বিবিএনিউজ.নেট | সোমবার, ২৭ মে ২০১৯ | প্রিন্ট | 654 বার পঠিত
আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদহারে পরিবর্তন আসছে না। আবার সঞ্চয়পত্র থেকে প্রাপ্ত সুদ আয়ের ওপর করহারও বাড়ছে না। যদিও সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমানো ও আয়ের ওপর করহার বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এমন প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সঞ্চয়পত্র অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের আওতাধীন। তাই এ বিষয়ে এনবিআরের কাছ থেকে মতামত নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। আমরা সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো এবং এ থেকে প্রাপ্ত সুদ আয়ের ওপর করহার বিনিয়োগের কয়েকটি ধাপে বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, সঞ্চয়পত্রের ওপর অধিকাংশ অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী নির্ভরশীল।
এর আগে গত ২৫ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক মতবিনিময় সভায় বলেছিলেন, আসন্ন বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো হবে না। তবে কেউ যেন এটার অপব্যবহার করতে না পারে, সে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সঞ্চয়পত্র নিয়ে সরকারের অবস্থানের বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বর্তমান সময়ে সরকারি পেশাজীবীরা ভালো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। অবসরপ্রাপ্তদেরও ভালো পেনশন দেয়া হচ্ছে। তাই তাদের সঞ্চয়পত্রনির্ভর হওয়া উচিত নয়। আর এত উচ্চসুদ পৃথিবীর কোথাও নেই। সঞ্চয়পত্রে উচ্চসুদের হার আর্থিক খাতকেও অস্থিতিশীল করেছে। তাই আর্থিক খাতের কথা বিবেচনায় নিয়ে গ্রহণ করা উচিত।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদহার বা করহারে কোনো পরিবর্তন আসছে না। আসন্ন বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ করার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। চলতি হিসাব বছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণের লক্ষ্য ছিল ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি পূরণে অন্যান্য উেসর পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ করে সরকার।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রকৃত উপকারভোগীদের কাছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করতে ১ জুলাই থেকে এর বিক্রয় কার্যক্রম অটোমেশন করা হবে। অটোমেশনে সঞ্চয়পত্র কিনতে গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ই-টিন সার্টিফিকেট দিতে হবে। ৫০ হাজার টাকার বেশি অর্থের সঞ্চয়পত্রের টাকা পরিশোধ করতে হবে ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে। এজন্য সঞ্চয়কারীর ব্যাংক হিসাব নম্বর, মোবাইল নম্বর দিতে হবে। প্রকৃত উপকারভোগীদের পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রে কালো টাকা এবং অতিরিক্ত বিনিয়োগ বন্ধ করতেই অটোমেশন পদ্ধতিতে বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অটোমেশন প্রক্রিয়া সারা দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরের কার্যালয়ে শুরু হবে। এছাড়া ১ জুলাই থেকে অটোমেশনের বাইরে সঞ্চয়পত্র লেনদেন করা যাবে না এমন শর্ত রেখে প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ব্যবস্থায় গ্রাহক সরাসরি ব্যাংক হিসাবে সঞ্চয়পত্রের সুদ ও আসল পাবেন। অর্থ বিভাগ ‘সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ: অগ্রাধিকার কার্যক্রমগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা’ শীর্ষক যে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে, তার আওতায় ‘জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্প অনলাইন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি’ নামের এ কর্মসূচি নেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি, পরিসংখ্যান, ব্যুরো এবং অডিট ও আইন) মোহাম্মদ হাবীবুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের ক্রেতাদের কোনো কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার নেই। এটা তৈরির কাজ চলছে। বর্তমানে কোনো ব্যক্তি সীমাতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র কিনছেন কিনা, সেটি কিছু ক্ষেত্রে জানার সুযোগ আছে। অটোমেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকবে না।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৭৩৩ কোটি ২১ লাখ টাকার। গত অর্থবছরের এ সময়ে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৬ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা।
আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ বলা হয়।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭৮ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭৫ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে সব সঞ্চয়পত্রে সুদহার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হয়েছিল। বর্তমানে পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। একক নামে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা এবং যৌথ নামে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়। প্রতিষ্ঠানের নামে এক বিনে (বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার) সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়।
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এর মেয়াদ তিন বছর। একক নামে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা এবং যৌথ নামে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়। পরিবার সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর মেয়াদ পাঁচ বছর। একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর মেয়াদ পাঁচ বছর। প্রাপ্ত আনুতোষিক ও ভবিষ্য তহবিলের অর্থ মিলিয়ে একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়। বর্তমানে টিন থাকলে সঞ্চয়পত্র থেকে প্রাপ্ত মুনাফার ওপর ১০ শতাংশ কর দেয়া লাগে। আর টিন না থাকলে ১৫ শতাংশ কর প্রযোজ্য হয়।
Posted ৩:৪০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৭ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed