বিবিএনিউজ.নেট | সোমবার, ১০ জুন ২০১৯ | প্রিন্ট | 556 বার পঠিত
ভ্যাট বা মূসক (মূল্য সংযোজন কর) আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে আগামী অর্থবছরে প্রযুক্তি ব্যবহার করার উদ্যোগ নিচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে নতুন অর্থবছরে বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই ওই প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছে না। ফলে ক্রেতাদের কাছ থেকে ভ্যাট বাবদ নেওয়া অর্থ ব্যবসায়ীদের পকেটে ভরার সুযোগ থেকেই যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি থেকে ভ্যাট প্রদানে সক্ষম ৩০ লাখ প্রতিষ্ঠানকে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) চেয়ে আবেদন করা হলেও আগামী অর্থবছরে প্রধম ধাপে মাত্র ১০ হাজার প্রতিষ্ঠানকে তা দেওয়া হবে।
পণ্যের দামের সঙ্গে নির্দিষ্ট হারে ভ্যাট পরিশোধ করতে হয় ক্রেতাকে। ভ্যাট খাতে সাধারণ মানুষের দেওয়া অর্থ বেশির ভাগ সময়েই সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজেদের পকেটে ভরে অসাধু ব্যবসায়ীরা। অনেক বিক্রেতা ভ্যাট আদায়ের অজুহাতে পণ্যের দামও বাড়িয়ে থাকে। লোকবল ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার অভাবে এনবিআর ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে না। এমন অবস্থায় অর্থনীতিবিদদের পরামর্শে প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আগামী অর্থবছরে ভ্যাট আইন ২০১২ বাস্তবায়ন করা হবে। আইনটি বাস্তবায়নের শর্ত হিসেবে আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুডের দোকান, মিষ্টির দোকান, আসবাবপত্র বিক্রয় কেন্দ্র, পোশাক বিক্রির কেন্দ্র, বুটিক শপ, বিউটি পার্লার, ফ্রিজ, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন ও এর যন্ত্রাংশ বিক্রির দোকান, গৃহস্থালি সামগ্রী বিক্রি কেন্দ্র, অলংকার বিক্রি কেন্দ্রসহ অন্তত ১১টি অধিক ব্যবহৃত খাতে ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে ইএফডি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। সারা দেশে ওই ১১ খাতে কত দোকান আছে এনবিআর থেকে তা জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির কাছে। সমিতি সারা দেশে ভ্যাট প্রদানে সক্ষম ৩০ লাখ দোকানে ইএফডি দেওয়ার আবেদন জানালেও এনবিআর থেকে দেওয়া হবে মাত্র ১০ হাজার প্রতিষ্ঠানে।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ২০১২ সালে প্রণীত ভ্যাট আইন প্রায় সাত বছর পর বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এই দীর্ঘ সময়ে যন্ত্রের সাহায্যে ভ্যাট আদায়ের প্রস্তুতি সেরে ফেলা উচিত ছিল। তবে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, প্রধমধাপে ১০ হাজার ইএফডি দেওয়া হলেও পরে তা বাড়ানো হবে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘সারা দেশে আমাদের সদস্য ৩০ লাখ দোকান। আগামী অর্থবছরে ভ্যাটমুক্তসীমা ৫০ লাখ করা হলে এর ৬০-৬৫ শতাংশ দোকান ভ্যাটের বাইরে চলে যাবে। বাকি ১০-১১ লাখ দোকানে ইএফডি ব্যবহারে আমরা প্রস্তুত। এখন সরকার দিলেই আমরা ব্যবহার করব। এতে আদায়ে যেমন স্বচ্ছতা আসবে, তেমনি এনবিআরের অসাধু কর্মকর্তারা আমাদের হয়রানি করার সুযোগ পাবে না।’
ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি থেকে ইএফডি ব্যবহারে সক্ষম ৩০ লাখ দোকানের কথা বলেছে। এ মুহূর্তে সব দোকানে এসব যন্ত্র সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। আগামী অর্থবছরের জুলাই বা আগস্ট থেকে ১০ হাজার দোকানে এ যন্ত্র সরবরাহ শুরু হবে। আগামী অর্থবছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে আরো ৯০ হাজার ইএফডি প্রদানের চেষ্টা করা হবে।
১০ হাজার ইএফডি কিনতে সরকার এরই মধ্যে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এসব যন্ত্র ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে কেনা হবে। ব্যবহাকারীকে কিস্তিতেও কেনার সুযোগ দেওয়া হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে আগামী দিনে ইসিআর মেশিনের পরিবর্তে ইএফডি সরবরাহ করা হবে। এটি সহজে ব্যবহারযোগ্য একটি যন্ত্র। বিক্রয় কেন্দে র বেচাকেনা, ভ্যাট পরিশোধের সকল তথ্য এখানে থাকবে। এনবিআর কর্মকর্তারা অফিসে বসেই তা যাচাই করতে পারবেন।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষ পণ্যের মূল্যের সঙ্গে নিজের অজান্তে ভ্যাট পরিশোধ করছে। অনেক ব্যবসায়ী এ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রেখে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। আগামী দিনে যন্ত্রের সাহায্যে নজরদারিতে এনবিআর সক্ষম না হলে অতীতের অন্যায় চলতে থাকবে। এ ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ করা উচিত নয়।
এই অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, ‘প্রায় সাত বছর পর ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে যাচ্ছে এনবিআর। ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের প্রধান শর্ত হিসাবে আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে যন্ত্রের ব্যবহার করতে হবে, অনলাইনে ভ্যাট আদায় করতে হবে। এত দিনে এনবিআরের এ প্রস্তুতি সেরে ফেলা উচিত ছিল। এতে ভ্যাট আদায় বহুগুণ বাড়ত।’
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে ৫০ লাখের বেশি প্রতিষ্ঠান ভ্যাট পরিশোধে সক্ষম হলেও এনবিআরে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সাড়ে সাত লাখ। গত পাঁচ বছরের রাজস্ব আদায়ের হিসাব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এনবিআর ঘুরেফিরে এক বছরে গড়ে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে। এসবের মধ্যে ১৩০ থেকে ১৫০টি প্রতিষ্ঠান মোট ভ্যাটের ৫৬ শতাংশ পরিশোধ করছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো নজরদারির বাইরে থাকছে।
সূত্র মতে, ইএফডি চালু হলে এনবিআরের বিভিন্ন কাস্টমস এক্সসাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেটে বসে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা ওই কমিশনারেটের আওতাভুক্ত অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধিত বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট পরিশোধের তথ্য জানতে পারবেন। বিশেষভাবে কী পরিমাণ পণ্য বিক্রীতে কতটা ভ্যাট পরিশোধ করছে তা সহজে জানার সুযোগ থাকবে। এক মাসের ভ্যাট পরের মাসের নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে পরিশোধ না করলে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বসে রাজস্ব কর্মকর্তারা ইএফডির মাধ্যমে অনলাইনে পরিশোধের সুযোগ স্থগিত করে দিতে পারবেন। ভ্যাট পরিশোধের নির্দিষ্ট সময়ের এক মিনিট পরও অনলাইনে ভ্যাট পরিশোধ করা যাবে না। এসব যন্ত্র ভ্যাট অনলাইন কার্যক্রমের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকবে। তাই এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দপ্তরে বসেই এসব যন্ত্র অকার্যকর করতে পারবেন। ইএফডির বিপরীতে বিআইএন দেওয়া হবে। একই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে একাধিক যন্ত্র থাকলেও বিআইএন একটিই হবে। তবে প্রতিটি যন্ত্রের জন্য এনবিআর থেকে বিশেষ কোড দেওয়া হবে।
আগামী অর্থবছরে রাজস্ব বাজেটে অনলাইনে ভ্যাট আদায়ে হেল্প ডেস্ক, কল সেন্টার, মোবাইল অ্যাপসসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও জানানো হবে। যদিও এসব উদ্যোগের কথা বিগত দিনের বাজেটে জানানো হলেও তার উল্লেখযোগ্য বাস্তবায়ন হয়নি।
Posted ৩:৪৩ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১০ জুন ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed