নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট | 338 বার পঠিত
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নির্দেশনা লঙ্ঘন করে নিয়মিত অফিস করছেন এবং কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অব্যাহতিপ্রাপ্ত সিইও বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল। বুধবার (৩০ আগস্ট) সরেজমিন অনুসন্ধানে বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত মতিঝিলস্থ হোমল্যান্ড লাইফের প্রধান কার্যালয়ে অবস্থানকালে এর সত্যতা পাওয়া যায়।
ওই সময় বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলকে তার অফিস কক্ষে কোম্পানির কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করতে দেখা গেছে। এর আগে দৈনিক ব্যাংক বীমা অর্থনীতির প্রতিবেদক কোম্পানির সচিব মোহাম্মদ আলী মিয়ার সাথে হোমল্যান্ড লাইফের বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন পরিপালনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এক পর্যায়ে তিনি অব্যাহতিপ্রাপ্ত সিইও বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলের অফিসে আসা যাওয়ার বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, “স্যার অফিসে আসলেও কোন নথিপত্রে স্বাক্ষর করেন না। মাঝে মধ্যে এমনিই আসেন এবং তার কক্ষেই বসে লোকজনের সাথে কথা বলেন।”
কোম্পানি সচিব আরও জানান, গত ১৪ আগস্ট ‘আইডিআরএ’র চিঠির নির্দেশনার আলোকে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ জরুরি সভা করে বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন। একই সাথে কোম্পানির ডিএমডি ফরিদুল আলমকে ভারপ্রাপ্ত সিইও’র দায়িত্ব দেওয়া হয়। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সিইও ফরিদুল আলম সব নথিপত্রে স্বাক্ষর করেন।
কোম্পানি সচিব আরও জানান, কারণ দর্শানোর নোটিশের আলোকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সিইও বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আইডিআরএ তে জবাব পাঠান। বিষয়টি স্পর্শ কাতর ও তার ব্যক্তিগত হওয়ায় এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
আলোচনার এক পর্যায়ে কোম্পানি সচিব বলেন, “স্যার চেম্বারে আছেন। তার সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিব।” এরপর তিনি এ প্রতিবেদককে সাথে নিয়ে কোম্পানির অব্যাহতিপ্রাপ্ত সিইও’র চেম্বারের সামনে অপেক্ষায় থাকেন। ওই সময় বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডল কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে ভেতরে বৈঠক করছিলেন। কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আলী সিইও’র চেম্বারে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে তিনি জানান, “একটু অপেক্ষার করুন ভেতরে লোকজন আছে।” তবে ব্যাংক বীমা অর্থনীতির সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে হঠাৎ অব্যাহতিপ্রাপ্ত সিইও তার সাথে থাকা কর্মকর্তাদের নিয়ে দ্রুত অফিস ত্যাগ করেন। এরপর কোম্পানির সচিব বলেন, “জরুরি কাজ থাকায় স্যার বেরিয়ে গেলেন। আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেটা আজ (বুধবার) আর হলো না।”
আইডিআরএ’র নির্দেশনা অমান্য করে বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলের নিয়মিত অফিসে উপস্থিতির বৈধতা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আইডিআরএ’র মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত ১৪ আগস্ট কারণ দর্শানোর নোটিশে হোমল্যান্ড লাইফের সিইও বিশ্বজিৎ মন্ডলকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। তিনি কোনভাবেই অফিসে এসে চেয়ারে বসা কিংবা নথিপত্র দেখা, পর্যালোচনা করা, পরামর্শ দেওয়া-নেওয়া এবং স্বাক্ষর করার এখতিয়ার তার আর নেই। অফিসে আসে কিনা, এসব বিষয় সার্বক্ষনিক নজরদারি আইডিআর’র পক্ষে সম্ভব না। তবে অফিস করাটা বেআইনী। এটা অবশ্যই আইনের বরখেলাপ। অভিযোগ প্রমাণিত হলে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইডিআরএ’র মুখপাত্র আরও বলেন, নোটিশে পরিস্কার উল্লেখ করা আছে, ‘বীমা আইন, ২০১০ এর ৫০ ধারার ১ (খ) উপ-ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বিশ্বজিৎ মন্ডলকে কেনো হোমল্যান্ড লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ থেকে অপসারণ করা হবে না, তিন দিনের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। একই সঙ্গে বীমাকারী ও বীমা গ্রাহকের স্বার্থে বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বীমা আইন, ২০১০ এর ৫০ ধারার ১ (খ) এর (অ) উপধারা মোতাবেক তাকে (বিশ্বজিৎ) হোমল্যান্ড লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।’ এরপরও যদি তিনি অফিস করেন তা হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
আইডিআরএ’র (সদস্য আইন) দলিল উদ্দিন এ প্রতিবেদকে বলেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Posted ১২:৫৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৩
bankbimaarthonity.com | rina sristy