আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বুধবার, ২৯ এপ্রিল ২০২০ | প্রিন্ট | 433 বার পঠিত
করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী রেমিটেন্স ধসের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে দেশে প্রবাসীদের এক কোটি পরিবার। প্রবাসে চাকরিচ্যুত ও মজুরি কমে যাওয়ায় অর্থ সংকটে পড়ে অনেক পরিবার নতুন করে দারিদ্র্যের কাতারে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে বিশ্বব্যাপী ২০ শতাংশ রেমিটেন্স কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ইতিমধ্যেই রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় সন্তানদের শিক্ষা খাতে ব্যয় বন্ধ এবং শিশুশ্রম বৃদ্ধির শঙ্কাও আছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
প্রবাসীদের পরিবার নিয়ে তৈরি করা বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে। প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দিয়ে বলা হয়েছে- করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী রেমিটেন্স ২০ শতাংশ হ্রাস পাবে। আর বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়াতে এর মাত্রা হবে আরও বেশি। সম্প্রতি ‘ডিকলাইন অব রেমিটেন্স ইন রিসেন্ট হিস্ট্রি’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক।
রেমিটেন্স প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিট ম্যালপাস বলেন, আগামী ২০২১ সালে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো রেমিটেন্স ধসে কিছুটা উত্তরণ ঘটাতে পারবে। আশা করা যায়, সে বছর রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনায় বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে বিশ্বব্যাপী রেমিটেন্স ধসের ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রবাসীদের মজুরি কমছে, চাকরিচ্যুত হচ্ছেন অনেকে। সেখানে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী ৫৫ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিটেন্স পাওয়া গেছে। কিন্তু ২০২০ সালে করোনার কারণে তা কমে ৪৪ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারে নেমে আসবে।
অর্থাৎ করোনার মহামারি রেমিটেন্স খেয়ে ফেলবে ১০ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে রেমিটেন্স কমবে ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ। আর বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় কমবে ২২ দশমিক ১ শতাংশ। যেখানে ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া ইউরোপ ও মধ্য এশীয়ায় হ্রাস পাবে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ, আফ্রিকায় ২৩ দশমিক ১ শতাংশ, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ, লাতিন আমেরিকায় ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ এবং পূর্ব এশিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিকে কমবে ১৩ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রেমিটেন্স নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে দারিদ্র্যবিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অনগ্রসর পরিবারগুলোতে উন্নত ব্যয়ের সক্ষমতা তৈরি করেছে। পাশাপাশি প্রবাসীদের পরিবারে সন্তানদের শিক্ষার পেছনে ব্যয়ে সক্ষমতা বেড়েছে এবং পরিবারের শিশুশ্রম নিরসণে ভূমিকা রাখছে। এখন নতুন করে এসব বিষয় ফিরে আসা নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, পৃথিবীর ১৬৯টি দেশে বাংলাদেশের এক কোটিরও বেশি মানুষ কাজ করেন। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশের কর্মসংস্থান মধ্যপ্রাচ্যে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশিরা একদিকে বেতন পাচ্ছেন না, অন্যদিকে অনেকে ছাঁটাই এবং মজুরি হ্রাসের কবলে পড়েছেন। ফলে প্রবাসীদের অনেকেই এখন বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারছেন না। চাকরি নিয়েও আছে দুশ্চিন্তা।
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে থাকা প্রবাসীদের পরিবারগুলোতে আর্থিক সংকট দেখা দিচ্ছে। কথা বলে বোঝা যাচ্ছে, অনেকেই সংকটে পড়ে গেছেন। বিদেশ যাওয়া বন্ধ, আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি দেশে এসে কর্মস্থলে ফেরা নিয়েও অনিশ্চয়তায় প্রায় দুই লাখ প্রবাসী।
সবমিলিয়ে করোনা ভাইরাস মহামারি বিশ্বজুড়ে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে তার বহুমুখী প্রভাব দেখা দিয়েছে বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী আয়েও। তা ফুটে উঠেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেমিটেন্স পাঠানোর সর্বশেষ হিসাবে। ব্যাংকের তথ্যমতে, গত মার্চ মাসে প্রবাসীরা ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা চলতি অর্থবছরই শুধু নয়, বিগত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
Posted ৪:১০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৯ এপ্রিল ২০২০
bankbimaarthonity.com | saed khan