আদম মালেক | রবিবার, ২১ জুলাই ২০১৯ | প্রিন্ট | 488 বার পঠিত
পুঁজিবাজারে দরপতন প্রতিরোধসহ বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ড. খায়রুল হোসেন ২০১১ সালে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়ে আজও স্বপদে বহাল। এর মধ্যে অনেক কিছু অদল বদল হলেও অপরিবর্তিত বাজারের অস্থিরতা। চলছে দরপতন । পুঁজি হারাচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। আস্থা তলানিতে। টানা বিক্ষোভ করছেন বিনিয়োগকারীরা। চেয়ারম্যানের ওপর তাদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগের তীরে বিদ্ধ খায়রুল হোসেন। বিভিন্ন সময় বিনিয়োগকারীরা খায়রুল হোসেনের পদত্যাগ দাবি করে আসছে। তার অপসারণের দাবিতে করেছে মিছিল সমাবেশ মানববন্ধন। দ্বারস্থ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
১৮ জুলাই পুঁজিবাজার স্থিতীশীল করতে বিনিয়োগকারীদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। স্মারকলিপিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানসহ পুরো কমিশনারদের অপসারণ করে কমিশন পুনর্গঠনসহ ১৫ টি দাবি উত্থাপন করা হয়।
১৬ জুলাই অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, খায়রুল হক দুধের সঙ্গে পানি মেশানোর ব্যবসা ভালো বুঝেন। এতদিন পর্যন্ত বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে কেউ থাকে না। তার আর এ পদে থাকার কোনো অধিকার নেই। তাই তার লজ্জা হওয়া উচিত।
এর আগের দিন ১৫ জুলাই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে বিক্ষোভ মিছিল থেকে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বিএসইসির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তারা বলেন, খায়রুল তুই রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়। খায়রুলের উদ্দেশ্যে তারা আরও বলেন খায়রুলের গদিতে আগুন জ্বালো এক সাথে।
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান পদে ড. এম খায়রুল হোসেনকে তৃতীয়বারের মতো আরও দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়ায় এর আইনগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুরুতে চেয়ারম্যানের পদটি ছিল তিন বছর মেয়াদের। ২০১২ সালে আইন সংশোধন করে মেয়াদ চার বছর করা হয়। এতে তিন বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই চার বছরের জন্য আবার নিয়োগ পান এম খায়রুল হোসেন। দুই দফায় সাত বছর দায়িত্ব পালনের পর তাঁর শেষ কর্মদিবস হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ১৪ মে। কিন্তু তার আগেই সরকার তাঁকে আরও দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেয়। এ সময় সাবেক অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত দেশে ছিলেন না। দেশে ফিরে এভাবে নিয়োগের আইনগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জনপ্রশাসন, অর্থ ও আইন মন্ত্রণালয় চিঠি চালাচালি করেছে অন্তত চার মাস। কিন্তু বৈধতা প্রশ্ন সরকারের কোনো দপ্তরই এর সমাধান দেয়নি। কিন্তু নিয়োগ পেয়ে ঠিকই চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি।
খায়রুল হোসেনের পদত্যাগ দাবির বিষয়ে তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ,পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানিও কম। ভালো কোম্পানি আনতে পারেনি বিএসইসি। এমনকি বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও সরকারি অনেক কোম্পানিকে আনা যায়নি বাজারে। বরং যেসব কোম্পানি গত ৮ বছরে এসেছে, এদেও অনেকগুলোর দাম এখন অবহিত মূল্যের অনেক নিচে। অথচ এসব মানহীন বা মন্দ কোম্পানিকে প্রিমিয়ামসহ বাজারে আসার অনুমোদন দিয়েছিল বিএসইসি। এসব কোম্পানি যেন টাকা তোলার জন্যই পুঁজিবাজারে আসে। আর সুযোগটি করে দিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্বয়ং। এসব কোম্পানির অনুমোদন পাওয়ার পেছনের কাহিনি নিয়েও আছে অনেক মুখরোচক গল্প, যা নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভাবমূর্তির জন্য মোটেই সহায়ক না।
প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে আসা মানহীন শেয়ারের দর যেমন অভিহিত মূল্যের নিচে, সেকেন্ডারি বাজারেও তেমনি চলে নানা কারসাজি। এর মধ্যেই আবার গড়ে উঠেছে প্লেসমেন্টের এক অবৈধ রমরমা বাজার। এই শেয়ারও বাজারে আসার আগেই একাধিক হাতবদলের ঘটনা ঘটে। এ ক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।
Posted ১২:১৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২১ জুলাই ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed