বিবিএনিউজ.নেট | বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | প্রিন্ট | 908 বার পঠিত
একুশে পদক পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান ও সমাজসেবক সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেছেন, ‘জাতির এই ঋণ কখনও শোধ করতে পারব না’।
বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের খুলশী আবাসিকের পিএইচপি হাউজে গণমাধ্যমের কাছে তিনি এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘পিএইচপি পরিবারের প্রত্যেকের কাছে, বিশেষ করে আমার সন্তান যারা আছে তাদের কাছে আমার নিবেদন, সমস্ত জাতি তোমাদের সম্মানিত করেছে, জাতির এই ঋণ আমরা কখনও শোধ করতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশ সরকার, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমাদের মাদার অব হিউম্যানিটি, জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা এবং তার মন্ত্রিপরিষদ আমার মতো অতি নগন্য সাধারণ একজন মানুষকে এ মহান সম্মান দান করেছেন, আমার কাছে এর শোকর গুজারের কোনো ভাষা নেই। আমি আমার সন্তানরা, আমার পরিবার এবং পিএইচপি ফ্যামেলির আমার হাজার হাজার সহকর্মী সকলে যেন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবতার সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারি সে জন্য দোয়া করবেন।’
একুশে পদকপ্রাপ্ত এ সমাজসেবক বলেন, ‘আমাদের নিজেদের ভোগ-বিলাসকে ত্যাগ করে আমরা যেন আল্লাহর দেয়া মানবসন্তানের পাশে, তাদের দুঃখকে লাঘব করার জন্য নিবিষ্ট মনে কাজ করতে পারি। লক্ষ শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা, লক্ষ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। অনেক সন্তান তার বাবাকে হারিয়েছে, অনেক স্ত্রী তার প্রেমের ধন স্বামীকে হারিয়েছে, অনেক মা তার সন্তানকে হারিয়েছে। লক্ষ শহীদের রক্তমিশ্রিত এই স্বাধীনতাকে আমরা সকলে মিলে অর্থবহ করতে পারি সে চেষ্টা করব।’
প্রসঙ্গত, এবার একুশে পদকের জন্য ২০ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করা হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ভূষিত এ ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রামের তিন বিশিষ্ট ব্যক্তি।
তারা হলেন- গবেষণায় হাফেজ কারি আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ ছাইফুর রহমান নিজামী শাহ, শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া ও সমাজসেবায় অবদানের জন্য পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
সমাজসেবায় অবদানের জন্য একুশে পদক পাওয়া পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ১৯৪৩ সালের ১২ মার্চ বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলায় রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম সুফি মুহাম্মদ দায়েম উদ্দিন। মাতা রাহেতুন্নেছা। গ্রামের পাঠশালায় তার প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু হয়। গ্রামেরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভারতচন্দ্র স্কুল থেকে ১৯৬১ সালে মাধ্যমিক শিক্ষাগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তী সময়ে ওই কলেজে বি.কম ক্লাসে ভর্তি হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক পাস করেন।
১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন রি-রোলিং মিল। তারপর ১৯৮৪ সালে, মোংলা ইঞ্জিনিয়ার্স ওয়ার্কস নামে বিলেট তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন, ওটাই ছিল দেশের প্রথম বিলেট কারখানা। এভাবেই পুরোদস্তুর বিনিয়োগকারী হয়ে ওঠেন সুফি মিজান। ১৯৮৬ সালে ঢাকায় ঢেউটিনের কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন, পিএইচপি রানী মার্কা ঢেউটিন। এরপর সীতাকুণ্ডের কুমিরায় দেন সিআর কয়েল কারখানা। এভাবে একের পর এক বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন এবং সফল হন।
সুফি মিজান পারিবারিকভাবে ঢাকার কাঞ্চননগর গ্রামে ৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল গড়ে তুলেছেন। মাত্র পাঁচ টাকায় সেখানে রোগীদের দেয়া হয় চিকিত্সাসেবা। চট্টগ্রাম শহরের আসকারদীঘি পাড়ে মাউন্ট হাসপাতালসহ শিক্ষার্থীদের স্বল্পমূল্যে উচ্চশিক্ষার জন্য ‘ইউআইটিএস’ গড়ে তুলেছেন তিনি। তার আরেকটি স্বপ্ন আছে দেশের ভেতর একটি আন্তর্জাতিক মানের ক্যানসার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার।
এর আগে সফল ব্যবসায়ী হিসেবে সুফি মিজান লাভ করেছেন ২০০৩ সালের দ্য ডেইলি স্টার অ্যান্ড ডিএইচএল বেস্ট বিজনেস অ্যাওয়ার্ড, ২০০৭ সালে ব্যাংক বীমা অ্যাওয়ার্ড, ২০০৯ ও ২০১১ সালের ব্যাংক বীমা অর্থনীতি অ্যাওয়ার্ড।
Posted ৩:৫২ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed