বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

বীমা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জনবল দিয়ে আরো শক্তিশালী করতে হবে-সাক্ষাৎকারে এম. এম. মনিরুল আলম তপন, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, বেঙ্গল ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স

  |   শুক্রবার, ০৪ মার্চ ২০২২   |   প্রিন্ট   |   273 বার পঠিত

বীমা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জনবল দিয়ে আরো শক্তিশালী করতে হবে-সাক্ষাৎকারে এম. এম. মনিরুল আলম তপন, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, বেঙ্গল ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স

বেঙ্গল ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে এনআরবি গ্লোবাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স নামে। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক সুদমুক্ত জীবন বীমা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০২১ সালে এই নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করা হয়। বেঙ্গল মনে করে, একটি আদর্শ জীবন বীমা কোম্পানির সফলতার চাবিকাঠি হচ্ছে অভিজ্ঞ, দক্ষ ও জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থাপনা এবং যুগোপযোগী গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করা।

কোম্পানিটিতে গত বছরের পয়লা এপ্রিল থেকে এই গুরুদায়িত্ব পালনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এম. এম. মনিরুল আলম তপন। দেশের লাইফ ইন্স্যুরেন্স খাতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সম্প্রতি ব্যাংক বীমা অর্থনীতিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নাসির আহমাদ রাসেল।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি : জাতীয় বীমা দিবসকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?

মনিরুল আলম তপন : জাতীয় বীমা দিবস আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য বিশাল অর্জন। বীমা দিবসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক বক্তব্য বীমা পেশার প্রতিটি বীমা কর্মীকে যেমন উজ্জীবিত করে, তেমনই গ্রাহকদের বীমার প্রতি আস্থা সৃষ্টিতে সাহায্য করে।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি : বেঙ্গল ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চাই।
মনিরুল আলম: জীবন বীমা সেবার মাধ্যমে দেশের বেকার জনগোষ্ঠীর একটি বৃহৎ অংশের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জীবন বীমার মাধ্যমে জনসাধারণকে আর্থিক ঝুঁকি মোকাবেলাসহ সঞ্চয়মুখী করা তথা ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক সকল পরিবারসহ দেশের অর্থনীতির ভীতকে মজবুত করাই বেঙ্গল ইসলামি লাইফের মূল লক্ষ্য।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি : জীবন বীমাখাতে গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বেঙ্গল ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কী কী উদ্যোগ নিয়েছে?

মনিরুল আলম: আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে গ্রাহকবান্ধব ও কর্মীবান্ধব বেঙ্গল ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এর অংশ হিসেবে আমরা একটি গ্রাহকবান্ধব অ্যাপস করেছি যার মাধ্যমে গ্রাহক তার পলিসি স্ট্যাটাস সম্পর্কে জানতে পারছেন। গ্রাহকরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রিমিয়াম জমা দিতে পারছেন। প্রিমিয়াম জমা দেয়ার সাথে সাথে একজন গ্রাহক এসএমএস, অ্যাপস অথবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তথ্য জানতে পারছেন। এই মুহূর্তে আমাদের কোন ক্লেইম, এসবি, ম্যাচিউরিটি, সারেন্ডার বাকী নেই। গ্রাহকদের সেবাপ্রাপ্তির প্রক্রিয়াকে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ করতে আমরা সব পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের সকল কর্মী এবং কর্মকর্তারাও অ্যাপসের মাধ্যমে তাদের পারর্ফম্যান্স, র‌্যাংকিং, আর্নিং, বিজনেস স্ট্যাটাসসহ সকল আপডেট তথ্য দেখতে পারছেন। সব মিলিয়ে বীমা খাতে গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং সেবা প্রাপ্তিকে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ করতে সব পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।

প্রচলিত রশিদের পরিবর্তে ইউনিফাইড ম্যাসেজিং প্লাটফর্ম -ইউএমপি হতে তৈরিকৃত ই-রশিদ ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের দেয়া নির্দেশনাও যথাযথ পরিপালনে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: বীমা খাতে আস্থা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রচলিত আইন কী যথেষ্ট, নাকি নতুন আইনের প্রয়োজন রয়েছে?

মনিরুল আলম তপন: আইন প্রণয়নের চেয়ে আইনের প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ। খাতসংশ্লিষ্ট বিদ্যমান আইন যথাযথভাবে প্রতিপালিত হলে বীমার উত্তরোত্তর সাফল্য আসবে।

দেশের অর্থনীতিতে বীমা খাত ব্যাপক অবদান রাখতে পারবে। অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে কর্মী সংখ্যার কারণে যাদের গ্রুপ জীবন বীমা বাধ্যতামূলক। এটি আইনে রয়েছে। কিন্তু মানা হচ্ছে না।
এ কারণেই নতুন আইনের চেয়ে বিদ্যমান আইনের বাস্তবায়ন জরুরি। বীমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। জনবল বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যাপ্ত জনবল আছে কিন্তু আইডিআরএ’র তা নেই।

বীমা খাতে আস্থা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রশিক্ষিত জনবলের প্রয়োজন। ইন্স্যুরেন্স একাডেমির মাধ্যমে বিশেষায়িত এই বীমা খাতের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করা দরকার। সার্টিফিকেট কোর্সগুলোও করানো উচিত।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: জীবন বীমার প্রচলিত পরিকল্পগুলোর বেশিরভাগই গ্রাহকের মৃত্যুপরবর্তীকালে পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা বা সুফলের কথা বলে। কিন্তু একজন গ্রাহক জীবদ্দশাতেই সুফল পেতে পারে এমন কী পরিকল্প আপনাদের রয়েছে?

মনিরুল আলম তপন: বেঙ্গল স্বাস্থ্য বীমা, গুরু ব্যাধি বীমার মাধ্যমে একজন গ্রাহক জীবদ্দশাতেই বীমার সুফল পেতে পারেন। এসব পরিকল্পের মাধ্যমে একজন গ্রাহকের বড় কোনো রোগ নির্ণয় হলে চিকিৎসা শুরুর আগেই চিকিৎসা ব্যয় পেতে পারেন। আরেকটি হচ্ছে হসপিটালাইজেশন ইন্স্যুরেন্স। হাসপাতালে ভর্তি হলে ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা ব্যয় পেতে পারেন। এ জন্য আমাদের একশ’টি হাসপাতালের নেটওয়ার্কিং রয়েছে। যেটি তিনশ’তে উত্তীর্ণ করার প্রচেষ্টা চলছে।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: টাকা ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের যে অনিশ্চয়তা, সেখান থেকে উত্তরণের পথ কী?

মনিরুল আলম তপন: অনেক কোম্পানিই পরে কমিটমেন্ট থেকে পিছিয়ে যায়, এতে আমিও আশাহত। টাকা ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহক, কর্মী, কোম্পানি সবারই দায়িত্ব রয়েছে। কর্মীকে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করা কোম্পানির দায়িত্ব। কিন্তু আমাদের এখানে এজেন্টকে প্রশিক্ষণ দেয়ার সুযোগ নেই। বিক্রয় কর্মীদের একটি ডিপ্লোমা কোর্স করারও সুযোগ নেই। ইংল্যান্ডে সেটি আছে। মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে হলে প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের দায়িত্ব হচ্ছে গ্রাহককে সঠিকভাবে বীমা সম্পর্কে বোঝানো। ওইসব শর্তগুলো জানিয়ে দেয়া, যেসব শর্ত না মানলে গ্রাহকের টাকা ফেরত পাওয়া অনিশ্চিত হতে পারে। কোম্পানির অ্যাকাউন্টে ফান্ড না থাকাও এই অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে। এখানেও অ্যাকচুয়ারি, অডিট ফার্ম, রেগুলেটরি সবার ভূমিকা আছে। একটি কোম্পানি হঠাৎ করে দেউলিয়া হতে পারে না। প্রতিবছর অডিট হচ্ছে। বীমা কোম্পানিকে আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে-নিজেদের অ্যাকাউন্টে যে টাকা জমা হচ্ছে এই টাকা পলিসি হোল্ডারের টাকা। যা লাভসহ ফেরত দিতে হবে। টাকাকে নিজের মনে করা যাবে না। গ্রাহককে ফেরত দেয়ার চিন্তা থেকে সরে যাওয়া যাবে না।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: বাংলাদেশের বীমা খাতের সম্ভাবনা কতটা?

মনিরুল আলম তপন: বেকারত্ব দূরীকরণে বাংলাদেশের বীমাখাতের ব্যাপক অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। এখানে সৎভাবে যথেষ্ট আয়ের সুযোগ রয়েছে। যে কারণে তরুণরা এটিকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারে। কিন্তু তার আগে বীমাকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। উন্নত বিশ্বে আর্থিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে, পেনশন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বীমার কোনো বিকল্প সমাধান নেই। কেউ কর্মজীবন থেকে অবসরে গেলেও আর্থিক নিরাপত্তা থাকতে হয়। সেটি বীমা দিচ্ছে।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: বীমা খাতের চ্যালেঞ্জগুলো আসলে কী?

মনিরুল আলম তপন: প্রথমত বীমা খাতটি এখনো গ্রাহকবান্ধব নয়। বীমাকে গ্রাহকবান্ধব করতে হবে। কর্মীদের ভবিষ্যত নিরাপত্তা থাকতে হবে। কর্মী বান্ধব, গ্রাহক বান্ধব ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলতে হবে।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: বেঙ্গল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বর্তমান ব্যবসায়িক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাই।
মনিরুল আলম তপন: দেশের ৪৫ টি জেলায় বর্তমানে আমাদের কার্যক্রম রয়েছে। ৮০ টি এজেন্ট পয়েন্ট, ২৩ টি সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে আমাদের পাঁচ হাজারের অধিক কর্মী মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। বর্তমানে আমাদের লাইফ ফান্ড প্রায় সোয়া ৩ কোটি টাকা।

ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতিকে সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৭:৪১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৪ মার্চ ২০২২

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।