বিবিএনিউজ.নেট | রবিবার, ০৫ মে ২০১৯ | প্রিন্ট | 809 বার পঠিত
নাম্বার পোর্টেবিলিটির (এমএনপি) মাধ্যমে সম্প্রতি রবিতে মাইগ্রেট করেছেন গ্রামীণফোনের সিম ব্যবহারকারী এক গ্রাহক। গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক জটিলতার কারণে রবিতে মাইগ্রেট করে বিপদ আরও বেড়েছে বলে জানান ওই গ্রাহক। তিনি বলেন, এখন তাকে প্রায় সময়ই ফোন করলে অপারেটর থেকে বলা হয়, ‘আপনি ভুল নম্বরে কল করেছেন।’ অথবা কখনও কখনও বলা হয়, ‘এই নম্বরটি খালি আছে।’ যদিও সব সময়ই মোবাইল ফোন চালু রাখেন তিনি।
এদিকে জাহিদুর রহমান নামে এক গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বাজে নেটওয়ার্ক মনে হয় রবি। প্রায় সময়ই তার পরিবার ও বন্ধুবান্ধব তাকে কল করে ফোনে পান না। এ কারণে তিনি রবি থেকে মাইগ্রেট করে গ্রামীণফোনে চলে গেছেন। তবে গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কেও শান্তি নেই বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে কল ড্রপ হয় গ্রামীণফোনে।
শুধু ওই দুই গ্রাহকই নয়, নেটওয়ার্ক নিয়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে অভিযোগ। এর মূল কারণ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লেও তুলনামূলকভাবে নেটওয়ার্ক সক্ষমতা বাড়ছে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত এক বছরে বিভিন্ন অপারেটরের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থায় (বিটিআরসি) নেটওয়ার্কসংশ্লিষ্ট ৮২৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে।
বিটিআরসির তথ্যমতে, গত ১ মে থেকে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন অপারেটরের নেটওয়ার্কসংশ্লিষ্ট জমা পড়া অভিযোগের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে রবি আজিয়াটা। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে ৪০৭টি। এর পরের অবস্থানে রয়েছে গ্রামীণফোন। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগ জমা পড়েছে ১৬৯টি। এছাড়া বাংলালিংকের বিরুদ্ধে রয়েছে ১৪৮টি অভিযোগ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টেলিটকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে ১০৩টি।
জানতে চাইলে রবি আজিয়াটার মিডিয়া রিলেশন ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘রবি বর্তমানে পাঁচ কোটি গ্রাহককে সার্ভিস প্রদান করছে। রবি অন্যান্য অপারেটরের চেয়ে বরং ভালো মানের সার্ভিস প্রদান করছে। যে কারণে এমএনপিতে অন্যান্য অপারেটর থেকে বেশি গ্রাহক আসছে রবিতে। তবে সব সময় শতভাগ সার্ভিস নিশ্চিত করা কঠিন, সেটি যে কোনো অপারেটরের জন্যই।’
বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, ‘নেটওয়ার্কের সক্ষমতা বাড়াতে টাওয়ার শেয়ারিং নীতিমালা করা হয়েছে। অপারেটরগুলোকে নেটওয়ার্ক সমস্যা সমাধানসহ গ্রাহকদের মানসম্পন্ন সেবা প্রদানের বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রাহকদের সেবার মান বাড়াতেই আমরা ফোরজি সেবা চালু করেছি। ফোরজিতে প্রতিনিয়ত গ্রাহক বাড়ছে। তবে ফোরজি সেবা প্রদানে অপারেটগুলোর স্পেকট্রাম আরও বাড়াতে হবে। যে পরিমাণ স্পেকট্রাম কিনেছে, তা দিয়ে গ্রাহকদের কোয়ালিটি অব সার্ভিস প্রদানে অপারেটরগুলো ব্যর্থ হবে।’
নেটওয়ার্ক সমস্যা প্রসঙ্গে দেশে পরিচালিত মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ‘একটা সেবার জন্য কয়েকটি মাধ্যম থাকে। যেমন ফাইবার, পাওয়ার, স্পেকট্রাম, ঘনবসতিসহ আরও অন্যান্য বিষয় জড়িত থাকে, যে কারণে সব সময় এক রকম সেবা বা মানসম্পন্ন সেবা পেতে সমস্যা হয়। কোনো এলাকার ঘনবসতির ওপরও নেটওয়ার্ক সক্ষমতা ডিপেন্ড করে। পাশাপাশি স্পেকট্রাম কম হলেও থ্রিজি বা ফোরজি ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কে সমস্যা হয়।
তারা আরও জানায়, অপারেটরগুলোর গ্রাহকসেবার ক্ষেত্রে প্রধান যন্ত্র বেস ট্রান্সসিভার স্টেশনের (বিটিএস) নির্ধারিত ক্ষমতার চেয়ে বেশি ভয়েস কল প্রতিমুহূর্তে আদান-প্রদান করতে হচ্ছে। যেখানে সক্ষমতা একসঙ্গে ৮০ থেকে ১০০ কল আদান-প্রদানের, সেখানে একসঙ্গে এক হাজারের বেশি কল আসছে। এ অবস্থায় কল ড্রপ কিংবা নেটওয়ার্ক পেতে সমস্যা হচ্ছে। আবার নেটওয়ার্ক পাওয়া গেলেও দুর্বলতার কারণে কথা ভেঙে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে রাস্তা খননের কাজ করাতেও এর প্রভাব ফাইভার কার্ডে। এর পরিপ্রেক্ষিতেও নেটওয়ার্কে সমস্যা হতে পারে। এছাড়া ঝড়বৃষ্টিতেও এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তবে গ্রাহকের তুলনায় নেটওয়ার্ক সক্ষমতা না বাড়ায় প্রতিনিয়ত কলড্রপ বাড়ছে। অন্যদিকে ফোরজি চালু হলেও পর্যাপ্ত স্পেকট্রাম না থাকায় ফোরজি নেটওয়ার্কেও সমস্যা হচ্ছে। অর্থাৎ ফোরজি চালু হলেও গ্রাহকরা এখন প্রকৃত ফোরজি সেবার বাইরে। প্রযুক্তির দিকে সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সারা বিশ্বে বাণিজ্যিক খাত সমৃদ্ধ হচ্ছে। মানুষ এখন কাজের প্রয়োজনে প্রযুক্তি ব্যবহার করে। অথচ ফোরজি চালুর পর থেকে নেটওয়ার্কে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হচ্ছে। ফোরজিতে ‘নেটওয়ার্ক’ সিনক্রোনাইজেশনের সময় নেটওয়ার্কগুলোতে সমস্যা আরও বাড়ছে।
তারা আরও জানান, অসহ্য কল ড্রপ ও কথা বোঝা না যাওয়ার পাশাপাশি ইন্টারনেটে ধীরগতির কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন গ্রাহকরা। মোবাইল নেটওয়ার্ক নিয়ে অধিকাংশ গ্রাহকেরই অভিযোগ- ঢাকার ভেতরে নেটওয়ার্কের অবস্থা কিছুটা ভালো পাওয়া গেলেও মফস্বলের অনেক জায়গায় নেটওয়ার্ক থাকে না। আবার কিছু এলাকাতে নেটওয়ার্ক থাকলেও সেইসব এলাকায় প্রচুর পরিমাণে কল ড্রপ হয়।
বাংলালিংকের করপোরেট কমিউনিকেশনস বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার আংকিত সুরেকা বলেন, ‘বাংলালিংক অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো সার্ভিস প্রদান করছে। আমাদের অভিযোগও অনেকাংশ কমে গেছে। তাছাড়া বাংলালিংক গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে যে কোনো ধরনের অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে দেখে থাকে। একটি সার্ভিসের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় যুক্ত থাকে। ফাইবার কার্ড, পাওয়ার স্পেকট্রামসহ আরও অন্যান্য বিষয় যুক্ত থাকে। এছাড়া আবহাওয়া ও ঘনবসতির ওপরও সার্ভিস ডিপেন্ড করে।’
Posted ১:৪৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৫ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed