নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট | 191 বার পঠিত
শুধু ই-কমার্সই নয়, পর্যায়ক্রমে দেশের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ইউনিক বিজনেস আইডেনটিফিকেশনের (ইউবিআইডি) আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারের পক্ষে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটর করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে সুপারিশ পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শুধু ই-কমার্সই নয়, পর্যায়ক্রমে দেশের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ইউবিআইডি’র আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে এতে।
ইউবিআইডি’র ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ইস্যু করা বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর (বিআইএন) নেওয়া বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি ইউবিআইডি’র সঙ্গে বিআইএন ও ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বরও (টিআইএন) সংযুক্ত করা হবে। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত গড়ে উঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে রাজস্ব আদায় সহজ হবে।
দেশের ই-কমার্স ব্যবসায়ে শৃঙ্খলা আনতে ইউবিআইডি দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে, সামগ্রিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রীয় ডেটাবেইজ গড়ে তুলে, এক জায়গা থেকেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে মনিটর করা ও রাজস্ব আয় বাড়াতে সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেই এখন এই আইডির আওতায় আনার সুপারিশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে ইউবিআইডি’র রূপরেখা ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, “সকল ব্যবসাকে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করার পাশাপাশি কর, ভর্তুকিসহ সব ধরনের আর্থিক সুবিধার আওতায় আনা ও সব ধরনের স্বতন্ত্র ব্যবসার জন্য একটি কেন্দ্রীয় বিজনেস প্রোফাইল তৈরি করে একটি ‘অনন্য ব্যবসা শনাক্তকরণ প্লাটফর্মের’ আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে।”
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম ধাপে চলতি ডিসেম্বর থেকে শুধু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইউবিআইডি নিবন্ধনের আওতায় আনার কাজ শুরু করা হবে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পরিচালিত ব্যবসাগুলোকেও এই নিবন্ধন নিতে হবে। সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যে এ ধাপটি শেষ হবে।
প্রথম ধাপের অভিজ্ঞতার আলোকে প্রয়োজনে প্রক্রিয়ায় সংশোধনী এনে, দ্বিতীয় ধাপে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্ম সমূহের দপ্তরে (আরজেএসসি) নিবন্ধিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইউবিআইডির আওতায় আনার কাজ শুরু হবে। সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে এ ধরনের কোম্পানিগুলোর নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে।
আরজেএসসির তথ্য অনুযায়ী, গত জুন পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৫৯ হাজার ১১৪টি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন দিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি রয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৮২৫টি, বিদেশি ফার্ম ৯৭৪টি, অংশীদারি ফার্ম ৫১ হাজার ৩৩২টি, ট্রেড অর্গানাইজেশন ১ হাজার ১৪৩টি, সোসাইটি ১৫ হাজার ২৫৩টি ও পাবলিকি লিমিটেড কোম্পানি রয়েছে ৩ হাজার ৫৮৭টি।
তৃতীয় ধাপে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসারত সকল প্রতিষ্ঠানকে ইউনিক বিজনেস আইডেনটিটির আওতায় আনা হবে। পরবর্তী এক বছরের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বর্তমানে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন এসব প্রতিষ্ঠান ট্রেড লাইসেন্স দিলেও, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো মনিটর করার কোনো ব্যবস্থা নেই এখানে।
চতুর্থ ধাপে এনবিআরের অধীনে বিআইএন ও টিআইএন সংযোগ করার পরিকল্পনার কথা বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ইউবিআইডি সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজের সাহায্য নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে এতে। সকল ইউবিআইডি সনদ ও ব্যবসা সংক্রান্ত সকল তথ্য সংরক্ষিত থাকবে কেন্দ্রীয় ডেটাবেজে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘নিবন্ধিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আইনানুসারে পরিচালিত হচ্ছে কিনা, তা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত মনিটর করা আবশ্যক। মনিটরিং এর জন্য প্রাথমিকভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। তবে, সার্বিক মনিটরিংয়ের জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ব্যাংক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এনবিআরকে ইউবিআইডির সঙ্গে সংযুক্ত করা যেতে পারে’।
এদিকে, দেশের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ইউবিআইডির আওতায় নিবন্ধনের বিষয়ে কিছু জানেন না উল্লেখ করে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেন, “আমাদের সঙ্গে বৈঠকে শুধু ই-কমার্স কোম্পানিগুলোকে ইউবিআইডির আওতায় আনার কথা জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ই-কমার্স কোম্পানিগুলোকে ইউবিআইডির আওতায় আনার উদ্যোগে সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু আরজেএসসিতে নিবন্ধিত কোম্পানি কিংবা ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে প্রত্যন্ত পর্যায়ে পরিচালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ইউবিআইডির আওতায় আনার বিষয়ে মন্ত্রণালয় আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। তাই এ বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
এদিকে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো প্রতিবেদনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, সব ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য ইউবিআইডি সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হলে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন প্রয়োজন হবে এবং একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে। তবে, প্রাথমিক পর্যায়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে নিবন্ধন ও মনিটরিং অব্যাহত রাখা যেতে পারে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, সাধারণত নতুন যেকোনো অনিবন্ধিত ব্যবসার কোনো আইডেনটিটি থাকে না। বিশেষ করে যারা নতুন উদ্যোক্তা কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী, অনলাইন ও ই-কমার্স ব্যবসায়ী; আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি কোম্পানি বা এসএমই কারিগররা মূলত অনিবন্ধিত থাকেন। দেশের অর্থনীতিতে এসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অবদান থাকলেও ব্যবসা নিবন্ধিত না হওয়ার কারণে একদিকে তারা সরকারের দেওয়া বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন, অন্যদিকে কোনো মনিটরিং সিস্টেমে না থাকায় তাদের দ্বারা ভোক্তাদের প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে।
সুশাসনে বাংলাদেশ অনেক অগ্রগতি অর্জন করলেও সব ধরনের ব্যবসাকে একটি সিস্টেমের মধ্যে আনার সঠিক প্লাটফর্মের অভাব রয়ে গেছে। এ ধরনের প্লাটফর্ম ট্রেড লাইসেন্স অর্জন ও ব্যবসা নিবন্ধন করার প্রক্রিয়াকে সহজ করতে পারে। আর এ সমস্যার সমাধান হতে পারে ইউবিআইডি।
/এস
Posted ২:৫৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২১
bankbimaarthonity.com | rina sristy