নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ১৫ মে ২০২২ | প্রিন্ট | 306 বার পঠিত
বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় ভারতে গ্রেফতার হওয়া আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ। তবে এখন এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আনঅফিসিয়াল পর্যায়ে তথ্য বিনিময় হচ্ছে। পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে রোববার (১৫ মে) গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ও আইন রয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে। আমরা এখন মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম। অফিসিয়ালভাবে জানতে হবে, জানার পরে যোগাযোগ করব। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জননিরাপত্তা বিভাগসহ সবাই মিলে এক সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে’।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আনঅফিসিয়াল যোগাযোগ রাখছি। কিছু তথ্য লেনদেন হচ্ছে। ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আনঅফিসিয়ালি কিছু করা যায় না। মিডিয়ায় আসার পর আমরা তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এখনও অফিসিয়ালি কিছু শুরু করিনি। আমরা দেখি ভারত সরকারিভাবে কী জানায়’?
তিনি বলেন, ‘ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেডএলার্ট জারি করা ছিল’। এটি পিকে হালদারকে ফিরিয়ে আনতে বাড়তি কোনো সুবিধা দেবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ভারতের বন্দি বিনিময় চুক্তিই আছে। আনতে হলে চুক্তির আওতায় আনা হবে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেডএলার্ট ভারতসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও দেওয়া হয়েছে। রেড এলার্ট জারির পর ভারত সময়ে সময়ে বেশকিছু তথ্য চেয়েছিল। আমরাও দিয়েছি’।
এদিকে পিকে হালদার প্রসঙ্গে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘তদন্তাধীন মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন পি কে হালদারকে অবশ্যই রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তখন দেখা যাবে এখানে আরও অনেক বড় রুই-কাতলা জড়িত রয়েছে। তাদেরও ধরা সহজ হবে তখন। তবে তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট ছিল’।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের অক্টোবরে ভারতের সঙ্গে বহিঃসমর্পণ চুক্তি করে বাংলাদেশ। এ চুক্তির আওতায় দুই দেশ বন্দি বিনিময় করার সুযোগ পাবে। এ চুক্তি হওয়ার আগে উভয় দেশ অনানুষ্ঠানিকভাবে সীমান্ত পার করিয়ে বন্দি বিনিময় হতো।
‘আনুষ্ঠানিকভাবে যথাযথ মাধ্যমে’ সরকারকে চিঠি দেওয়া ও চিঠি পাওয়ার পরই উভয় দেশের সরকার বন্দি বিময়ের বিষয়ে বিবেচনা করবে। পি কে হালদারের বিষয়ে অন্য কোনো জটিলতা না থাকলে আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিন মাসের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশের কারাগারে থাকা ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারত চাওয়ার পর থেকে এই বন্দি বিনিময় বা বহিঃসমর্পণ চুক্তির বিষয়টি সামনে আসে। তবে সাধারণত বন্দি ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশ বন্দির বিরুদ্ধে আদালতের দেওয়া সাজা দেখতে চায়।
২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়ে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে যখন ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের গ্রাহকরা অর্থ ফিরে পেতে অভিযোগ করতে থাকেন তখনই দুদকের অনুসন্ধান শুরু হয়। সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে পি কে হালদারের আর্থিক দুর্নীতির নানা তথ্য। একই সঙ্গে তার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও। আত্মসাতের ক্ষেত্রে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মকর্তা ও নিজস্ব বাহিনীকে কাজে লাগিয়েছেন পিকে হালদার চক্র।
দুদকসহ বিভিন্ন সংস্থার তথ্যানুসারে পি কে হালদার ও তার সঙ্গীরা মিলে অন্তত ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যা বিভিন্ন উপায়ে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে। অনুসন্ধানের সময় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পি কে হালদারের লাগামহীন দুর্নীতির নথিপত্র সংগ্রহ করে দুদক।
এসব নথিতে দেখা যায়, এ ব্যক্তি অস্তিত্বহীন ৩০-৪০টি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ঋণের নামে জালিয়াতি করে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড ও পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস থেকে আত্মসাৎ করেছেন প্রায় ১০ হাজার ২শ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে দুই হাজার ৫০০ কোটি, এফএএস ফাইন্যান্স থেকে প্রায় দুই হাজার ২০০ কোটি, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে প্রায় দুই হাজার ৫০০ কোটি ও পিপলস লিজিং থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসব ঋণের বিপরীতে মর্টগেজ (জামানত) নেই বললেই চলে।
Posted ৫:৪৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৫ মে ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy