মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

সোনালী ব্যাংকের ২১ শাখাতেই ৭৫ শতাংশ খেলাপি

বিবিএনিউজ.নেট   |   শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০১৯   |   প্রিন্ট   |   873 বার পঠিত

সোনালী ব্যাংকের ২১ শাখাতেই ৭৫ শতাংশ খেলাপি

হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক হিসাব বিবরণী ২০১৮ অনুযায়ী ব্যাংকের মোট শাখার সংখ্যা ১ হাজার ২১৪টি। খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯ হাজার ৮৯ কোটি টাকাই আবার মাত্র ২১টি শাখায়। যা মোট খেলাপি ঋণের ৭৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে খেলাপি ঋণের পাহাড় জমা হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সরকার কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এই বিপুল অর্থ আর কখনোই ফেরত পাওয়া সম্ভব হবে না। কারণ ঋণ আদায়ে সাম্প্রতিক সময়ে কোন খেলাপির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, এমন নজির নেই।

এবিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ঋণ বিভাগের ব্যবস্থাপক (জিএম) মো. নূরুল ইসলাম বলেন, এই ২১ শাখায় এখন পর্যন্ত যেসব ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে তার বেশিরভাগই পুরাতন। ২০০০ থেকে ২০০৯ সালের খেলাপিঋণগুলো এখন পর্যন্ত আদায় করতে পারিনি। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও কোনো কাজ হচ্ছে না। বারবার আদালত থেকে স্থগিতাদেশের সুবিধা নিচ্ছে তারা। তবে ২০১০ সালের পর থেকে সকল ঋণের গুণগত মান যাচাইবাছাই করেই দেওয়া হয়েছে।

সোনালী ব্যাংকের ঢাকা স্থানীয় কার্যালয়ের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হওয়া একটি প্রতিষ্ঠানের নাম অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। ৩০ মাস মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় কোম্পানিটির দুইটি ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বাসের ঋণ বা লোন এগেইনস্ট ট্রাস্ট রিসিপ্টের (এলটিআর) প্রকৃতির প্রথম ঋণটির পরিমাণ ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা এবং অন্যটির পরিমাণ ৫৩ লাখ টাকা।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ করপোরেট শাখার খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। পুরো টাকাটাই খেলাপি হয়ে আছে মৌসুমী নিট কম্পোজিট লিমিটেডের কাছে। সোনালী ব্যাংকের কাছে টাকাটা অশ্রেণিকৃত হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনের মাধ্যমে এটিকে নিম্নমানের খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম লালদীঘি শাখার মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। মাত্র দুই গ্রুপের মাধ্যমেই খেলাপি হয়েছে এ টাকা। একটি প্রতিষ্ঠানের নাম আরেফিন টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড এবং অন্যটি মেসার্স চিটাগং টেক্সটাইল লিমিটেড। চার থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় খেলাপির তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আরেফিন টেক্সটাইল লিমিটেড। এছাড়া ১৫৯ মাস ধরে কোন কিস্তি পরিশোধ করেনি চিটাগং টেক্সটাইল।

খুলনা করপোরেট শাখায় মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। পুরোটাই জয় জুট মিলস লিমিটেডের কাছে। নাটোর শাখার মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এই শাখায় সবচেয়ে বড় ঋণ খেলাপির নাম নাটোর সুগার মিলস লিমিটেড। ২৪ কিস্তি পরিশোধ না করায় ৪৩ কোটি ২৭ লাখ টাকার শীর্ষ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে নাটোর সুগার মিল।

রংপুর করপোরেট শাখার মোট খেলাপির পরিমাণ ২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং জয়পুরহাট শাখার মোট খেলাপির পরিমাণ ১৮ লাখ টাকা। জয়পুরহাট শাখার বেশিরভাগই শস্য ঋণ বলে জানা গেছে।

সোনালী ব্যাংকের আলোচ্য ২১টি শাখা হলো- সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়; স্থানীয় কার্যালয়, ঢাকা; শিল্প ভবন করপোরেট শাখা, ঢাকা; হোটেল শেরাটন করপোরেট শাখা, ঢাকা; রমনা করপোরেট শাখা, ঢাকা; বঙ্গবন্ধু এভিনিউ করপোরেট শাখা, ঢাকা; দিলকুশা করপোরেট শাখা, ঢাকা; নারায়ণগঞ্জ করপোরেট শাখা, নারায়ণগঞ্জ; ফরেন এক্সচেঞ্জ করপোরেট শাখা, ঢাকা; গুলশান শাখা, ঢাকা; মধুখালী শাখা, ফরিদপুর; আগ্রাবাদ করপোরেট শাখা, চট্টগ্রাম; লালদীঘি করপোরেট শাখা, চট্টগ্রাম; ওয়েজ আর্নার্স করপোরেট শাখা, চট্টগ্রাম; খুলনা করপোরেট শাখা, খুলনা; দৌলতপুর করপোরেট শাখা, খুলনা; দৌলতপুর কলেজ রোড শাখা, খুলনা; নাটোর শাখা, নাটোর; রাজশাহী করপোরেট শাখা, রাজশাহী; রংপুর করপোরেট শাখা, রংপুর; পঞ্চগড় শাখা, পঞ্চগড় এবং জয়পুরহাট শাখা, জয়পুরহাট।

এছাড়া ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকের অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী মোট ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৩৭২ কোটি ১ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকের বিবেচনায় শ্রেণিকৃত বা খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৯৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। যা মোট ঋণ ও অগ্রিমের ২৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অপরদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল কর্তৃক হিসাব অনুযায়ী খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ১৮৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। যা সোনালী ব্যাংকের হিসাবের তুলনায় ৯৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল নয়টি শাখার মোট ৯৬টি অশ্রেণিকৃত ঋণ হিসাব নতুন করে শ্রেণিকরণ করে। যার মাধ্যমে ব্যাংকের হিসাবের চেয়ে শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ খেলাপি বেড়েছে।

সোনালী ব্যাংকের হিসাবে নিম্নমানের ঋণ ছিল ৮১৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে তা কমে দাঁড়ায় ৮০৫ কোটি ৮ লাখ টাকা। সোনালী ব্যাংকের হিসাবে অনিশ্চিত ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৮২ কোটি ৪ লাখ টাকা, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল কর্তৃক উল্লিখিত অনিশ্চিত ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এদিকে ক্ষতিজনক বা কুঋণের পরিমাণ ১০ হাজার ৮৯৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা দেখালেও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৯৯৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১২:৪৭ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০১৯

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।