বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

বাংলাদেশের বীমা খাতের সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

  |   রবিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২০   |   প্রিন্ট   |   2949 বার পঠিত

বাংলাদেশের বীমা খাতের সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বীমা খাতের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা দীর্ঘ ২৯ বছরের। ভারত, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও কনফারেন্সে অংশ নিয়েছেন। জাতীয় বীমা দিবস উপলক্ষে বীমা খাতের সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয় বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রুহিনা ফেরদৌস

প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে বীমা দিবস পালনের বিষয়টিকেও কীভাবে দেখছেন?
বীমা সেক্টরের জন্য দিবসটি বড় পাওনা। জাতীয় বীমা নীতি তৈরির সময় জাতীয় বীমা দিবস নিয়ে ভাবনার সূচনা। চমৎকার বিষয় হচ্ছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিছুদিন বীমা সেক্টরের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৬০ সালের ১ মার্চ তিনি তদানীন্তন আলফা ইন্স্যুরেন্সের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেন। দিনটিকে বীমা দিবস হিসেবে পালনের জন্য বীমা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমরা সরকারের কাছে প্রস্তাব পেশ করি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তা মন্ত্রিসভার অনুমোদন পায়। এর ধারাবাহিকতায় আজ প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে বীমা দিবস পালিত হচ্ছে। শুধু বীমা নয়, অন্যান্য আর্থিক সেক্টরের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে দিবসটিকে পালন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে আমাদের ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করবেন। এর মধ্য দিয়ে সেক্টরটি আরো উন্নত হবে বলে আমি মনে করি।

বাংলাদেশের বীমা খাতের সম্ভাবনা কতটুকু?
বীমা বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় একটি খাত। ২৯ বছর ধরে আমি এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। হয়তো যেমনটা আশা করেছিলাম তা হয়নি। তবে অনেক কিছু করার আছে এখনো। যোগ্য ও মেধাবীদের এ খাতে যোগদানের আহ্বান জানাই। আমাকে যিনি এখানে কাজের জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন, তিনি বলতেন যে ভালো মানুষ ছাড়া ভালো কাজ হয় না। আমি আশা ছাড়ি না। বর্তমানে এ খাতে অনেক দক্ষ ও মেধাবীরা আসছেন। একই সঙ্গে প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে ফিনটেক, ইন্স্যুরেন্সটেক ও এমএফএস (মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস), অনলাইনপেমেন্ট সার্ভিস বীমা খাতকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করছে। সমস্যাটি হচ্ছে, অনেকে বীমা বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখে। যদিও বীমা একটি আর্থিক খাত। ব্যাংকের মতোই বীমাতেও সেবার বিষয়টি জড়িত। অনলাইন লেনদেনের আগ পর্যন্ত গ্রাহকের জন্য বীমা পলিসি করা ও পেমেন্ট জমা দেয়া বড় ধরনের চ্যালঞ্জ ছিল। কেননা এজেন্টকে গ্রাহকের কাছে যেতে ও পেমেন্ট সংগ্রহ করতে হতো। অনেক সময় গ্রাহকের অভিযোগ কোম্পানি পর্যন্ত পৌঁছত না। বর্তমানে অ্যাপ বা কার্ডের মাধ্যমেই গ্রাহক তার পেমেন্ট জমা দিতে পারছেন। ঘরে বসে দেখতে পারছেন কতটা প্রিমিয়াম ও বোনাস জমা হয়েছে ইত্যাদি। সব মিলিয়ে এক ধরনের স্বচ্ছতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে বীমা খাত ঘিরে আমি খুবই আশাবাদী।

বীমা শিল্পের প্রতিবন্ধকতাগুলো কী?
স্বাধীনতা-পরবর্তী একটি করে জীবন বীমা করপোরেশন ও সাধারণ বীমা করপোরেশন হয়। এর বাইরে বীমার সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল না। একই সময় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১০-১৫টি ব্যাংক ছিল। তাছাড়া ব্যাংকিং অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অনেক দক্ষ মানুষ ছিলেন। বিপরীতে বীমা খাতে অভিজ্ঞতাসম্পন্নরা কম ছিলেন। ১৯৮৫ বেসরকারীকরণ হলেও বীমা সেক্টরকে উন্নত করার মতো জনবল আমাদের ছিল না। সে পরিপ্রেক্ষিতে বলব, বীমা খাত ক্রমান্বয়ে উন্নত হচ্ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ২০০০ সালে বেসরকারীকরণের সিদ্ধান্ত নিলেও পার্থক্যটা হচ্ছে বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে তারা বিদেশী অংশীদার আনার সুযোগ দিয়েছে। ফলে তাদের বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে পুরনো বিদেশী কোম্পানির অভিজ্ঞতা জমা হয়েছে এবং বিদেশী প্রযুক্তি ও কর্মপদ্ধতি নিয়ে তারা কাজ করছে। সেজন্য ওদের খাত যতটা এগিয়েছে, আমরা ততটা অগ্রসর হতে পারিনি।

এছাড়া অন্যান্য কী ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে?
বীমা সম্পর্কিত বার্তাগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরার বিষয়ে একটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সাধারণ মানুষ তাদের অর্থ কোথায় রাখবেন; ব্যাংকে, বীমা কোম্পানিতে নাকি লিজিং কোম্পানিতে? আর্থিক খাতের জ্ঞান আসলে আমাদের খানিকটা কম রয়েছে। এর ওপর বীমা খাত সম্পর্কে জানাশোনাটা আরো কম। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে বেরিয়েছি, বীমা সম্পর্কে তখন কিন্তু আমার তেমন কোনো ধারণাই ছিল না। কারণ পাঠ্যক্রমে এ সম্পর্কে তেমন কোনো বিষয়ও উল্লেখ ছিল না। পরবর্তী সময়ে আমি যখন এটি সম্পর্কে জানি তখন দেখলাম কীভাবে বীমা আমাদের জীবনকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করে। এ বিষয়গুলোকে যদি আমরা মানুষকে বোঝাতে পারি, তাহলে এ খাতের উন্নতি হবেই। উন্নত বিশ্বের নাগরিকদের গাড়ি-বাড়ি থেকে প্রায় সবকিছুই ইন্স্যুরেন্স করা। ওদের অবসর পরিকল্পনা থাকে। আমরা বলছি, অবসর পরিকল্পনাটা সবার জন্য খুবই জরুরি। ৬০ বছর বয়সে চাকরি শেষে কী হবে, আমাদের তা ভাবতে হবে। এ ধরনের অনেক কাজের সুযোগ বীমা খাতে আছে। আমরা যদি এ বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে এগোতে পারি, নিশ্চিতভাবে আমাদের জন্য বড় ধরনের বাজার অপেক্ষা করছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে বীমা খাতে লোক নিয়োগ, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে শিখিয়ে-পড়িয়ে গড়ে তোলাটাও আমাদের বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। তবে বীমা সেক্টরে কাজ করলে নিজের উন্নতির পাশাপাশি সমাজের প্রতিও এক ধরনের দায়িত্ব পালন করা হয়।

অনেকে বীমা দাবি পরিশোধ করে না…
অনেকে বীমা কোম্পানির সঙ্গে ব্যাংককে মিলিয়ে ফেলেন। ব্যাংকে যে অর্থটা রাখা হয়, তা-ই ফেরত দেয়া হয়। এদিকে বীমা কোম্পানি গ্রাহকের জমাকৃত অর্থটা ফেরতের পাশাপাশি সুরক্ষা দেয়। এক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-নীতি আছে। যেমন ন্যূনতম দুই বছর বীমা চালাতে হয়, না হলে গ্রাহক কোনো টাকা ফেরত পাবেন না ইত্যাদি। ব্যাংকের টাকা উত্তোলন করা যায়, বীমায় তা যায় না। মানুষ মনে করে টাকা জমা করেছি, কেন ফেরত দেবে না! বীমার নিয়মটাই অনেকে বুঝে উঠতে পারেন না। যেহেতু বীমা সম্পর্কে আমাদের ধারণা কম, তাই এ-বিষয়ক এক ধরনের দ্বিধা রয়েছে সাধারণের মধ্যে। বীমার নিয়ম-নীতিগুলো যদি সঠিকভাবে মেনে কাজ করা যায়, নিশ্চিতভাবে সেক্টরটি মানুষের পারিবারিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে চমৎকার সমাধান দিতে পারবে।

কী ধরনের প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছেন? গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স চতুর্থ প্রজন্মের জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান। ২০১৫ সালে আমি গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সে যোগদান করি। অন্যদের তুলনায় বীমায় অনেক নিয়ম-নীতি মেনে কাজ করতে হয়। বাজারটা অনেক বড়, তবে সেভাবে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি আমরা হইনি। একক বীমার পাশাপাশি করপোরেট বীমার অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। এপেক্স, স্কয়ার, ব্র্যাকসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান আছে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সঙ্গে। আমরা যৌথ ইন্স্যুরেন্সের বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছি। গার্ডিয়ান ব্র্যাক বীমা (জিবিবি) নামে একটা বীমা পলিসি রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ১১ লাখ মানুষকে বীমার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। প্রিমিয়াম সংগ্রহ করাটা আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা মাই গার্ডিয়ান নামে একটা অ্যাপ করেছি। এর মাধ্যমে গ্রাহক ঘরে বসেই তার পলিসি চালাতে পারবেন। যার উপকারিতা আমরা পাচ্ছি। আমাদের ২৪ ঘণ্টার কল সেন্টার আছে। গ্রাহকের যেকোনো সার্ভিসের প্রয়োজনে এখান থেকে সহযোগিতা দেয়া হয়। নতুন প্রজন্ম অনলাইন সার্ভিস নেওয়ায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ইজি লাইফ নামে আমাদের আরো একটা অ্যাপ রয়েছে। নতুন প্রজন্মের অনেকে আমাদের পলিসি সাইনআপ করেছে। সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আমরা যদি বীমা সেবাটাকে মানুষের দোরগোড়ায় নিতে পারি, অনেক বেশি মানুষ এটা থেকে উপকৃত হবে।

সরকারের কাছে প্রত্যাশা কী?
মানুষের কাছে বীমার বিষয়টা পৌঁছানো বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলেছি, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে যদি বীমাকে মানুষের কাছে নেয়া সম্ভব হয়, তাহলে গ্রাহকের সংখ্যা বাড়বে। এটি ছাড়াও করপোরেট এজেন্টের কথা আমরা বলেছি। আমাদের নীতিনির্ধারক সংস্থার কাছে যদি করপোরেট এজেন্টরা আসে, সেক্ষেত্রে ব্যাংক, লিজিং কোম্পানি, এনজিও তারা বীমা বিক্রির চ্যানেল হিসেবে কাজ করতে পারে। যেমন ব্যাংকের সঙ্গে বীমার চ্যানেলের মাধ্যমে এটি যে শুধু বীমার আয় বাড়াবে তা নয়, তারাও কমিশনপ্রাপ্তির মাধ্যমে লাভবান হবে। ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়ায় এটা আছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের কাছ থেকে আমরা ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। আশা করছি চলতি বছরের মধ্যেই আমরা ব্যাংকিং চ্যানেলের সঙ্গে কাজের সুযোগ পাব। সূত্রঃ বণিকবার্তা

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।