংক বীমা অর্থনীতি পত্রিকার উপদেষ্টা। তিনি উপদেষ্টা পদে নামটা লেখাতে দিতে চাননি, চেয়েছিলেন নেপথ্যে থেকে কাজ করে যেতে। এ পত্রিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। তার পরামর্শ, নির্দেশনা এবং আদর্শ নিয়ে কাজ করে ব্যাংক বীমা অর্থনীতি আজকের স্তরে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে।
পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ মুনীরুজ্জামানের সাথে তার পিতৃতুল্য সম্পর্ক ছিল। বটবৃক্ষের মতোই তিনি ছায়া দিয়ে রেখেছিলেন। আক্ষরিক অর্থে তিনি ছিলেন সম্পাদকের অভিভাবক।
Posted ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১২ জুলাই ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy