বিবিএ নিউজ.নেট | বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২২ | প্রিন্ট | 223 বার পঠিত
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানির (বেক্সিমকো) গ্রীন সুকুক বন্ডের লেনদেন শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) ডিএসইর নিকুঞ্জ ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সুকুকের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। ডিএসই-এর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, বর্তমানে আমাদের শেয়ারবাজারে বড় দুটি সমস্যা রয়েছে। সমস্যা দুটির মধ্যে একটি কাঠামোগত সমস্যা। যা নিয়ে এখন কমিশন কাজ করছে। আর দ্বিতীয় বড় সমস্যা ম্যাচিউরড বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লেনদেনের ধরণ সংক্রান্ত সমস্যা। ম্যাচিউরড বাজারে প্রাতিষ্ঠানিকদের লেনদেনের পরিমাণ বেশি হয় এবং রিটেইলারদের (সাধারণ বিনিয়োগকারী) কম হয়। এমনকি সেখানে রিটেইলাররা ফান্ডের মাধ্যমে লেনদেন করেন। কিন্তু আমাদের দেশে ঠিক উল্টো। যার কারণে দেশের শেয়ারবাজারে উত্থান-পতন বেশি হয়।
তিনি বলেন, এফডিআর সুদহার আমাদের সুকুক থেকে ৯ শতাংশ হারে দেওয়া হবে, যা এখন আছে ৬ শতাংশের নিচে। এ কারণে এটি নিয়ে খুবই আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু আমরা পাবলিকের কাছ থেকে সেভাবে সাড়া পাইনি। সাড়া না পাওয়ার পেছনে সুকুকটির বিষয়ে ভালোভাবে তুলে ধরতে পারিনি। তবে সুকুকে প্রাতিষ্ঠানিকদের অংশগ্রহণ খুব ভালো ছিল।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে আরোপিত সুদহার ১৭ থেকে ১৮ শতাংশকে বেশি বলে মনে করতেন। এই বেশি সুদহারের কারণে খেলাপি ঋণ বেশি হয়। যার কারণে উনি সুদহার কমানোর উদ্যোগ নেন। পরবর্তিতে দেশের সুদহারকে কমিয়ে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ করে দেন।
অনুষ্ঠানে বিএসইসি চেয়্যারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া প্রথম প্রাইভেট কোম্পানি হল বেক্সিমকো গ্রুপ। বাংলাদেশের প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে প্রথমে তারা এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের লাইসেন্স পাই। এরপর থেকেই ওনাদের যোগ্য যারা নেতৃত্বে আছেন, তারা সবাই এই কোম্পানিটিকে একটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, আজকে এই গ্রুপটিই প্রথম সাহসিকতার সঙ্গে নতুন আরেকটি প্রোডাক্ট নিয়ে আসলো। আমাদের আজকের প্রধান অতিথি (সালমান এফ রহমান) একজন খুবই ইনোভেটিভ এবং সাহসী ব্যবসায়ী। তিনি নতুন নতুন ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট নিয়ে আসতে খুবই পছন্দ করেন। খালি ক্যাপিটাল মার্কেট নয়, তিনি অন্যান্য আরও অনেক কিছু করার চেষ্টা করছেন। যেগুলো বাংলাদেশে প্রথম আসতে যাচ্ছে খুব শীঘ্রয়।
ডিএসই-এর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান, বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়ন সারাবিশ্বের রোল মডেল হিসেবে পরিচয় পাচ্ছে। যা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু সবকিছুর উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের শেয়ারবাজার তেমন উন্নত হয়নি। অর্থনৈতিকভাবে যারা আমাদের দেশ থেকে পিছিয়ে আছে তাদের শেয়ারবাজারও আমাদের থেকে অনেক উন্নত। তাই সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি শেয়ারবাজারকেও উন্নত করতে হবে। আর এজন্য সিস্টেম পরিবর্তন করে সবাই একসাথে কাজ করা জরুরি।
এর আগে পাঁচ বছর মেয়াদি সিকিউরড কনভার্টেবল অথবা রিডেম্বল অ্যাসেট ব্যাকড এই সুকুক বিএসইসি থেকে অনুমোদন পাওয়া প্রথম গ্রিন সুকুক। তিন হাজার কোটি টাকার এই গ্রিন সুকুকের ৭৫০ কোটি টাকা আইপিওতে উত্তোলনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। বাকি দুই হাজার ২৫০ কোটি টাকা প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর বেক্সিমকো তিন হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ডের মধ্যে পাবলিক অফারে ৭৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য গত বছরের ১৬ আগস্ট চাঁদা সংগ্রহ শুরু করে। যার জন্য প্রথম দফায় নির্ধারিত সর্বশেষ সময় ছিল ২৩ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত।
প্রথম দফায় বন্ডটির চাহিদার ৭৫০ কোটি টাকার বিপরীতে ৭১ জন বিনিয়োগকারী আবেদন করেন। এই বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আবেদন আসে ৫৫ কোটি ৬১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার বা ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ।
চাহিদার মাত্র ৭ শতাংশের কিছু বেশি আবেদন পড়ায় সাবস্ক্রিপশনের বা আবেদনের সময় ১০ কার্যদিবস বাড়ায় বেক্সিমকো, যা শেষ হয় ৬ সেপ্টেম্বর। এ দফাতেও বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে খুব একটা সাড়া মেলে না। মাত্র একজন বিনিয়োগকারী ১০ লাখ টাকার আবেদন করেন। এর মাধ্যমে বন্ডটিতে মোট আবেদন পড়ে ৫৫ কোটি ৭১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, যা চাহিদার (৭৫০ কোটি টাকা) মাত্র ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
প্রথম দিনে ৬ হাজার ৬ বারে সুকুকটির মোট ৩২ লাখ ৩২ হাজার ৭৭২টি ইউনিট লেনদেন হয়েছে। সর্বোচ্চ ১১০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৯৯ টাকা ৫০ পয়সায় এসব ইউনিট লেনদেন হয়েছে। টাকার অঙ্কে মোট লেনদেন হয়েছে ৩৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
Posted ১:৪৬ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy