শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেয়ারবাজারে ১ কোটি বিনিয়োগ করে ১৪ কোটি টাকা মুনাফা মতিউরের!

  |   শুক্রবার, ২১ জুন ২০২৪   |   প্রিন্ট   |   68 বার পঠিত

শেয়ারবাজারে ১ কোটি বিনিয়োগ করে ১৪ কোটি টাকা মুনাফা মতিউরের!

১২ লাখ টাকায় কোরবানির এক ছাগল কিনে ইফাত নামে এক যুবক দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিল ট্রাইব্যুনালের সভাপতি মতিউর রহমানের নাম জড়িয়ে যায়।

ইফাতের দাবি, বাবা মতিউর রহমানকে দেওয়ার জন্যই তিনি এই ছাগল কিনছেন। বিষয়টি সারাদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

এদিকে ছাগলকাণ্ডে আলোচনায় আসা কাস্টমস কর্মকর্তা মতিউর রহমান দাবি করেছেন, দেশের শেয়ারবাজার থেকে তিনি প্রচুর টাকা কামিয়েছেন। তিনি নিজেকে একজন অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী বলেও দাবি করেছেন।

গতকাল (বুধবার) একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষতকারে তিনি এই দাবি করেন। শুধু মেয়ের নামে বিনিয়োগ করেই ১ কোটি টাকায় ১৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

তবে নিজেকে দক্ষ বিনিয়োগকারি দাবি করলেও তার বক্তব্যের মধ্যে সুবিধাভুগী লেনদেন নিষিদ্ধকরণ আইন (বাংলাদেশ সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ইনসাইডার ট্রেডিং) রুল) লংঘন এবং কারসাজির আভাস পাওয়া গেছে।

ছাগলকাণ্ডে নাম জড়িয়ে যাওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন এই কাস্টমস কর্মকর্তা। ছেলের এত টাকার উৎস এবং তার নিজের দুর্নীতি নিয়েও নানামুখী আলোচনা শুরু হয় সারাদেশে।

এমতাবস্থায় ইফাত তার সন্তান নয় বলে একাধিক গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন মতিউর। এমনকি ইফাত তার আত্মীয় বা পরিচিতও নয় বলেও দাবি তোলেন। কিন্তু তাতেও বিতর্কের অবসান না হওযায় তার ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ মিশন নিয়ে এগিয়ে আসে দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন।

দীর্ঘ এক সাক্ষাতকারের মাধ্যমে তাকে নানাভাবে প্রমোট করা ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, যার মাধ্যমে তিনি তার বিপুল সম্পদের জাস্টিফিকেশন তুলে ধরতে পারেন।

টেলিভিশনে দেওয়া ওই সাক্ষতাকারে মতিউর রহমান দাবি করেন, তিনি বুদ্ধি ও পরিশ্রমের মাধ্যমে শেয়ারবাজারকে কাজে লাগিয়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

তার দাবি, তিনি দুর্বল কিন্তু সম্ভাবনাময় কোম্পানির মালিকদের সাথে বসে ওই কোম্পানির উন্নয়নের পরিকল্পনা করেন। ওই পর্যায়ে তিনি কম দামে বিপুল সংখ্যক শেয়ার কিনে নেন, পরে কোম্পানি কিছুটা ভাল করলে উচ্চ দামে ওই শেয়ার বিক্রি করে বিপুল মুনাফা করেন।

ট্যানারি খাতের কোম্পানি ফরচুন সু’র মালিকরা তার কাছের মানুষ জানিয়ে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তাকে ওই কোম্পানির মালিকরা ৮ টাকা দামে শেয়ার দিয়েছিল। পরে তিনি ৫৪ টাকা দামে ওই শেয়ার বিক্রি করে অনেক মুনাফা করেছেন।

তিনি আরও দাবি করেন, তিনি একটি জমি বিক্রি করে সাড়ে ৪ কোটি টাকা পেয়েছিলেন। পরে ওই টাকা থেকে শেয়ারবাজারে ২ কোটি টাকা নিজের নামে এবং ১ কোটি টাকা তার মেয়ে ফারহানা রহমানের নামে বিনিয়োগ করে শুধু তার মেয়ের বিনিয়োগ থেকেই তিনি ১৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছেন।

আলোচিত মতিউর এক কোটি টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে ১৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছেন। অর্থাৎ মুনাফার হার ১৪০০ শতাংশ। নিজের নামে করা বিনিয়োগ থেকে কত লাভ হয়েছে তা প্রকাশ না করলেও অনুমান করা যায় ২০/২৫ কোটি টাকার কম নয়।

এদিকে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শেয়ারবাজারে মন্দা চলছে। এই বাজারে সিংহভাগ বিনিয়োগকারী বিপুল লোকসানের শিকার হলেও মতিউরের এই অবিশ্বাস্য মুনাফা অর্জনের বিষয়টি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কোনো ধরনের কারসাজি ছাড়া স্বাভাবিক বিনিয়োগ থেকে এমন মুনাফা সম্ভব নয়। কেননা বড় বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, যাদের রয়েছে দক্ষ ও পেশাদার রিসার্চ টিম, সেসব প্রতিষ্ঠানও এই সময়ে গেড় ২০ শতাংশ মুনাফা করতে পারেনি।

এদিকে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, মতিউর ইফাতকে তার সন্তান বলে অস্বীকার করলেও মতিউরই ইফাতের বাবা। এদের মধ্যে ইফাতের মায়ের ফুফাতো ভাই ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী জোরালো সাক্ষ দেন।

নিজাম উদ্দিন হাজারী একাধিক গণমাধ্যমকে জানান, ইফাত তার মামাতো বোনের সন্তান। আর মতিউর রহমানই তার বাবা।

জানা গেছে, মতিউর রহমান দুটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রীর নাম লাইলা কানিজ। যিনি বর্তমানে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন।

অন্যদিকে দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম শাম্মি আখতার শিবলী। মুশফিকুর রহমান ইফাত দ্বিতীয় ঘরের সন্তান। ফেসবুকেও বাবা মতিউর রহমানের সঙ্গে ইফাতের যুগলবন্দি বেশ কয়েকটি ছবিও দেখা গেছে।

 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন মতিউর রহমান। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনে (পিকেএসএফ) কর্মজীবন শুরু হয় তার। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত কাজ করেন সেখানে।

সর্বশেষ উপ-ব্যবস্থাপক পদ থেকেই ১৯৯৩ সালের ১ এপ্রিল যোগ দেন কাস্টমস বিভাগে। ২০১৫ সালে পদোন্নতি পেয়ে কমিশনার হন তিনি।

২০২১ সালের ১২ আগস্ট তাকে কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে সদস্য (টেকনিক্যাল) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৭:৪৫ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২১ জুন ২০২৪

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11340 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।