নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ০৯ জুন ২০২০ | প্রিন্ট | 410 বার পঠিত
করোনার কারণে আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার কয়েক দফায় এক লাখ তিন হাজার ১১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। কিন্তু এত টাকার প্যাকেজ বাস্তবায়নে আগামী (২০২০-২১) অর্থবছরের বাজেটে মাত্র তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে!
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসলে দেশের ব্যাংক খাত থেকেই প্যাকেজের পুরো টাকা আসবে। বাজেটে বরাদ্দকৃত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যাংকগুলোকে সুদ ভর্তুকিবাবদ দেবে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মধ্যেই আগামী ১১ জুন ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। জাতীয় সংসদে তিনি যে বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন তার খসড়া বক্তব্যও ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে।
অর্থমন্ত্রীর খসড়া বাজেট বক্তব্য থেকে জানা গেছে, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠান এবং ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধায় সুদ ভর্তুকিবাবদ আগামী বাজেটে তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত অন্যান্য সকল আর্থিক প্রণোদনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ বাজেটে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কায়েক দফায় এক লাখ কোটি টাকার বেশি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এ প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থের সংস্থান হবে দেশের ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে। এসব প্যাকেজের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ৪ থেকে ৫ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন।
কিন্তু ব্যাংকগুলো এত কম সুদে ঋণ দিয়ে ব্যবসা করতে পারবে না। তাই ব্যাংকগুলোকে সরকার এসব ঋণে আরও ৪ থেকে ৫ শতাংশ সুদ ভর্তুকি হিসাবে দেবে। এতেই আগামী অর্থবছরে সরকারের খরচ হবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে মোট এক লাখ তিন হাজার ১১৭ কোটি টাকার বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়, যা দেশের জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ৩.০৭ শতাংশ। সরকারের নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রণোদনা প্যাকেজসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত ৬৬টি সার্কুলার জারি হয়েছে।
এর মাধ্যমে রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা, ক্ষতিগ্রস্ত এসএমই খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা, রফতানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) জন্য ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিমের আওতায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা এবং উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানার জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ সুবিধা বা চলতি মূলধন ঋণের আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া কৃষি খাতে ভর্তুকি বাবদ সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা, কৃষি খাতে চলতি মূলধন সরবরাহের উদ্দেশ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ঘোষণা করা হয়েছে। প্রি-সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক ও পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের জন্য দুই হাজার কোটি টাকার তহবিল, বাণিজ্যিক ব্যাংকের স্থগিত সুদের ভর্তুকির জন্য দুই হাজার কোটি এবং নিম্ন আয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও ক্ষুদ্র/প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের জন্য তিন বছর মেয়াদি তিন হাজার কোটি টাকার আবর্তনশীল পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
ব্যাংকভিত্তিক এসব প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংকসমূহ বিশেষ করে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের সঠিকভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদের কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত থেকে যথাসময়ে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করতে হবে।
করোনাকালীন বাস্তবতায় ভাইরাস সংক্রমণ রোধে গ্রাহকদের সশরীরে ব্যাংকে গিয়ে সেবা গ্রহণ সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিজিটাল ওয়ালেটভিত্তিক বা অ্যাপভিত্তিক ডিজিটাল ব্যাংকিংসেবা প্রচলনের নির্দেশও দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এদিকে এ প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন ঠিক মতো হচ্ছে কি-না, তা দেখতে তিন স্তরে তদারকি হবে। প্যাকেজ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি মনিটরিং টিম গঠন করা হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) নেতৃত্বে আলাদা আলাদা মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। প্যাকেজে কোনোভাবেই যাতে অনিয়ম না হয় সে বিষয়ে কঠোর মনিটরিং করবে সেলগুলো।
এ দুটি সেলের কার্যক্রম তদারকি করবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল। মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ যৌথভাবে এ তদারকির কাজ করবে। অর্থাৎ ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারের প্রণোদনা বাস্তবায়নে তিন স্তরে তদারকি হবে। মনিটরিংয়ের মূল কাজ হবে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন ঠিক মতো হচ্ছে কি-না, তা পর্যবেক্ষণ করা। পাশাপাশি প্যাকেজের অর্থ কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে, যাদের জন্য প্যাকেজ করা হয়েছে তারা সহায়তা পাচ্ছেন কি-না, কোনো ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এর থেকে কোনো ধরনের সহায়তা পাচ্ছে কি-না, তাও খতিয়ে দেখা হবে।
Posted ১১:৩৭ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৯ জুন ২০২০
bankbimaarthonity.com | saed khan