নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ০৬ মে ২০২০ | প্রিন্ট | 501 বার পঠিত
করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা ও ঋণ প্যাকেজের অর্থ দ্রুততার সাথে ছাড়করণের জন্য দেশের ব্যাংকগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন দেশের শীর্ষস্হানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই এর সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। আজ বুধবারএফবিসিসিআই আয়োজিত “Roadmap to Stimulus Loan Execution 20,000 cr and 30,000 cr” শিরোনামে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফাহিম এ দাবি জানিয়েছেন। সংগঠনটির মতিঝিল কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনায় সরাসরি এবং ভার্চুয়ালি বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ, এফবিসিসিআই এর বেশ ক’জন সাবেক সভাপতি, অর্থনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকগণ অংশ নেন।
শেখ ফাহিম বলেন, দেশের কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাত যেন সহজ উপায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০,০০০ কোটি টাকার প্যাকেজ থেকে ঋণ সহায়তা পায় সেজন্য ব্যাংকগুলোর কাছে জোর দাবি জানান। সারাদেশের ছোট ছোট দোকান, নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষুদ্র ব্যবসা, হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুততার সাথে অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা করার কথা বলেন তিনি। বিশেষ করে, কুটির ও ক্ষুদ্র ব্যবসাকে সহায়তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনে ফেডারেশনের সদস্যভুক্ত সকল চেম্বার ও এসোসিয়েশনগুলোকে যুক্ত করার আহবান জানান ব্যাংকগুলোর প্রতি। তিনি এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেবার জন্য ব্যাংকগুলোর প্রতিষ্ঠান এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এর কাছে অনুরোধ জানান।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজকে ‘টার্গেটেড ও ফোকাসড’ হিসেবে উল্লেখ করে ফাহিম বলেন, এর সফলতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব এখন ব্যাংকগুলোর এবং জাতীয় অর্থনীতিতে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এর সুষ্ঠ ও দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি। “৪ কোটি মানুষকে খাদ্য সহযোগিতা, ইনফরমাল সেক্টরে কর্মরতদের আর্থিক সহায়তায় ৭০০ কোটি টাকা, এসএমই শিল্পের ২০ হাজার কোটি, বৃহৎশিল্পে ৩০ হাজার কোটি, রপ্তানি শিল্পে ৫ হাজার কোটি, কৃষিখাতে ৫ হাজার কোটি টাকার সহায়তার ঘোষণা সাহসী পদক্ষেপ। এখন ব্যাংকগুলোকে সরকারের এই সহায়তা কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে,” তিনি বলেন।
ফাহিম ব্যাংকের তারল্য সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরো যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এবং বেসরকারি বযাংকগুলোকে শক্তি যোগাবে যাতে আর্থিক খাত একটা শৃংখলার মধ্যে থেকে প্রণোদনা প্যাকেজ বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের জন্য বর্তমানে ব্যাংকের তারল্য ৪৬ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবার কথা এবং এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডসহ তা ৭০ হাজার কোটি টাকা হবার কথা এবং statutory liquidity ratio (SLR) এর মাধ্যমে ১ লক্ষ কোটি এক্সেস টু ফান্ড থাকার কথা। এজন্য সরকার প্রণোদনা তহবিলের আওতায় ব্যাংকসমূহকে সুদের হারের ভর্তুকির পাশাপাশি ম্যাচিং ফান্ড সুবিধা প্রদানের বিষয়টি ব্যাংকিংসহ সেক্টরকে সহায়তা করবে।” “এসব বাস্তবতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা যেতে পারে, যাতে বিভিন্ন খাত, বিশেষ করে এসএমই খাত সহজ উপায়ে প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা পায়।”
তিনি আরও বলেন, যদি রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে এবং এফবিসিসিআই এর মত সংগঠনকে সাথে নিয়ে ক্ষুদ্র ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে সহায়তা দিয়ে টিকিয়ে রাখা যায় সেক্ষেত্রে এর একটা বিরাট অংশ ভবিষ্যতে প্রাতিষ্ঠানিক খাতের সাথে যুক্ত হবে। আর যদি তা হয় তবে ব্যাংকিং খাতও তা থেকে ভবিষ্যতে লাভবান হবে বলে জানান ফাহিম।
এফবিসিসিআই অর সাবেক সভাপতি ও জাতীয় সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দীন বলেন, দেশের ব্যবসায়ীরা, বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা যেন আইন বা কাগজের জটিলতায় প্রণোদনা থেকে অর্থ পেতে কোন জটিলতায় না পড়েন সে বিষয়ে লক্ষ রাখা দরকার। এসব ব্যবসায়ীদেরকে সহযোগিতা করার জন্য প্রয়োজনে এফবিসিসিআই এ একটি ‘হেল্প ডেস্ক’ স্থাপন করার কথা বলেন তিনি। তিনি আরো বলেন. প্রণোদনা প্যাকেজের সঠিক বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এফবিসিসিআই এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে সমন্বয় খুব জরুরি।
বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকগণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে দেশের ব্যাংকগুলোতে কোন তারল্য সংকট নেই। এর সমর্থনে এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ব্যাংকগুলোতে কোন তারল্য সংকট না থাকায় প্রণোদনা বাস্তবায়নের পথ অনেকটা সহজ হবে। তিনি বলেন, এফবিসিসিআই এর দাবি অনুযায়ী তারা ‘দ্রুত ও সময়মত’ প্রণোদনার প্যাকেজ বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, তবে অবশ্যই ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের ডকুমেন্টেশনের উপর গুরুত্ব দিয়ে সমন্বয় করে কাজ করবে। সেক্ষেত্রে যেন ব্যাংকগুলো বিপদে না পড়ে সেটাও লক্ষ করে কাজ করবেন হলে জানান। এফবিসিসিআই কে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, তারা সম্ভাব্য এসএমই গ্রাহকদের ডকুমেন্টশনের একটা চেকলিস্ট তৈরি করবেন যাতে ঋণ প্রদান কার্যক্রম দ্রুততর হয়।
এসএমই ফাউন্ডেশন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে ব্যাংকগুলোর এবং প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ ছাড় করানোর জন্য ‘দ্রত সাড়া দিতে হবে’। “তা নাহলে সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। ২০ হাজার কোটি টাকা যদি আমরা টার্গেটেড গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে পারি, তাহলে খুব ভালো। যদি কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্পকে যুক্ত করতে না পারা যায় বা দেরি হয়ে যায় তাহলে সেটা থেকে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবেনা।”
প্লাস্টিক শিল্পের কথা টেনে তিনি বলেন. এই শিল্পে ঋণ অপরিশোধের হার শূণ্য। এটা একটা সফলতা এবং খুবই ইতিবাচক। কুটির শিল্পের প্রায় ৭০ ভাগ গ্রামে অবস্থিত, তারা প্রাতিষ্ঠানিক খাতের সাথে যুক্ত হতে ভয় পায় বা অভ্যস্ত নয়। কিন্তু তাদেরকে যুক্ত করতে না পারলে অর্থনীতির মূল ধারায় যুক্ত করা যাবেনা। তাই তাদেরকে সংযুক্ত করতে হলে তাদের নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।
এফবিসিসিআই পরিচালক মনির হোসেন বলেন, ব্যাংকে তারল্য সংকট নেই. এটা ভালো খবর। ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেবার জন্য সার্কিলার বেশ আগেই জারি হয়েছে, কিন্তু আমরা অভিযোগ পাচ্ছি এখন পর্যন্ত শাখা লেভেল পর্যন্ত কোন নির্দেশনা পৌঁছায়নি। এটা দু:খজনক।
এই নির্দেশনা যদি শাখা পর্যায়ে দৃশ্যমান না হয়, তাহলে কীভাবে হবে? আপনারা ব্যাংকের পক্ষ থেকে এফবিসিসিআই এর সহযোগিতা চাচ্ছেন, কিন্তু যতক্ষণ শাখা পর্যায়ে কোন নির্দেশনা না পৌঁছাবে আমরা কোনভাবেই সহযোগিতা করতে পারবোনা। তাই দ্রুত শাখা পর্য়ায়ে আপনাদের নির্দেশনা যাতে পৌঁছে তার দাবি জানাচ্ছি।
আলোচনায় আরও অংশ নেন এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদ, মীর নাসির হোসেন, মাতলুব আহমাদ, জনতা ব্যাংকের চেযারম্যান জামাল উদ্দিন আহমেদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুস ছালাম আজাদ, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আখতারুজ্জামান প্রধান, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন, এফবিসিসিআই এর সিনিয়র সহ সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ, সহ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, পরিচালক মনির হোসেন, পরিচালক সালাহউদ্দীন আলমগীর, প্লাস্টিক শিল্প খাতের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জসীম উদ্দীন, অর্থনীতিবিদ ও পলিসি এক্সচেঞ্জ এর চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ প্রমুখ।
Posted ১০:৪০ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৬ মে ২০২০
bankbimaarthonity.com | saed khan