নিজস্ব প্রতিবেদক | সোমবার, ১৫ জুন ২০২০ | প্রিন্ট | 890 বার পঠিত
করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাংকের কর্মীদের বেতন-ভাতা ও ইনক্রিমেন্ট কমানোর পরামর্শ দিয়েছে ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। এজন্য সংগঠনটি ১৩ দফা পরামর্শ দিয়ে সব ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে।
রোববার (১৪ জুন) সংগঠনের সব সদস্য ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিএবির চিঠিতে ১৩ দফা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এসব পরামর্শের মধ্যে রয়েছে-
০১. মাসিক ৪০ হাজার টাকার বেশি গ্রস বেতনধারী কর্মকর্তাদের বেতন ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানো।
০২. ব্যাংকে সব ধরনের প্রমোশন, ইনক্রিমেন্ট ও ইনসেনটিভ বোনাস বন্ধ রাখা।
০৩. ব্যাংকে চলমান নিয়োগসহ সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ রাখা।
০৪. নতুন শাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং ও সাব-ব্রাঞ্চ বন্ধ রাখা।
০৫. সকল প্রকার ঋরীবফ অংংবঃ কেনা বন্ধ রাখা।
০৬. সব ধরনের স্থানীয় ও বিদেশি প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখা।
০৭. সব বিদেশ ট্যুর বন্ধ রাখা।
০৮. সব ধরনের সিএসআর, অনুদান ও চ্যারিটি বন্ধ রাখা।
০৯. পত্রিকা (প্রিন্ট ও অনলাইন) ও টেলিভিশনে সব ধরনের বিজ্ঞাপন বন্ধ রাখা।
১০. সকল কাস্টমার গেট টুগেদার বন্ধ রাখা।
১১. অফিসার এক্সিকিউটিভ গেটটুগেদার ও ম্যানেজার কনফারেন্স বন্ধ রাখা।
১২. বড় ধরনের ব্যয়, যেমন-হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ইত্যাদি কেনা সীমিত পর্যায়ে রাখা।
১৩. অন্যান্য ব্যয় সীমিত পর্যায়ে রাখা।
বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাত নানা সমস্যার মুখে পড়ায় এসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে বেশ কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে-ব্যাংকের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়া, বিনিয়োগের উপর সুদের হার কমে যাওয়া, রিকভারি শূন্য অবস্থায় চলে আসা, ওভারডিউ বাড়তে থাকা, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কমে যাওয়া ইত্যাদি।
চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে এপ্রিল ও মে মাসে ব্যাংক কর্মীদের দেওয়া প্রণোদনা এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যাংক কর্মীদের চিকিৎসার ব্যয়, মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া ইত্যাদি বিষয়কেও ব্যাংকের বর্তমান সংকটের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
চিঠিটি সংগঠনের নিজস্ব লেটারহেড প্যাডে দেওয়া হলেও, পরামর্শগুলো দেওয়া হয়েছে সাদা কাগজে। এছাড়া সংগঠনের নির্বাহী কমিটির কোনো বৈঠকের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, না-কি সংগঠনের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার নিজের এখতিয়ার বলে দিয়েছেন, তার কোনো উল্লেখ নেই চিঠিতে। অবশ্য চিঠিতে তার স্বাক্ষর নেই, আছে বেতনধারী সেক্রেটারি জেনারেলের সই।
এদিকে এই চিঠিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মীদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাদের মতে, ব্যাংকে সমস্যা কিছু হয়ে থাকলে সেগুলো হচ্ছে ঋণ বিতরণে মালিকদের হস্তক্ষেপ, যোগসাজশের মাধ্যমে এক ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ, পর্যাপ্ত জামানত না থাকা সত্ত্বেও পছন্দের পার্টিকে ঋণ দিতে বাধ্য করা ইত্যাদি। এসব কারণে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, মালিকদের অনাচারের কারণে বিভিন্ন ব্যাংক সংকটে পড়লেও সব সময় মাশুল গুণতে হয় কর্মীদের। এমন অন্যয্য ও অনৈতিক চর্চা চলছে ব্যাংকগুলোতে। বিএবির চিঠির মধ্য দিয়ে আবারও সেটি মোটা দাগে ফুটে উঠেছে।
তিনি বলেন, চিঠিতে খেলাপী ঋণ আদায় কিংবা বর্তমানে খেলাপী হওয়া ঠেকাতে করণীয় সম্পর্কে একটি পরামর্শও দেওয়া হয়নি। ব্যয়বহুল বিলাসী শাখাগুলোর ব্যয় কমিয়ে কম খরচের ভবনে স্থানান্তরের কথাও বলা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের কর্মীদের বেতন কমানো হবে। কিন্তু এর মালিকরা যে অবৈধভাবে নানা সুযোগ-সুবিধা নেন, ব্যাংকের টাকা বিলাসী গাড়িতে চড়েন, বিদেশ গিয়ে সবচেয়ে দামী হোটেলে থেকে ব্যাংককে তার বিল পরিশোধে বাধ্য করেন-এসব অনাচার বন্ধ করতে পারবে কী বিএবি?
উল্লেখ, গত সপ্তাহে বেসরকারি সিটি ব্যাংক লিমিটেড তাদের সব কর্মীর বেতন ১৬ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেয়। এছাড়া এবি ব্যাংক লিমিটেডও তাদের কর্মীদের বেতন ৫ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বলে জানা গেছে। এই দুই ব্যাংককে দেখে অন্য ব্যাংকগুলোও বেতনভাতা কাটছাঁটে উৎসাহী হয়ে উঠতে পারে, এমনিতেই এমন আশংকা করছিলেন ব্যাংক কর্মীরা। এমন পরিস্থিতিতে বিএবির চিঠিকে বেতন কমানোর ক্ষেত্রে উস্কানি হিসেবে দেখছেন তারা।
Posted ৭:৩৪ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৫ জুন ২০২০
bankbimaarthonity.com | saed khan