আব্দুল্লাহ ইবনে মাস্উদ | বৃহস্পতিবার, ০১ আগস্ট ২০১৯ | প্রিন্ট | 620 বার পঠিত
সারা দেশে মহামারী আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। এ পরিস্থিতিতে সরকার স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঈদের ছুটি বাতিল করেছে। তবে এরই মধ্যে সপরিবারে মালয়েশিয়া সফরে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ নিয়ে সর্বত্র সমালোচনার ঝড় বইয়ে গেছে। গতকাল ৩১ জুলাই ‘‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন,স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বাবার নামে কর্নেল মালেক সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষায় অর্থ নেয়ার অভিযোগ’’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল ‘ব্যাংক বীমা অর্থনীতি’র অনলাইনে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র সমালোচনার মধ্যে সফর সংক্ষিপ্ত করে গত রাতেই দেশে ফিরেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, মন্ত্রী গত রাতে দেশে ফিরেছেন। আজ দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ ব্রিফিং করবেন। সর্বশেষ ডেঙ্গু পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ জানাতেই মন্ত্রীর এই সংবাদ ব্রিফিং।
প্রসঙ্গত, ডেঙ্গুর কারণে রাষ্ট্রীয় দুযোর্গে ব্যক্তিগত ভ্রমণে মালয়েশিয়ায় যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে ৪ আগস্ট দেশে ফেরার কথা ছিল। গত কয়েকদিন এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে। এ কারণে বুধবার রাতেই দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন মন্ত্রী।
মন্ত্রীর এ সফর নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে খবর রয়েছে, সে প্রসঙ্গে বুধবার কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, কে দেশে কে বিদেশে তা বিষয় নয়, ডেঙ্গু মোকাবেলায় কাজ হচ্ছে কিনা সেটিই মুখ্য বিষয়। এ সময় রাষ্ট্রীয় এই দুর্যোগে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মালয়েশিয়া সফর নিয়ে কাদের বলেন, কারও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।
তবে তিনি দেশে ফিরলেও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন- হঠাৎ করে তার এই মালয়েশিয়া সফর কেন? দেশজুড়ে যখন ডেঙ্গু পরিস্থিতির ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে, রোজ নতুন নতুন ডেঙ্গু রোগীর ভিড়ে হাসপাতালগুলোতে যখন ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা, ঠিক তখন তিনি বিদেশ গেলেন। তাই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ সর্বত্র সমালোচনার ঝড় বইছে। কেউ কেউ তো প্রশ্ন তুলেছেন তার মন্ত্রিত্ব নিয়েও।
এদিকে এ সময়ে কেন মন্ত্রী বিদেশ সফরে গেছেন- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় মন্ত্রীর বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কমিটির সভাপতি আলী আশরাফ ও সদস্য মঈন উদ্দীন খান বাদল। জানা গেছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত ২৮ জুলাই সপরিবারে মালয়েশিয়া যান। তার সফর সম্পর্কে তার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কিছুই জানতেন না। গত ২৫ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. মিলন অডিটোরিয়ামে ‘বর্তমান সামগ্রিক ডেঙ্গু পরিস্থিতি ও গৃহীত কার্যক্রম’ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। সেখানে মন্ত্রী বলেছিলেন, রোহিঙ্গাদের যেভাবে বংশবিস্তার হচ্ছে ঠিক একইভাবে এডিস মশার বংশবিস্তার হচ্ছে। এ নিয়ে তিনি উদ্বেগও প্রকাশ করেন। তার এ বক্তব্য বিভিন্ন সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়। সংবাদ সম্মেলনের তিন দিনের মাথায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হঠাৎ সপরিবারে মালয়েশিয়া চলে যান। অমনি শুরু হয় নাগরিক সমাজের তীর্যক মন্তব্য বর্ষণ যা এখনো চলছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তারের কারণে প্রতিদিনই রাজধানী ঢাকার সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা। এ মুহ‚র্তে এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি ও কঠোর পর্যবেক্ষণ যখন অপরিহার্য ঠিক তখন তিনি অনেকটা কাউকে না জানিয়েই বিদেশ গেলেন। এর প্রভাবে ডেঙ্গু চিকিৎসা ব্যবস্থা হয়ে পড়ে হ-য-ব-র-ল। সম্ভবত সে কারণেই ২৯ জুলাই অনুষ্ঠিত এক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়।
এদিকে দেশের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে রোগীরা ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিচ্ছেন। এসব হাসপাতালে শুরু থেকেই নানা পরীক্ষার নামে মোটা অংকের টাকা আদায় করা হচ্ছে রোগীদের কাছ থেকে। সরকার ফি নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে। এসব বিষয়ও মনিটরিং হচ্ছে না। মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে সবকিছুতেই সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে। মন্ত্রীর অনুপস্থিতি সমালোচনার যে ঝড় তৈরি করেছে তা থেকে বাদ যায়নি সরকারও।
উদ্বেগজনক ডেঙ্গু পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিদেশ সফর কতটা যুক্তিযুক্ত- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, এ সময়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দেশের বাইরে যাওয়া ঠিক হয়নি। তার উচিত ছিল এখানে থেকে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া। তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রাকৃতিকভাবেই এসেছে। এটি কেউ নিয়ে আসেনি। আর এটা মোকাবিলা শুধু সিটি করপোরেশনের বিষয় নয়, এখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভ‚মিকা অত্যন্ত গুরুত্বপ‚র্ণ। দেশের হাসপাতালগুলো তো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এগুলো মনিটরিংয়ের কাজও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। এ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে আছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি উপস্থিত থেকে সমন্বিতভাবে এই দুর্যোগ মোকাবিলা করা জরুরি।
বিএফইউজের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, এ রকম একটা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিদেশ যাওয়া ঠিক হয়নি। তিনি হয়তো জরুরি কোনো প্রয়োজনেই গেছেন। হয়তোবা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেও গেছেন। বিষয়টি যদি তার দফতর বা মন্ত্রণালয়ের লোকজনের জানা থাকত তাহলে হয়তো এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতো না।
Posted ১২:৩৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০১ আগস্ট ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed