নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ১৮ মে ২০২০ | প্রিন্ট | 482 বার পঠিত
সরকার ঘোষিত প্রণোদনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে বেশ কিছু দিক-নির্দেশনা দেয়ার জন্য একটি ভার্চুয়াল সভা ডেকেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। আগামীকাল মঙ্গলবার (১৯ মে) ঢাকায় এ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, সরকারের নির্দেশনায় এখন পর্যন্ত ১৮টি প্রণোদনা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশিরভাগ প্রণোদনাই বাস্তবায়নের কোনো খবর নেই। প্রণোদনা বাস্তবায়নে ধীরগতি বা জট খুলতেই এ সভার আয়োজন করা হয়েছে বলে একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ১৯ মে একটি ভার্চুয়াল সভা আছে। সভাটি গভর্নর আহ্বান করেছেন। সভায় ঘোষিত প্রণোদনা বাস্তবায়নে কিছু দিক নির্দেশনা দিতে পারেন।
রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, এমডিদের ভার্চুয়াল সভায় করোনা পরিস্থিতি, করণীয় এবং প্রণোদনা বাস্তবায়নের কলা-কৌশল নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
জানা গেছে, করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট সংকট থেকে ক্ষুদ্র্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প রক্ষা করতে বিভিন্ন খাতে সরকার প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। তবে ঘোষণার পর প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন নিয়ে নানা জটিলতা শুরু হয়েছে। সমন্বয়হীনতার কারণে বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। এতে অনেক ক্ষেত্রেই প্রণোদনা ঘোষণার উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এজন্য প্রকৃতপক্ষেই যাতে প্রণোদনাগুলো কাজে আসে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে জটিলতা ও হয়রানিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলেছেন তারা।
জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এ প্যাকেজ সম্পর্কে সম্প্রতি একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে এই ঋণপ্রাপ্তিকে সহজ করার বিষয়ে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত ইন্টারনাল ক্রেডিট রিস্ক রেটিং (আইসিআরআর) নীতিমালার শর্ত পূরণ না করেও গ্রাহকেরা ঋণের আবেদন করতে পারবেন। কারণ করোনা ভাইরাসের কারণে দাফতরিক কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ায় আইসিআরআর কার্যক্রম ব্যাহত এবং ঋণ গ্রহীতার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে এটা করা হয়েছে।
প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে রয়েছে রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের বেতন বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকা, বড় শিল্প খাতের জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা, কৃষির জন্য ২১০ কোটি টাকা। এসব ঋণের প্রায় সবই দেবে বিভিন্ন ব্যাংক। আর সুদ ৯ শতাংশ হিসাব করা হলেও ঋণগ্রহীতারা দেবেন অর্ধেক সুদ। বাকি অর্ধেক সরকার ব্যাংকগুলোকে পরিশোধ করবে। তবে ব্যাংকগুলো কীভাবে এত টাকার জোগান দেবে, সে বিষয়েও কথা উঠেছে।
ইতিমধ্যে রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের প্যাকেজের আওতায় এপ্রিল মাসের বেতনের অর্থ ছাড় করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময়ে যারা কারখানায় কাজ করেছেন তারা পূর্ণ, যারা আংশিক কাজ করেছেন আনুপাতিক হারে এবং যারা কারখানায় উপস্থিত ছিলেন না তারা ৬৫ শতাংশ বেতন পাবেন। তবে বড় শিল্প ঋণে ধীরগতি। এই ঋণের সঙ্গে অনেক প্রক্রিয়া রয়েছে। সাধারণ ছুটির মধ্যে এসব প্রক্রিয়া শেষ করা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব। এই ঋণের সঙ্গে যেহেতু জামানতের বিষয় জড়িত, তাই শুরু থেকে একটু সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।
রফতানি খাতে প্রি-শিপমেন্ট ঋণ দিতে ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গ্রাহক পর্যায়ে এই ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ৪ শতাংশ। ঋণ বিতরণের পর বরাদ্দকৃত তহবিল থেকে পর্যায়ক্রমে এই টাকা পাবে ব্যাংক।
ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, কৃষক, প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য গঠন করা হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম। গ্রাহক পর্যায়ে এই ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ শতাংশ। অন্যদিকে শুধুমাত্র কৃষি খাতের জন্য গঠন করা হয়েছে ৫ হাজার করে টাকার বিশেষ তহবিল। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারিদের জন্য সরকার ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এই প্যাকেজের অর্ধেক অর্থাৎ ১০ হাজার কোটি টাকা যোগান দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঘোষিত প্যাকেজের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক যোগান দেবে সবমিলিয়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকা। এসব বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে বিস্তারিত আলোচনা হবে এমডিদের ভার্চুয়াল সভায়।
Posted ৪:৪০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৮ মে ২০২০
bankbimaarthonity.com | saed khan