নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ১২ মে ২০২০ | প্রিন্ট | 404 বার পঠিত
করোনার প্রভাবে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার কমিয়ে আনছে সরকার। আসছে বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হতে পারে ২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটের তুলনায় ৩ শতাংশের মতো বেশি। অথচ প্রতি বছর উন্নয়ন বাজেট কমপক্ষে ১৫-১৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। সেখানে এবার বাড়ছে মাত্র ৩ শতাংশ। এডিপির পাশাপামিম আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কমছে উন্নয়ন প্রকল্পের সংখ্যা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দসহ অনুমোদিত প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে ১ হাজার ৫৮৮টি (স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া)। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে ছিল ১ হাজার ৭৪৪টি প্রকল্প। ফলে নতুন অর্থবছরে কমছে ১৫৬টি উন্নয়ন প্রকল্প। পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
চলমান ‘লকডাউনে’ প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া এবং সম্পদের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নতুন প্রকল্প গ্রহণকে নিরুৎসাহিত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। ফলে প্রকল্প সংখ্যা কমছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে আগামী অর্থবছরের বাজেটের জন্য ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা এডিপির খসড়া অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় উঠছে আজ। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় সভায় সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব মো. নূরুল আমিন বলেন, করোনার কারণে এ বছর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রকল্পের সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ অন্যান্য বছর যেমন সবগুলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ডেকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রকল্প সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। এবার মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বন্ধ। তারাও ঠিকমতো প্রকল্প সংখ্যা দিতে পারেনি। সবকিছু মিলেই প্রকল্প সংখ্যা কমছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে এডিপির বাস্তবায়ন বাধার মুখে পড়েছে করোনা ভাইরাস সংকটের কারণে। অর্থবছরের গত আট মাসে বাস্তবায়ন যা হয়েছে, তাকে ভিত্তি ধরেই আপাতত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাব্য হিসাব কষছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। কেননা পরের চার মাস কভিড-১৯-এর প্রভাবে এডিপি বাস্তবায়ন প্রায় শূন্য। সে হিসাবে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি অর্জন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যদিও বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বলছে, এটা ৩ শতাংশের বেশি হবে না। এডিবি অবশ্য বলেছে, এবার বাংলাদেশের জিডিপি হবে ৭ শতাংশের বেশি। অবশ্য এডিবি যখন পূর্বাভাস দেয় তখনো কভিড-১৯-এর মহামারি প্রকোপ বাংলাদেশে শুরু হয়নি।
এদিকে যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিপরীতে থাকা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ ছিল, কিন্তু কভিড-১৯-এর প্রভাবে তা অব্যয়িত রয়েছে, সে অর্থ ইতিমধ্যে কভিড-১৯ মোকাবিলায় খরচ করার জন্য কেটে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মেগা প্রকল্পগুলোর কাজেও করোনার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
যদিও সরকার বলছে, কভিড-১৯ এর কারণে আগামী বাজেটে মেগা প্রকল্পের বরাদ্দ কমানো হবে না। তবে সার্বিকভাবে এডিপির আকার কমানো হবে তুলনামূলক। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার সম্ভাব্য এডিপিকেও উচ্চাভিলাষী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
কেননা এখন তো সারা বিশ্বের মানুষের জীবন-জীবিকাই হুমকির মুখে। বাঁচার জন্য লড়াই করছে মানুষ। যার ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশেও। এজন্য এখন এমন ঢাউস আকারের এডিপি না দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষার বাজেট দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।
জানা গেছে, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে মেগা প্রকল্পের বরাদ্দে করোনার কোনো প্রভাব পড়বে না। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ অগ্রাধিকার প্রকল্পে চাহিদা অনুসারে বরাদ্দ নিশ্চিত করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা-পরবর্তীতে অর্থনীতির মোড় ঘোরাতে মেগা প্রকল্প বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এ বিবেচনায় দ্রুত অগ্রাধিকার প্রকল্পের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার মূল এডিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। এর আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোয় চাহিদাপত্র চায় পরিকল্পনা কমিশন। সে চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দও কাটছাঁট করা হয়েছে। কিন্তু মেগা প্রকল্পের ক্ষেত্রে উদারতার পরিচয় দেওয়া হয়েছে। বাস্তবায়নে বিঘ্নতা রোধে চাহিদা মাফিক বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার কোটি টাকা, মেট্রোরেল লাইন ছয় প্রকল্পে দেওয়া হচ্ছে ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা, পদ্মা রেল লিঙ্ক প্রকল্পে ৩ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে ২ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা, দোহাজারী-ঘুনধুম রেললাইন প্রকল্পে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া কর্ণফুলী টানেল, বিদ্যুতের বড় প্রকল্প ও অবকাঠামো খাতে চার লেন প্রকল্পগুলোয় পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্র জানান, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গেল আট মাসে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে ৩৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে এ হার ছিল ৩৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। প্রচলিত নিয়ম ও উন্নয়ন কাজের সিজন অনুযায়ী অর্থবছরের যে চার মাস সবচেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়ন হয় এবার সে চার মাসই (মার্চ-জুন) হয়তো শূন্যের কোঠায় থাকবে। ফলে এ বছর এডিপি বাস্তবায়নের হার বহুবছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে রেকর্ড সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) আকার দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। এ খাতে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নসহ চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ধরা হয়েছিল ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ৯ হাজার ৮০০ কোটি কমিয়ে করা হচ্ছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের জন্য এডিপির আকার ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭০ হাজার ৫০১ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য রয়েছে। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা (স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ বাদে)। পরে সংশোধনের মাধ্যমে সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়ায় ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা।
নতুন এডিপিতে খাতভিত্তিক বরাদ্দের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে পরিববহন খাত। এ খাতে খসড়া বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ৫২ হাজার ১শ’ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ২৪ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে প্রায় ২৩ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা। তবে করোনা বিবেচনায় আগামী অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে সংশোধিত এডিপির তুলনায় বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা এবং কৃষি খাত পাচ্ছে ৮ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা।
Posted ১:৫০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১২ মে ২০২০
bankbimaarthonity.com | saed khan