বিবিএনিউজ.নেট | বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০১৯ | প্রিন্ট | 790 বার পঠিত
খেলাপি ঋণের দায় বইতে গিয়ে বিপাকে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। এতে গ্রাহকের কাছে আটকে যাওয়া টাকার বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হচ্ছে। ২০১৮ সালে ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটিকে কর-পরবর্তী মুনাফার প্রায় ৬গুণ প্রভিশন রাখতে হয়েছে। একইভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ-প্রভিশনেও সোনালী ব্যাংকের বড় অঙ্কের অর্থ আটকে গেছে।
খেলাপি ঋণ-প্রভিশনের চাপে ওই বছর ব্যাংকটির মুনাফা সাড়ে ৬৭ শতাংশের বেশি কমেছে, যা টাকার অঙ্কে প্রায় ৪৮৪ কোটি টাকা। মূলত বড় গ্রাহকের ঋণের দায় ব্যাংকটিতে বিপাকে ফেলে দিয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকের পরিচালন আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন হাজার ৯৫৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা, যা এর আগের আর্থিক বছরের তুলনায় প্রায় ৭৮২ কোটি টাকা বেশি। কিন্তু পরিচালন আয় বাড়লেও সর্বশেষ আর্থিক বছর শেষে সোনালী ব্যাংকের কর-পরবর্তী মুনাফা সাড়ে ৬৭ শতাংশের বেশি কমেছে।
২০১৮ সালে প্রায় ২৩২ কোটি ১৩ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে ব্যাংকটি। এর আগের আর্থিক বছরেও প্রায় ৭১৬ কোটি ১১ লাখ টাকা ছিল। মুনাফায় বড় পরিবর্তনের কারণ হিসেবে খেলাপি ঋণের দায়, বাড়তি ব্যবস্থাপনা ব্যয় ও প্রভিশনকে দায়ী করা হচ্ছে।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘২০১৮ সালে ব্যাংক খাতে সোনালী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তবে ২০১৭ সালের কিছু খেলাপি ঋণও ২০১৮ সালে পুনঃতফসিল করা হয়েছে। এটি পরিচালনা পর্ষদের সম্মতিতেই করা হয়েছে। এজন্য ২০১৮ সালে প্রভিশন রাখতে হয়েছে বেশি। এছাড়া প্রতিবছর সরকারি ব্যাংকের প্রভিশন সংরক্ষণে যে নীতিমালার আলোকে করা হয়, সোনালী ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। এ পদ্ধতিগত পরিবর্তনের কারণেও প্রভিশন বেশি রাখতে হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, চলতি বছরে সোনালী ব্যাংক তার সাফল্য ধরে রাখতে পারবে। এজন্য আমরা ব্যাংকিং সেবার পরিধি বিস্তৃত করা শুরু করেছি।’
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, আদায় হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে এমন ঋণ-অগ্রিমের বিপরীতে ২০১৮ সালে সোনালী ব্যাংককে প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রভিশন রাখতে হয়েছে। ওই প্রভিশনের পরিমাণ এর আগের আর্থিক বছরের তুলনায় প্রায় এক হাজার ১৬২ কোটি ৪২ লাখ টাকা বা ৪৮৭ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি। খেলাপি ঋণের প্রভিশনের চাপ সমাপ্ত আর্থিক বছরে ব্যাংকটির পিছিয়ে পড়াকে ত্বরান্বিত করেছে।
ঋণের প্রভিশনের সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগে লোকসানের বিপরীতেও সোনালী ব্যাংকের প্রভিশন ১০৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ২০১৭ সালে ওই খাতে প্রায় ৪৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা প্রভিশন রাখা ব্যাংকটিকে ২০১৮ সালে প্রায় ৯৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা প্রভিশন রাখতে হয়েছে। অর্থাৎ এক বছরে ওই খাতের প্রভিশন প্রায় ৪৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বেড়েছে। সে সঙ্গে অন্যান্য প্রভিশনও ১২২ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ প্রায় ৫২১ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এদিকে প্রভিশনের সঙ্গে ব্যাংকটিতে ‘বোঝার ওপর শাকের আঁটি’ হয়ে উঠেছে বাড়তি ব্যবস্থাপনা ব্যয়। প্রধান নির্বাহীসহ কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা কমিয়েও শেষ রক্ষা হচ্ছে না।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সমাপ্ত অর্থবছরে প্রায় দুই হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যবস্থাপনা ব্যয় দেখিয়েছে সোনালী ব্যাংক, যা এর আগের আর্থিক বছরের তুলনায় প্রায় প্রায় ৮২৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা বা ৬৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক হলমার্ক গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে বিপাকে পড়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে হলমার্ক গ্রুপের প্রায় এক হাজার ৭১৩ কোটি টাকার পুরোটাই খেলাপি হয়েছে, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের তিন দশমিক ৬৯ শতাংশ। একইভাবে টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের প্রায় ৪৯০ কোটি ২৬ লাখ টাকা ঋণও মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে। এটিও ব্যাংকটির মোট ঋণের এক শতাংশের বেশি। ওই দুই গ্রুপের ঋণের প্রভিশন ব্যাংকটির প্রভিশনের চাপ বাড়িয়েছে।
Posted ১:১৫ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed