বিবিএনিউজ.নেট | মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০১৯ | প্রিন্ট | 705 বার পঠিত
ব্যাংক খাতের অন্যতম সঞ্চালক হিসেবে বিবেচিত মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় গ্রাহকের সংখ্যায় হঠাৎ অবনতি দেখা দিয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে এ খাতের গ্রাহক সংখ্যা কমেছে ৩৩ লাখ। অবশ্য গ্রাহক সংখ্যা কমলেও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মোট লেনদেন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মাত্র এক মাসেই (এপ্রিল) ৩৪ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
২০১৯ সালের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসে যথাক্রমে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার ৬২৬ কোটি, ৩১ হাজার ৫১৩ কোটি, ৩৪ হাজার ৬৭৮ কোটি ও ৩৪ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। কিন্তু মাত্র দুই বছর আগেও ২৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাসিক লেনদেন। মোবাইল রিচার্জ, বিদু্যৎ বিল পরিশোধ, টাকার আদান-প্রদান, বিমা প্রিমিয়াম জমাসহ নানামুখী ব্যবহারের সুযোগ থাকায় বেড়েই চলেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এপ্রিলভিত্তিক হিসাব অনুযায়ী, দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ৬ কোটি ৮৩ লাখ। যা আগের মাসে (মার্চ) ছিল ৬ কোটি ৭৫ লাখ। তবে নিবন্ধিত গ্রাহকদের মধ্যে অনেক হিসাবই সক্রিয় নেই। এপ্রিল শেষে প্রায় ৩৩ লাখ সক্রিয় গ্রাহকের সংখ্যা কমে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে মোবাইলের সক্রিয় গ্রাহক রয়েছে ২ কোটি ৯১ লাখ। এক মাস আগেও এর সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ২৪ লাখ। এ মাসে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা লেনদেন করেছেন গ্রাহকরা। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মোট এজেন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ২৮ হাজার ৫৬৩ জন।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যেসব কাজ করা যায় সেগুলো হলো, রেমিট্যান্স পাঠানো, ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউট, একজনের অ্যাকাউন্ট থেকে অন্যজনের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো, ইউটিলিটি বিল দেওয়া, মোবাইল ফোনের এয়ার টাইম কেনা, পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে মার্চেন্ট পেমেন্ট, সরকারি প্রতিষ্ঠানে বেতন দেয়া, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা, বিমা প্রিমিয়াম, ডিপিএস দেয়া ইত্যাদি।
সুবিধাবঞ্চিতদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং চালুর অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরের বছর পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু হয়। ১৯৯৯ সালে ইউরোপিয়ান ব্যাংকে সর্বপ্রথম মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু হয়। মূলত, স্মার্টফোন উদ্ভাবনের পরে মোবাইল ওয়াপ (ওয়্যারলেস অ্যাপিস্নকেশন প্রটোকল) পদ্ধতির মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং শুরু হয়।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা মোবাইল অপারেটর ভিত্তিক হলেও বাংলাদেশে এ সেবা ব্যাংকভিত্তিক। ব্যাংকগুলো বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ সেবা দিচ্ছে। দেশের বর্তমানে ৫৮টি ব্যাংকের মধ্যে ২৯টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন নিয়েছে। তবে বর্তমানে কার্যক্রম আছে ১৬টি ব্যাংকের।
উল্লেখ্য, গত ২০ মে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনে সীমা ৩ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে যেখানে দিনে ২ বারে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা ক্যাশইন করা যেতো। এখন তা বাড়িয়ে দিনে ৫ বার সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা ক্যাশইন করা যাবে। আর একজন গ্রাহক তার ব্যক্তি মোবাইল হিসেবে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা স্থিতি রাখতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের সীমা বাড়ানোর ফলে হুন্ডি তৎপরতা আরো বেড়ে যেতে পারে। কমে যেতে পারে রেমিট্যান্স প্রবাহ।
জানা গেছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে পাচারের প্রমাণ পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বিদেশ থেকে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বিপুল পরিমাণ কমে যায়। একই সাথে অবৈধ পথে বিশেষ করে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে মোবাইলে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসার প্রবণতা বেড়ে যায়। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে এমন অভিযোগের সত্যতা পায়।
বৈধপথে বিশেষ করে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি এক সার্কুলারের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেনের সীমা কমিয়ে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় দিনে ২ বারে একজন ব্যক্তির ক্যাশইন করার অনুমতি দেয়া হয় সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা এবং মাসে সর্বোচ্চ ২০ বারে এক লাখ টাকা। আর একজন ব্যক্তির দিনে ২ বারে ক্যাশআউট করার অনুমতি দেয়া হয় সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা এবং মাসে ১০ বারে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন নির্দেশনার পর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হুন্ডি তৎপরতা অনেকাংশে কমে এসেছিল। আর বৈধ পথে বিশেষ করে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু মাত্র ২ বছরের মাথায় বাংলাদেশ ব্যাংক আবারো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন সীমা ৩ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিলো। পুনর্নির্ধারিত সীমা অনুযায়ী এখন একজন ব্যক্তি দিনে সর্বোচ্চ ৫ বারে ৩০ হাজার টাকা ক্যাশইন করতে পারবে এবং মাসে ২৫ বারে করতে পারবে ২ লাখ টাকা। আর দিনে ৫ বার সর্বোচ্চ ক্যাশআউট করা যাবে ২৫ হাজার টাকা এবং মাসে ২০ বার দেড় লাখ টাকা ক্যাশআউট করা যাবে। একজন গ্রাহক তার অ্যাকাউন্টে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা রাখতে পারবেন। আর ৫ হাজার টাকার বেশি লেনদেনে পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। একই জাতীয় পরিচয়পত্র একই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে একটির বেশি অ্যাকাউন্ট রাখা যাবে না। গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ একটি বাদে অন্যগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। এ ছাড়া এজেন্টরা এজেন্ট অ্যাকাউন্টে লেনদেন করতে পারবেন না। একজন এজেন্ট দিনে সর্বোচ্চ ৫ বার নিজের অ্যাকাউন্টে নগদ অর্থ জমা দিতে পারবেন।
Posted ১২:৩৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed