শনিবার ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভ্যাট ফাঁকি ইউনিয়ন ব্যাংকের

বিবিএনিউজ.নেট   |   বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   670 বার পঠিত

প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভ্যাট ফাঁকি ইউনিয়ন ব্যাংকের

চতুর্থ প্রজন্মের ইউনিয়ন ব্যাংকের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকটি বিভিন্ন সেবা থেকে আয় ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে পরবর্তী চার বছর ধরে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিরীক্ষার মাধ্যমে এ ফাঁকি উদ্ঘাটন করে। ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট পরিশোধে দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকিং করার উদ্দেশ্যে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউনিয়ন ব্যাংক। ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ পায় এনবিআর। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের আওতাধীন মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর ব্যাংকটি নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নেয়। সে অনুযায়ী ব্যাংকের কাছে বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও ভ্যাটসংক্রান্ত কাগজপত্র চাওয়া হয়। ব্যাংকের দেওয়া কাগজপত্র যাচাই করে ফাঁকি উদ্ঘাটন করে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। ঢাকা (উত্তর) কমিশনারেটে মামলার প্রতিবেদন পাঠানো হয়। ভ্যাট উত্তর কমিশনারেট গত ২৩ এপ্রিল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর প্রাথমিক দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করে।

৮ মে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুককে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘মামলার বিষয়টি আমি দেখি না। আমাদের জনসংযোগ শাখা দেখে। জেনে জানাব।’ গতকাল ফোন দেওয়া হলে তিনি মামলার বিষয়টি জানেন না এবং দেখেন না বলে কিছু বলার আগেই ফোন কেটে দেন। পরে তার মোবাইলে খুদে বার্তা দেওয়া হলেও তার জবাব দেননি।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন ও কাগজপত্র যাচাই করা হয়। এতে দেখা যায়, ব্যাংকটি মাসিক দাখিলপত্র (ভ্যাট রিটার্ন) দাখিল করে আসছে। কিন্তু দাখিলপত্রে অব্যাহতিপ্রাপ্ত আয় উল্লেখ করে না। এতে ভ্যাট ফাঁকি হতে পারে। ব্যাংকের বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যাংকটি প্রায় ৪০ ধরনের সেবার বিপরীতে আদায় করা কমিশন ও সেবা মাশুলের ওপর ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চার বছরে প্রায় ২৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা আয় করেছে, যার ওপর প্রায় ৪৭ লাখ টাকার ভ্যাট পরিশোধ না করে ফাঁকি দিয়েছে। মূসক আইন অনুযায়ী ফাঁকি দেওয়া ভ্যাটের ওপর দুই শতাংশ হারে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুদ প্রায় ৩০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কেনাকাটা বা ব্যয়ের ক্ষেত্রে উৎসে ভ্যাট প্রযোজ্য হলেও সঠিকভাবে তা কর্তন করে না। ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৩০টি খাতে ব্যাংকটি মোট ১৬৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। এ সময় ব্যাংকটি প্রায় এক লাখ ৪৫ হাজার টাকার (২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২ শতাংশ হারে সুদসহ) উৎসে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেবা আয় ও ব্যাংকের ব্যয়ের বিপরীতে প্রায় ৭৯ লাখ টাকার (সুদসহ) ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ ভ্যাট পরিশোধে ১৫ দিনের সময় দিয়ে দাবিনামা-সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়।

এ বিষয়ে মূসক গোয়েন্দার একজন কর্মকর্তা বলেন, এটি ঠিক যে ব্যাংকটি নতুন। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে তারা। বেশ কিছু সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট নেওয়া হলেও জমা দেয়নি। কাগজপত্রও সঠিকভাবে সংরক্ষণ করেনি। সে জন্য ভ্যাট ফাঁকির সঠিক চিত্র পাওয়া যায়নি। তবে কমিশনারেট যাচাই করলে ফাঁকি আরও বের হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে যে ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক অনুমোদন পায়, তার মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড অন্যতম। ২০১৮ সাল শেষে ব্যাংকের কর-পরবর্তী মোট মুনাফা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। বিনিয়োগ ১১ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। ব্যাংকের বর্তমানে দেশব্যাপী ৭৭টি শাখা রয়েছে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:২১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।