মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঋণ পুনঃতফসিলসংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি

সব খেলাপিই বিশেষ সুবিধা পাবেন

বিবিএনিউজ.নেট   |   শনিবার, ১৮ মে ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   722 বার পঠিত

সব খেলাপিই বিশেষ সুবিধা পাবেন

ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিটসংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি’ বিভাগ থেকে জারি করা এ নীতিমালায় সব খেলাপির জন্যই বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে।

জারীকৃত নীতিমালায় সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবেন ট্রেডিং (গম, খাদ্যদ্রব্য, ভোজ্যতেল ও রিফাইনারি), জাহাজ শিল্প, লোহা ও ইস্পাত শিল্প খাতের ঋণখেলাপিরা। এসব খাতের খেলাপি গ্রাহকরা সরাসরি ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পাবেন। অন্য খাতের ঋণখেলাপিদের পুনঃতফসিল সুবিধা পেতে ব্যাংকের বিশেষ নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, খেলাপিরা ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে সর্বোচ্চ ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিল সুবিধা পাবেন। কেস টু কেস বিবেচনায় ঋণ পরিশোধে এক বছরের জন্য গ্রেস পিরিয়ডও পাওয়া যাবে। অর্থাৎ প্রথম এক বছরে খেলাপিদের ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ করতে হবে না। মওকুফ হবে অনারোপিত সুদের সম্পূর্ণ অংশ ও ইন্টারেস্ট সাসপেন্সেস হিসাবে রক্ষিত সুদও।

ঋণ স্থিতির (মওকুফ অবশিষ্ট) ওপর কস্ট অব ফান্ডের সঙ্গে অতিরিক্ত ৩ শতাংশ সুদ যুক্ত করা যাবে। তবে ঋণের সুদহার সীমাবদ্ধ রাখতে হবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে। স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্দ মানের ঋণখেলাপিরা বিশেষ এ সুবিধা পাবেন। পুনঃতফসিলের পর ঋণখেলাপিরা নিতে পারবেন নতুন ঋণও। এসব সুযোগ-সুবিধা পেতে ৯০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে।

গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সভায় ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ এ নীতিমালা পাস হওয়ার কথা ছিল। এর একদিন পর গতকাল ঋণখেলাপিদের পুনঃতফসিল ও এক্সিট সুবিধা দিয়ে বিশেষ নীতিমালাটি জারি হলো। একই সঙ্গে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে ভালো ঋণগ্রহীতাদের ১০ শতাংশ রিবেট সুবিধা দিয়ে এর আগে জারীকৃত প্রজ্ঞাপনের কথা ব্যাংকগুলোকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ব্যাংকের ভালো বা নিয়মিত গ্রাহকদের সুদের হার কত হবে, প্রজ্ঞাপনে তা উল্লেখ করা হয়নি। গত ৩১ ডিসেম্বর এবং পরবর্তী সময় পর্যন্ত নিয়মিত থাকা ব্যাংকের গ্রাহকরা পুনঃতফসিলের বিশেষ সুবিধা পাবেন না বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

জারীকৃত ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিটসংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে ব্যবসায়ী বা শিল্পোদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাংকের ঋণ অনেক ক্ষেত্রেই নিয়মিতভাবে পরিশোধিত হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট ঋণ বিরূপভাবে শ্রেণীকৃত (খেলাপি) হয়ে পড়ায় ঋণ বিতরণ ও আদায় কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদনশীল খাতসহ অন্যান্য খাতে স্বাভাবিক ঋণপ্রবাহ বজায় রাখাসহ ব্যাংকিং খাতের বিরূপভাবে শ্রেণীকৃত ঋণ নিয়মিতভাবে আদায়ের লক্ষ্যে কতিপয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

বিশেষ পুনঃতফসিলের সুযোগ পাবেন যারা: প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ট্রেডিং খাত (গম, খাদ্যদ্রব্য, ভোজ্যতেল ও রিফাইনারি), জাহাজ শিল্প (শিপ ব্রেকিং ও শিপ বিল্ডিং) এবং লৌহ ও ইস্পাত শিল্প খাতের খেলাপি গ্রাহকরা বিশেষ পুনঃতফসিলের সুযোগ পাবেন।

পুনঃতফসিলের জন্য বিবেচিত হবে বিশেষায়িত ব্যাংকের (বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক) অকৃষি খাতের আমদানি-রফতানিতে সম্পৃক্ত শিল্পঋণও। অর্থাৎ, এ দুটি ব্যাংক থেকে কৃষি খাতে খেলাপি হওয়া গ্রাহকরা পুনঃতফসিলের বিশেষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। এছাড়া অন্যান্য খাতে ব্যাংক কর্তৃক বিশেষ নিরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত প্রকৃত ব্যবসায়ী, যাদের ঋণ নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত কারণে মন্দ মানে খেলাপি হয়েছে, তারাও এ সুযোগ পাবেন।

ঋণ পুনঃতফসিলের শর্ত: প্রজ্ঞাপনে ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য বেশকিছু শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। তা হলো পুনঃতফসিল সুবিধা গ্রহণের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণগ্রহীতার আবেদন প্রাপ্তির পর ব্যাংক কর্তৃক ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরভিত্তিক হিসাবকৃত স্থিতি মোতাবেক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। ঋণ স্থিতির ন্যূনতম ২ শতাংশ হারে ডাউন পেমেন্ট নগদে গ্রহণ করতে হবে। এর আগে সংশ্লিষ্ট ঋণের বিপরীতে আদায়কৃত কিস্তির অর্থ ডাউন পেমেন্ট হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। সার্কুলার জারির তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ঋণগ্রহীতাকে আবেদন করতে হবে। এ সময় অতিক্রান্ত হলে কোনো আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। কেস টু কেস বিবেচনায় ঋণ পরিশোধের সময়কাল হবে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ১০ বছর।

ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে অনারোপিত সুদের সম্পূর্ণ অংশ এবং ইন্টারেস্ট সাসপেন্স হিসাবে রক্ষিত সুদ মওকুফ করা যাবে। তবে মওকুফকৃত সুদ পৃথক ব্লকড হিসাবে (সুদবিহীন) স্থানান্তর করতে হবে। পুনঃতফসিলের শর্তানুযায়ী সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধের পর ব্লকড হিসাবে রক্ষিত সুদ চূড়ান্ত মওকুফ হিসেবে বিবেচিত হবে।

ঋণ স্থিতির (মওকুফ অবশিষ্ট) ওপর কস্ট অব ফান্ডের সঙ্গে ৩ শতাংশ হারে সুদ প্রযোজ্য হবে। তবে সুদের হার ৯ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ওই হারে সুদ আরোপ কার্যকর হবে। এছাড়া ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে মাসিক অথবা ত্রৈমাসিক কিস্তি নির্ধারণ করতে হবে। কিস্তির পরিমান নির্ধারিত হবে প্রচলিত নিয়মানুযায়ী আনুপাতিক হারে আসল ও সুদ বিবেচনায় নিয়ে।
ঋণ পরিশোধের জন্য নয়টি মাসিক কিস্তির মধ্যে ছয়টি অথবা তিনটি ত্রৈমাসিক কিস্তির মধ্যে দুটি ত্রৈমাসিক কিস্তি অনাদায়ী হলে এ সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে। সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাবকে মন্দ মানে খেলাপি করতে হবে।

ব্যাংক কর্তৃক পুনঃতফসিল সুবিধা প্রদানের তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ব্যাংক ও গ্রাহক সোলেনামার মাধ্যমে চলমান মামলার কার্যক্রম স্থগিতের জন্য যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। পরবর্তী সময়ে কোনো গ্রাহক প্রদত্ত সুবিধার কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে তার অনুকূলে প্রদত্ত সব সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে। একই সঙ্গে গ্রাহকের বিরুদ্ধে স্থগিত মামলা পুনরুজ্জীবিত করতে হবে।
পুনঃতফসিল-পরবর্তী সময়ে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ব্যাংক কর্তৃক নতুন করে ঋণ দেয়া যাবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে তাদের প্রচলিত ঋণ নীতিমালা অনুসরণ করবে। নতুনভাবে প্রদত্ত ঋণ যথানিয়মে পরিশোধে ব্যর্থ হলে বিশেষ সার্কুলারের আওতায় প্রদত্ত সব সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে।

ব্যাংক থেকে একসঙ্গে বের হয়ে আসার উপায়: প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কোনো গ্রাহক ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ এককালীন পরিশোধ করে বেরিয়ে আসতে পারবেন। এক্ষেত্রে বিশেষ পুনঃতফসিলের শর্তগুলো প্রযোজ্য হবে। এর বাইরে আরেকটি অতিরিক্ত শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। তা হলো ঋণ স্থিতির (মওকুফ অবশিষ্ট) ওপর কস্ট অব ফান্ড হারে সুদ প্রযোজ্য হবে। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ওই হারে সুদ কার্যকর হবে। ব্যাংক কর্তৃক এককালীন এক্সিট সুবিধা প্রদানের তারিখ থেকে সর্বোচ্চ ৩৬০ দিনের মধ্যে ঋণগ্রহীতা কর্তৃক পরিশোধযোগ্য ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ওই সময়সীমার মধ্যে সমুদয় পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে এ সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে। সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাবকে মন্দ মানে খেলাপি করতে হবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও সার্কুলারের নির্দেশনা কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। সার্কুলারের আওতায় ঋণগ্রহীতার আবেদন প্রাপ্তির তারিখ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ব্যাংক কর্তৃক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে যেসব ক্ষেত্রে বিশেষ নিরীক্ষার প্রয়োজন হবে, সেসব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে হবে নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রাপ্তির তারিখ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিশেষ সার্কুলারের আওতায় নিয়মিত করা খেলাপি ঋণের মান হবে এসএমএ। এসব ঋণের বিপরীতে ১ শতাংশ হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। পুনঃতফসিলকৃত ঋণগুলো সিআইবিতে সংশ্লিষ্ট প্রজ্ঞাপনের আওতায় রিপোর্ট করতে হবে। বিশেষ সুবিধার আওতায় পুনঃতফসিল করা সংশ্লিষ্ট ঋণগুলোর বিপরীতে আরোপিত সুদ প্রকৃত আদায় ব্যতীত ব্যাংকের আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে না।

ব্যাংকের ভালো ঋণগ্রহীতাদের জন্য ১০ শতাংশ রিবেট সুবিধা দিয়ে ২০১৫ সালের ১৯ মার্চ, ৩০ ডিসেম্বর এবং ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিন দফায় প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সে নির্দেশনা পরিপালন করেনি দেশের কোনো ব্যাংক। কেবল দুটি বিদেশী ব্যাংক সীমিত পরিসরে এ নীতিমালা বাস্তবায়ন করেছিল।

শুক্রবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জারীকৃত পৃথক এক প্রজ্ঞাপনে ব্যাংকগুলোকে ভালো গ্রাহকদের জন্য অতীতে জারীকৃত প্রজ্ঞাপনগুলো স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। এতে বলা হয়, ১০ শতাংশ রিবেট সুবিধা কার্যকর করার পাশাপাশি ভালো গ্রাহকদের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী ভালো ঋণগ্রহীতাদের বিশেষ সুবিধা (রিওয়ার্ড পয়েন্ট, ডিসকাউন্ট ইত্যাদি) দিতে হবে। ভালো গ্রাহকদের প্রতি বছর ব্যাংক কর্তৃক বিশেষ সনদ দিতে হবে। ব্যাংকের সেরা ১০ ঋণগ্রহীতার ছবি আর্থিক প্রতিবেদনে ছাপাতে হবে। বার্ষিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ওই ভালো ঋণগ্রহীতাদের পুরস্কৃত করার কথা প্রজ্ঞাপনে তুলে ধরা হয়েছে।

Facebook Comments Box
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ২:৪৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৮ মে ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11197 বার পঠিত)

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।