শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x
করোনা সংকটে জমানো অর্থ খরচ

বিনিয়োগ নেই সঞ্চয়পত্রে, ব্যাংকগুলোতে কমেছে আমানত

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ২৭ জুন ২০২০   |   প্রিন্ট   |   681 বার পঠিত

বিনিয়োগ নেই সঞ্চয়পত্রে, ব্যাংকগুলোতে কমেছে আমানত

করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবে অনেকে হয়ে পড়েছেন বেকার। আবার কারো কাজ আছে কিন্তু বেতন পাচ্ছেন না। অর্থ সংকটে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থাও খারাপ। ফলে সংসারের খরচ মেটাতেই এখন হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। এমন অবস্থায় সঞ্চয় ও বিনিয়োগ তো পরের কথা; জমানো পুঁজি ভেঙে চলছে বেশিরভাগ মানুষের সংসার।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, করোনা সংকটের কারণে মানুষ তাদের জমানো অর্থ খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে ব্যাংকগুলোতে কমেছে আমানতের পরিমাণ। এছাড়া দীর্ঘদিন বিক্রিতে চাঙ্গা থাকা সঞ্চয়পত্রেও এখন মানুষ বিনিয়োগ করছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানুষ সাধারণত স্বাভাবিক জীবনযাপনের ব্যয় মেটানোর পর যে উদ্বৃত্ত অর্থ থাকে তা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে রাখেন। এখন মানুষের আয় কমে গেছে। তাই অর্থ জমানো পরের কথা; জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। তাদের কাউকে কাউকে সঞ্চয় ভেঙে খেতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতি আর কিছুদিন চললে সামনে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ব্যাংক খাতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে মোট আমানত ছিল ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। যা এপ্রিলে এসে কমে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ চার মাসে আমানত কমেছে প্রায় ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। তার মানে মানুষ এখন টাকা না জমিয়ে আমানত তুলে নিচ্ছে।

শুধু আমানত নয়; সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগও কমে গেছে। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে জুলাই-মার্চ সময়ে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১১ হাজার ৩০২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। যা আগের অর্থবছরে (২০১৮-১৯) একই সময়ে এ বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৯ হাজার ৭৩৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। বছরের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে ৭২ শতাংশ।

একক মাস হিসাবেও সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে। গত বছরের মার্চ মাসে যেখানে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল চার হাজার ১৩০ কোটি ৭১ লাখ টাকা, সেখানে চলতি বছরে সেই বিক্রি অর্ধেকেরও বেশি কমে হয়েছে এক হাজার ৫৩৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মানুষের এখন আয়-রোজগার নেই। জমানো টাকা ভেঙে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকবে পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত। তিনি বলেন, এটা খুব শিগগিরই স্বাভাবিক হবে তা বলা যাচ্ছে না।

বর্তমানে ব্যাংকের সুদহার অনেক কমানো হয়েছে। এখন ৫ থেকে ৬ শতাংশ সুদ দিচ্ছে ব্যাংক। বিভিন্ন চার্জ কাটার পর আরও এক শতাংশ কমে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির চেয়ে যদি সুদ কম হয় তাহলে ব্যাংকের টাকা রাখা লোকসান। তাই মানুষ লাভজন বিনিয়োগ খুঁজছেন। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের সুদহার ব্যাংকের তুলনায় বেশি হলেও বিভিন্ন শর্ত কড়াকড়ি আরোপের কারণে আগের মতো সরাসরি বিনিয়োগ করতে পারছে না। এসব কারণে বিক্রি কমেছে।

গত কয়েক বছর সঞ্চয়পত্র অস্বাভাবিক বিক্রি বেড়ে যাওয়ার কারণে সরকার এ খাতের ওপর বেশ কয়েকটি বিধিনিষেধ আরোপ করে। আগে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য কোনো ক্রেতাকে কর শনাক্ত নম্বর বা টিআইএন জমা দিতে হতো না। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য টিআইএন জমা বাধ্যতামূলক করা হয়। একই সঙ্গে পুরো বিক্রি কার্যক্রমটি এখন অনলাইনের মাধ্যমে মনিটর করা হচ্ছে। এখন কেউ আর ইচ্ছে করলে সীমার অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র বা একই নামে বিভিন্ন জায়গা থেকে কিনতে পারবে না। আর এসব কারণেই বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা সঞ্চয়পত্র কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না বলে জানা গেছে।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ায় সাত বছর পর সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ সরকার অর্ধেকের বেশি কমিয়ে আনে।

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র খাতে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৭ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি কমিয়ে ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ১৫ হাজার ৭৬ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে।

এদিকে আসন্ন (২০২০-২১) অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বিশাল ঘাটতি মেটাতে এবার সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। চলতি অর্থবছরে বাজেটে যার লক্ষ্য ছিল ২৭ কোটি টাকা।

বাজেট বক্তৃতায় সঞ্চয়পত্র কেনা এবং বিক্রির ক্ষেত্রে আধুনিকায়নের কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সঞ্চয়পত্র কেনা এবং বিক্রি ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের উদ্দেশ্যে অর্থ বিভাগের উদ্যোগে ‘জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ চালুর মাধ্যমে সঞ্চয় স্কিমের বিক্রি, মুনাফা, নগদায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ডিজিটাইজেশন করা হয়েছে।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১:৪৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৭ জুন ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11388 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।