নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর ২০২২ | প্রিন্ট | 133 বার পঠিত
আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েই চলছে জ্বালানি তেলের দাম। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ডলারের সংকট। দেশেও জ্বালানি তেলের দাম আকাশচুম্বী। গ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদনেও ভাটা পড়ে। তার ওপর রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও কাস্টমসের নানা জটিলতা। এমন বহুমুখী সংকটে বিপর্যয়ের মুখে রপ্তানি বাণিজ্য।
রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তৈরি পোশাক, সার, সিমেন্ট, সিরামিক ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য প্রস্তুতকারকদের উৎপাদন কমেছে ৩০-৫০ শতাংশ। গ্যাস সংকট ও লোডশেডিংয়ের সময়ও ডিজেলচালিত জেনারেটরে কারখানা সচল রাখতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৫০-৬০ শতাংশ। অপর্যাপ্ত জ্বালানিতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় অর্ডার থাকলেও সময়মতো পণ্য রপ্তানি করতে পারছেন না তারা। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও তারা আশার কথা শুনতে পারছেন না। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে ভাবমূর্তি হারাতে বসেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে এব্লুম ডিজাইন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরি চালক মহসিন রাব্বানি বলেন, চরম খারাপ অবস্থায় গার্মেন্ট্স। জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও বিদ্যুৎ
বিদ্যুৎ উৎাদন হ্রাস পাওয়ায় একদিকে উৎপাদন কমেছে অন্যদিকে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। আমাদের রপ্তানি ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমে গেছে। যারা ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছে তারা নিয়মিত কিস্তি দিতে পারছে না। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে তেলের দাম কমানোর অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। চিঠিতে বলা হয়, ‘পোশাক কারখানাগুলোতে চরম বিদ্যুৎ সংকট চলছে। সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন করা হয়েছে। কর্মঘণ্টা এক ঘণ্টা কমিয়ে আনা হয়েছে। লোডশেডিং চলাকালে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে উচ্চমূল্যের ডিজেলে জেনারেটর ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছেন মালিকরা।
জিহান গার্মেন্ট ইন্ডান্ট্রি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বাবুল আক্তার জাহিদ বলেন, লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত কারখানা। যেখানে দৈনিক ১০ কর্শঘন্টা সেখানে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় ৪/৫ ঘন্টা। এতে উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। তার ওপর রয়েছে ডলার সংকট। আমাদের ক্রয়াদেশ কমে গেছে।
নারায়ননগঞ্জের ফতুল্লাহ এপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে শামীম এহসান বলেন, ‘পোশাক কারখানায় গ্যাসের চাপ ১৫ পিএসএ থাকতে হয়। এটা আমার এখানে থাকতো শূন্য বা এক থেকে দুই পিএসএ। কিছুদিন হলো এটার অবস্থা একটু ভালো হয়েছে। কিন্তু সেটাও বলার মতো নয়। মাসে আমার গ্যাস বিল আসে ৭০ লাখ টাকার মতো। আবার লোডশেডিংয়ের জন্য প্রতিদিন ছয়-সাত লাখ টাকার ডিজেল কিনতে হচ্ছে। গত মাসে প্রায় দুই কোটি টাকার ডিজেল কিনতে হয়েছে। অথচ কারখানায় উৎপাদন হয়েছে আগের চেয়ে অর্ধেকেরও কম।’
জ্বালানি সংকট ও খরচ বাড়ায় অনেক কারখানা বন্ধ রেখেছেন মালিকরা। অর্ডার থাকলেও তারা পণ্য উৎপাদনে অনাগ্রহ, বন্ধ অনেক কারখানা
উৎপাদন বন্ধ রাখা একাধিক কারখানার মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশি দামে জ্বালানি কিনে পণ্য উৎপাদনে তাদের আগ্রহ নেই। জ্বালানি না থাকায় কাঁচামালের অপচয় বাড়ছে। বিকল্প উপায়ে জ্বালানির ব্যবস্থা করতে গেলে উৎপাদন খরচ অন্তত ৫০-৬০ শতাংশ বেড়ে যাবে। এতে বড় লোকসান গুনতে হচ্ছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় তারা উৎপাদন বন্ধ রাখাই শ্রেয় মনে করছেন।
গ্যাস সংকটে অর্ধেকে নেমেছে টাইলস ও সিরামিক পণ্যের উৎপাদন। রাজধানীর মিরপুর, বাংলামোটর, নদ্দার একাধিক টাইলস ও সিরামিকের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, ক্রেতাদের পর্যাপ্ত পণ্য ডেলিভারি দিতে পারছেন না বিক্রেতারা।
মিরপুর-১০ নম্বরের এবিসি টাইলসের স্বত্বাধিকারী পারভেজ মাসুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফ্রেশ কোম্পানিকে দুই সপ্তাহ আগে বেশকিছু অর্ডার দিয়েছিলাম। তারা পণ্য দিতে পারেননি। অন্য কোম্পানিও অর্ডারের পণ্য দিতে গড়িমসি করছে। পণ্য দিতে না পারলে তো ক্রেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হবেই, হচ্ছেও তাই।’
এক্সিলেন্ট সিরামিক আইএনডি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হাকিম সুমন। তিনি বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) পরিচালক পদেও রয়েছেন।
আবদুল হাকিম সুমন বলেন, গ্যাস সংকট কাটছেই না। এর প্রভাবে কারখানায় উৎপাদন কমে গেছে। আগে যে পরিমাণ উৎপাদন হতো, এখন তার অর্ধেক হয়। গ্যাসের যে চাহিদা, তার ৫০ শতাংশও সরকার দিতে পারছে না। এজন্য উৎপাদনও ৫০ শতাংশ কমে গেছে। এটা গ্যাসনির্ভর কারখানা, এখানে অন্য জ্বালানি দিয়ে পোষানো সম্ভব নয়।
কারখানার মালিকরা বলছেন, দিনে কর্মঘণ্টার মধ্যে ৫-৬ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকছে। ফলে বাড়তি দামে কেনা ডিজেল দিয়ে জেনারেটর চালাতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হচ্ছে। অথচ ইউরোপ ও আমেরিকায় রপ্তানি কমেছে।
আরও পড়ুন: ওয়ালমার্টের অর্ডার বাতিল: আপাতত ‘অবজারভেশনে’ পোশাক উৎপাদকরা
জানা গেছে, সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে ৩৯০ কোটি ৫০ লাখ বা ৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে আগের বছরের (২০২১-২২) জুলাইয়ের চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছে ৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।
২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর- এ তিনমাসের চেয়ে চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে অনেক পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে। এর মধ্যে কৃষিপণ্যে ১৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ, কেমিক্যালের পণ্যে ২৩ দশমিক ২৮ ও কাচজাতীয় পণ্যে ৫২ দশমিক ৭৯ শতাংশ রপ্তানি কম হয়েছে। একই সময়ে তৈরি পোশাক, প্লাস্টিকসহ অনেক পণ্যের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে তা খুব বেশি আশাব্যঞ্জক নয় বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
Posted ৩:৫১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy