বিবিএনিউজ.নেট | মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০১৯ | প্রিন্ট | 859 বার পঠিত
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির পারিবারিক মালিকানাধীন সানোয়ারা গ্রুপ অব কোম্পানিজ। চট্টগ্রামভিত্তিক এ গ্রুপটির তিনটি প্রতিষ্ঠান যমুনা ব্যাংকে খেলাপি হয়ে পড়েছে। এগুলো হলো সানোয়ারা ডেইরি ফুডস লিমিটেড, সানোয়ারা ডেইরি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ইউনিল্যাক সানোয়ারা (বিডি) লিমিটেড।
প্রতিষ্ঠান তিনটির কাছে যমুনা ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখার খেলাপি পাওনা প্রায় ৭৫ কোটি টাকা। এ পাওনা আদায়ে বন্ধকি থাকা হাটহাজারীর চিকনদণ্ডী এলাকার ২৬ ডেসিমেল সম্পত্তি নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংক। এজন্য নিলাম দরপত্র আহ্বান করেছে সংশ্লিষ্ট শাখা। আগামী সাত আগস্ট খাতুনগঞ্জ শাখায় এ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ নিলামে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
এর বাইরে খেলাপি ঋণের জন্য গ্রুপটির সানোয়ারা ডেইরি ফুডস লিমিটেডের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করেছে ব্যাংক এশিয়া।
সানোয়ারা গ্রুপ সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৮ সালে দুগ্ধজাত পণ্য বিপণনের মধ্য দিয়ে সানোয়ারা গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়। ব্যবসা ভালো ও লাভজনক হওয়ায় পর্যায়ক্রমে সানোয়ারা ডেইরি ফুডস লিমিটেড, সানোয়ারা ড্রিংকস অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ইউনিল্যাক সানোয়ারা (বিডি) লিমিটেড, সানোয়ারা কনজ্যুমার প্রডাক্টস লিমিটেড, সানোয়ারা গার্মেন্ট লিমিটেড, সানোয়ারা ইন্টারন্যাশনাল প্রডাক্টস লিমিটেড, সানোয়ারা প্লাস্টিক প্রডাক্টস লিমিটেড, সানোয়ারা প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, সানোয়ারা পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি লিমিটেড ও সানোয়ারা হোল্ডিংস লিমিটেডের মতো প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির মালিকানাধীন চট্টগ্রামের সানোয়ারা গ্রুপ অব কোম্পানিজ গড়ে ওঠে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সানোয়ারা ডেইরি ফুডস লিমিটেড ২০০১ সালে দুগ্ধজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনের কার্যক্রম শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৩১ কোটি টাকা। আর প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ১০ হাজার মেট্রিক টন। ‘কোয়ালিটি, বাজেট ও হোম’ ব্র্যান্ড নামে পাঁচটি ভিন্ন সাইজের গুঁড়োদুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনের ব্যবসা করত কোম্পানিটি।
অন্যদিকে ১৯৯০ সালে জুন মাসে যাত্রা শুরু করা ইউনিল্যাক সানোয়ারা (বিডি) লিমিটেড আমদানি কারা গুঁড়োদুধ ‘ডিপলো মিল্ক’ ব্র্যান্ড নামে তিন ধরনের সাইজের প্যাকেটজাত দুধ বাজারজাত করত। এ প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১০ হাজার টন। আর অনুমোদিত মূলধন ছিল তিন কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা।
ব্যাংক-সংশ্লিষ্টরা বলেন, একসময় আমদানি করা গুঁড়োদুধ ব্যবসায় সানোয়ারা গ্রুপের রমরমা ব্যবসা ছিল। তাদের বাজার অংশীদারিত্ব ছিল অন্যান্য প্রতিযোগীদের চেয়েও বেশি। তারা রেড কাউ ব্র্যান্ডের দুধের একক ডিলারও ছিল। এ ডিলারশিপ ভালোই লাভজনক ছিল। পরে ব্যবসার ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়েছেন নুরুল ইসলাম বিএসসি। তিনি এনসিসি ব্যাংকের পরিচালকও ছিলেন। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন কারণে এ গ্রুপের ব্যবসা সংকুচিত হতে থাকে। এ সংকোচনের কারণ ব্যবসায়িক নেতৃত্বের অভাব, ভূমি ব্যবসায় অনিয়ন্ত্রত বিনিয়োগ প্রভৃতি। তারা আরও বলেন, তাদের বিভিন্ন ব্যাংকে ২২০ কোটি টাকার মতো ঋণ আছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ খেলাপি হয়ে আছে।
খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে যমুনা ব্যাংক লিমিটেডের এসভিপি ও খাতুনগঞ্জ শাখা ব্যবস্থাপক মো. সহিদ উল্লাহ বলেন, প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় খেলাপি হয়ে পড়েছে। আর পাওনা আদায়ে বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে বিক্রির জন্য দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এছাড়া চেক প্রত্যাখানের জন্য এনআই অ্যাক্টে মামলা চলমান আছে।
পাওনা আদায়ে খেলাপি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তেমন যোগাযোগ নেই। আসলে গ্রাহকের পাওনা পরিশোধে ইচ্ছা থাকলে তারা নিজ থেকেই এগিয়ে আসবে।
এদিকে ব্যাংক এশিয়া ও অর্থঋণ আদালতের তথ্যমতে, সানোয়ারা ডেইরি ফুডস লিমিটেড বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০০১ সালে ব্যাংক এশিয়ার আগ্রাবাদ শাখা থেকে ঋণ নেয়। শুরুর দিকে ঋণ কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করলেও সাম্প্রতিক সময়ে নিয়মিত কিস্তি পরিশাধে ব্যর্থ হয় কোম্পানিটি। এজন্য একাধিকবার প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের ঋণ পরিশোধে তাগাদা দিলেও পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হন তারা। এতে সানোয়ারা ডেইরি ফুডস লিমিটেডের কাছে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির সুদাসলে পাওনা হয় মোট ৩৬ কোটি ১১ লাখ ২৬ হাজার ৩১৪ টাকা। আর এ পাওনা আদায়ের জন্য গত ১০ জুলাই চট্টগ্রামে অর্থঋণ আদালতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এতে আসামি করা হয় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সানোয়ারা বেগম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান, সাইফুল ইসলাম, জাহেদুল ইসলাম, ওয়াহিদুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম এবং সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসিকে।
এ প্রসঙ্গে জানার জন্য সানোয়ারা গ্রুপ অব কোম্পানিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহেদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এছাড়া নুরুল ইসলাম বিএসসির সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনিও কল রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
Posted ২:৪১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed