নিজস্ব প্রতিবেদক | শুক্রবার, ০১ মে ২০২০ | প্রিন্ট | 517 বার পঠিত
মহামারি করোনাভাইরাসের সারা বিশ্বেই চলছে লকডাউন। এতে বন্ধ রয়েছে অফিস এববং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যার নেতিবাচক প্রভাবে অচল হয়ে পড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। এর থেকে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ব্যবসা বন্ধ থাকায় একদিকে সরকারের আয় কমেছে এবং অপরদিকে খরচ বেড়েছে। তাই ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে ব্যাংক খাত থেকে অস্বাভাবিক হারে ঋণ নিচ্ছে সরকার। বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ঋণ নেবে বলে ঠিক করেছিল। কিন্তু গেল এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ৫৭ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা বা ২২ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার প্রতিবছর বাজেট ব্যয় ব্যবস্থাপনার জন্য অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক খাত থেকে অর্থ ধারের লক্ষ্য ঠিক করে। কিন্তু চলমান করোনা সংকটে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ, তাই রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। অন্যদিকে নিয়মিত ব্যয়ের সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনায় ত্রাণ বিতরণ, চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ব্যয়। ফলে বাড়তি ব্যয় জোগাতে ব্যাংক ঋণই সরকারের ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত সাময়িক হিসাবে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ৫৭ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা বা ২২ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। এতে ব্যাংকিং খাত থেকে নেয়া সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণের স্থিতি বা পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ২৫ কোটি টাকা।
২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটের আকার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। ব্যয় খাতে বরাদ্দ ৩ লাখ ২০ হাজার ৪৬৯ কোটি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি ধরা হয় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। এদিকে বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ধার নেয়ার পরিকল্পনা করে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়।
এদিকে বিভিন্ন পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে সঞ্চয়পত্রের সুদহার না কমিয়ে এ খাতে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সঞ্চয়পত্র কেনায় জুড়ে দেয়া হয়েছে নানা শর্ত। ফলে এর বিক্রি কমেছে। যার কারণে সঞ্চয়পত্রে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ১২ হাজার কোটি টাকায় নামানো হয়েছে। জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ পেয়েছে মাত্র ৭ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছর যেখানে সঞ্চয়পত্র থেকে ৪৭ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা ঋণ নেয় সরকার।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে এনবিআরের মাধ্যমে মোট রাজস্ব আহরণের মূল লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সাময়িক হিসেব অনুযায়ী জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মোট আদায় হয়েছে এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এই সাত মাসে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই লাখ দুই হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আহরণ প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা কম। করোনাভাইরাসের কারণে চলমান পরিস্থিতিতে রাজস্ব আহরণ ব্যাপক হারে কমে যাবে। ফলে সরকারের ব্যয় মেটাতে আগামীতে ঋণ নির্ভরতা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যংকবিমাঅর্থনীতি/এসএ/খান
Posted ১১:৫৬ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ মে ২০২০
bankbimaarthonity.com | saed khan