রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

সিঙ্গার বিডির ৫৭ শতাংশ শেয়ার কিনছে আর্সেলিক

বিবিএনিউজ.নেট   |   রবিবার, ২৪ মার্চ ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   1027 বার পঠিত

সিঙ্গার বিডির ৫৭ শতাংশ শেয়ার কিনছে আর্সেলিক

হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদক ও সরবরাহকারী বহুজাতিক কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডের ৫৭ শতাংশ শেয়ার কিনছে তুরস্কের আর্সেলিক এএস। গত শুক্রবার এ-সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৬৩১ কোটি টাকায় সিঙ্গার বাংলাদেশের ৫৭ শতাংশ শেয়ার কিনবে আর্সেলিক।

সিঙ্গার বাংলাদেশের মালিকানা পরিবর্তন- সংক্রান্ত চুক্তির বিষয়টি মূল্যসংবেদনশীল তথ্য হিসেবে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির পর্ষদ। সিঙ্গারের মালিকানায় থাকা নেদারল্যান্ডসভিত্তিক রিটেইল হোল্ডিংস সিঙ্গার বাংলাদেশের পর্ষদকে শেয়ার ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, রিটেইল হোল্ডিংসের মালিকানায় থাকা সিঙ্গার বাংলাদেশের ৫৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ বা ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৭ হাজার ১৮৩টি শেয়ার কিনে নেবে আর্সেলিকের সাবসিডিয়ারি আরডাচ বিভি। সিঙ্গার বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত মূল্যসংবেদনশীল তথ্যে কত টাকায় শেয়ার বিক্রি করা হবে, তা প্রকাশ করা হয়নি।

কোম্পানিটি আরো জানায়, সিঙ্গার বাংলাদেশের পূর্ণ মালিকানা আরডাচ বিভির কাছে চলে গেলেও কোম্পানির ব্যবসায় কোনো পরিবর্তন হবে না। ‘সিঙ্গার’ ট্রেডমার্কেই ব্যবসা পরিচালিত হবে।

রিটেইল হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান স্টিফেন এইচ গুডম্যান বলেন, আর্সেলিক আমাদের তুলনায় বেশ বড় প্রতিষ্ঠান এবং তাদের আর্থিক সক্ষমতাও বেশি। এতে সিঙ্গার বাংলাদেশ উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি। শেয়ার বিক্রির পর এসভিপির কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে সিঙ্গার বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী তাদের ব্র্যান্ড নেম ও ট্রেডমার্ক ব্যবহার করতে পারবে।

চুক্তিসংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সিঙ্গার বাংলাদেশের ৫৭ শতাংশ শেয়ার রিটেইল হোল্ডিংস বিহোল্ড বিভির কাছে থাকলেও এর ২০ শতাংশ ব্লকড শেয়ার। এখনই তা বিক্রি করতে পারবে না। ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরে ৩০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দেয়ার কারণে সিঙ্গার বাংলাদেশের শেয়ার সংখ্যা দাঁড়াবে ৯ কোটি ৯৭ লাখ ২ হাজার ৮০০। এর ৫৭ শতাংশ বা ৫ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার ৬০০ শেয়ার কিনবে আরডাচ। এ হিসাবে শেয়ারপ্রতি বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ১১১ টাকায়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সিঙ্গার বাংলাদেশের শেয়ার ২৬৯ টাকায় লেনদেন হয়েছে। ফলে বিদ্যমান দরের চেয়ে প্রায় ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ কম দামে সিঙ্গার বাংলাদেশের শেয়ার বিক্রি করা হবে। মূলত ব্লকড হিসেবে থাকা ২০ শতাংশ শেয়ারের কারণেই এর দর তুলনামূলক কম নির্ধারিত হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আর্সেলিকের সিইও হাকান বুলগুরলু বলেন, সামনের দিনগুলোতে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি আসবে। বাংলাদেশের মতো একটি সম্ভাবনাময় বাজারে প্রবেশের জন্য সিঙ্গার বাংলাদেশের শেয়ার ক্রয় আমাদের জন্য কৌশলগতভাবে সঠিত সিদ্ধান্ত। সিঙ্গার বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ইমেজের পাশাপাশি বিস্তৃত বিক্রয় নেটওয়ার্ক ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা রয়েছে। আমরা এগুলোকে কাজে লাগিয়ে বাজারের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করব।

আর্সেলিক ১৯৫৫ সালে যাত্রা করে। ৩২ হাজার কর্মীর মাধ্যমে কোম্পানিটি বিশ্বের ১৪৬টি দেশে এর পণ্য সরবরাহ করছে। তুরস্ক, রোমানিয়া, রাশিয়া, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান ও ভারতে ২১টি উৎপাদন লাইন রয়েছে আর্সেলিকের। বিশ্বজুড়ে তাদের ৩৪টি বিক্রয় ও বিপণন কোম্পানি রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে আর্সেলিক, বেকো, গ্রানডিগ, ব্লুমবার্গ, ইলেকট্রা ব্রেগেঞ্জ, আর্কটিক, লেইজার, ফ্ল্যাভেল, ডিফে, ডোল্যান্স, ভলটাস বেকো ও অলটাস। আর্সেলিক ইস্তাম্বুল স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানি। আর্সেলিকের মূল প্রতিষ্ঠান কেওসি হোল্ডিং তুরস্কের সবচেয়ে বড় কনগ্লোমারেট। ফরচুনের শীর্ষস্থানীয় ৫০০ কোম্পানির তালিকায় থাকা তুরস্কের একমাত্র প্রতিষ্ঠান এটি।

সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড ১৯০৫ সাল থেকে এ অঞ্চলে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কোম্পানিটি সেলাই মেশিন ও কিস্তিতে পণ্য বিক্রির জন্য সুপরিচিত। বর্তমানে সিঙ্গার বাংলাদেশ নিজস্ব ব্র্যান্ডের বাইরে অন্যান্য ব্র্যান্ডের পণ্যও বিক্রি করছে। দেশব্যাপী ৩৮৫টি নিজস্ব বিক্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি ৭২০-এর বেশি হোলসেল ডিলারের মাধ্যমে কার্যক্রম চালাচ্ছে কোম্পানিটি।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০১৮ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ৩০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছে সিঙ্গার বাংলাদেশের পর্ষদ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। যেখানে আগের বছরে বিক্রি ছিল ১ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৯২ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৭৫ কোটি টাকা। ২০১৮ হিসাব বছর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১১ টাকা ৯৬ পয়সা, যা আগের বছরে ছিল ৯ টাকা ৭৯ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ এর শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকা ১৩ পয়সা।

প্রসঙ্গত, পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনতে প্রায় এক দশক আগেই বিশ্বব্যাপী সিঙ্গারের খুচরা বিক্রির ব্যবসা থেকে সরে আসার পরিকল্পনা করে রিটেইল হোল্ডিংস। গত চার বছরে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তাছাড়া এ সময়ে বাংলাদেশ থেকেও বিনিয়োগের একটা অংশ তুলে নিয়েছে কোম্পানিটি। এর আগে ২০১০ সালের ৪ নভেম্বর নেদারল্যান্ডসভিত্তিক রিটেইল হোল্ডিংস ৭৫ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ৫৫ শতাংশ বেক্সিমকো, পিএইচপিসহ একাধিক কোম্পানির একটি জোটের কাছে বিক্রির জন্য চুক্তি হয়েছিল। তবে চুক্তি স্বাক্ষরের মাসখানেক পরেই দেশের শেয়ারবাজারে ধস নামায় উভয় পক্ষ চুক্তি থেকে সরে আসে।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১:২০ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৪ মার্চ ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।