বৃহস্পতিবার ৯ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সহযোগিতার অভাবে বিলীন ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প

বিবিএনিউজ.নেট   |   বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   389 বার পঠিত

সহযোগিতার অভাবে বিলীন ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প

হস্তচালিত তাঁতের খট খট শব্দে রাত-দিন মুখর থাকত মোমিননগর গ্রাম। সেই গ্রাম এখন নিস্তব্ধ! পেশা হারিয়েছে হাজারখানেক মানুষ। শত বছর ধরে বংশপরম্পরায় এ তন্তুবায় জনগোষ্ঠী এখন নানা পেশায় ছড়িয়ে গেছে। ঐতিহ্য হারানোর পাশাপাশি হারিয়ে গেছে বিপুলসংখ্যক দক্ষ পেশাজীবী। তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে অধিকাংশ তাঁতিই আগের পেশায় ফিরতে চান।

শুরুতে মোমিননগর তাঁত শিল্পের অন্যতম কেন্দ্র ছিল সদর উপজেলার নওদা গ্রাম ও তেঘরিয়া। ব্রিটিশ আমল থেকে এ দুই গ্রামসহ আশপাশের এলাকায় তাঁত শিল্প বিস্তার লাভ করে। এ অঞ্চলের প্রায় ১৪ হাজার তাঁতে শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, তোয়ালে তৈরি হতো। এর মধ্যে নওদায় ছিল প্রায় ৬০০টি তাঁত। কাপড়ের রঙ পাকা হওয়ায় দেশব্যাপী ব্যাপক চাহিদা ছিল। লক্ষাধিক মানুষের জীবিকা নির্ভর করত এ শিল্পের ওপর।

এর মধ্যে নওদা গ্রামের তাঁতিরা শহরতলির রাজারহাটে সপ্তাহে একটি দিন কাপড় বিক্রি করতেন। তাঁতিদের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিশ্চিত করতে ১৯৪২ সালে গঠিত হয় মোমিননগর তাঁত শিল্প সমবায় সমিতি। এর পর থেকে বাজার বিস্তৃতি লাভ করে। কিন্তু তাঁত শিল্পের যান্ত্রিকীকরণের ফলে আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে কাপড়ের দাম কমতে শুরু করে। নব্বইয়ের দশক থেকে বন্ধ হতে থাকে তাঁত। অন্য এলাকায় হাতেগোনা কয়েকটি তাঁত চললেও নওদায় এখন একটিও চলে না।

পুরনো হস্তচালিত তাঁত, পুঁজি সংকট, সুতা ও রঙের মূল্য এবং শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে বেড়ে গেছে উৎপাদন ব্যয়। ফলে একে একে সব তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। তাঁত মালিক, কারিগর, শ্রমিক নতুন পেশা খুঁজে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

নওদার সুলতান হোসেন (৫৬) বলেন, ১৯৭৭ সালে বাবার তাঁতের ব্যবসার হাল ধরেন তিনি। আশির দশকে তার ৩৫টি তাঁত চলত। শাড়ি, গামছা আর তোয়ালে তৈরি করতেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালে আটটি তাঁত ছিল। পরের বছরই পুরোপুরি বন্ধ করে দেন। এখন ছোট একটি মুদি দোকান দিয়েছেন।

সুলতানের বাড়িতে এখন স্মৃতি হিসেবে একটি তাঁত রয়েছে। সরকার সহায়তা দিলে আবার বাপ-দাদার পেশায় ফিরতে চান তিনি।

যন্ত্রচালিত আধুনিক তাঁতের কাছে হেরে যাওয়ার গল্প শোনান নওদার হাবিবুর রহমান। ষাটোর্ধ্ব এ বৃদ্ধ ১৯৮৫ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করেছেন। তিনি বলেন, ১৮টি তাঁত ছিল। কিন্তু ১৯৯০ সালের দিকে ভারত থেকে প্রিন্টের শাড়ি আসা শুরু হলে সবাই অল্প দামের ওই শাড়ি কিনতে শুরু করে। প্রতিযোগিতায় হারতে শুরু করি। ২০১২ সালে সব তাঁত বন্ধ করে দিই। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনজনের বাড়িতে মোট ৪০টি তাঁত ছিল। এখন আর একটিও নেই বলে জানান তিনি।

এখানে সমিতির ব্যর্থতার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, সমিতি থেকে আগে সুতা দিত, কাপড় নিত। পরে টাকা দিত। কিন্তু কখনই নতুন ডিজাইন তারা দেয়নি। আমরা নিজেদের মতো ডিজাইনে কাপড় তৈরি করতাম। অপছন্দ হলে সমিতি সেগুলো নিত না।

তবে বাপ-দাদার পেশার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারেননি হাবিবুর রহমান। এখন কুষ্টিয়া থেকে শাড়ি কিনে বিভিন্ন হাটে বিক্রি করেন। সরকারের সহযোগিতা পেলে এখনো অর্ধেকের বেশি তাঁতি পেশায় ফিরতে চান বলেও জানান তিনি।

মোমিননগর সমবায় শিল্প ইউনিয়ন লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, মোমিননগরে এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে এখন সরকারের সদিচ্ছা প্রয়োজন। যন্ত্রচালিত তাঁত, পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা, তৈরি পণ্য ন্যায্যমূল্যে বাজারজাত এবং সময়ের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন হলে অবশ্যই আমাদের এ ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চমহলে আলোচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন চাকলাদার। পাশাপাশি আগ্রহীদের ঋণ এবং প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) ডেপুটি ম্যানেজার ফরিদা ইয়াসমিন।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11209 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।