শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

ডাক্তার ও নার্সদের জন্য চালু হচ্ছে স্বাস্থ্যবীমা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ১২ মে ২০২০   |   প্রিন্ট   |   455 বার পঠিত

ডাক্তার ও নার্সদের জন্য চালু হচ্ছে স্বাস্থ্যবীমা

এবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর বিপরীতে ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনসহ যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন তাদের কেউ আক্রান্ত হলে গ্রেডভেদে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা দেয়ার ঘোষণা ইতোমধ্যে দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি পাঁচগুণ ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণাও দেয়া হয়।

এ বীমার আওতায় কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারি হাসপাতালে নিয়োজিত কোনো ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তার পরিবার ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে এবং নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী মারা গেলে তার পরিবার পাবে ৫ লাখ টাকা। এ বীমার মেয়াদ হবে এক বছর। এ জন্য যে পরিমাণ প্রিমিয়াম প্রয়োজন হবে তার একটি অংশ দেবে সাধারণ বীমা করপোরেশন (সাবিক) এবং বাকি টাকা সরকার কিংবা রেজিস্ট্রেশনকারী বীমাসেবা গ্রহণকারী ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর পাওয়া টাকা থেকে দেয়া হবে। সাধারণ বীমা করপোরেশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সম্প্রতি এ বীমা কার্যক্রম চালুর উদ্দেশ্যে বৈঠক করে সাধারণ বীমা করপোরেশন। বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়, ‘করোনাকালে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সেক্টরের জন্য প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য সেবা খাত যাতে ভেঙে না পড়ে এবং আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে চিকিৎসা কর্মীরা যাতে চিকিৎসাসেবা প্রদানে ভীত না হন, সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে ডাক্তারসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালু ও আর্থিক প্রণোদনার ঘোষণাসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

এতে আরও বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ বীমা করপোরেশন দেশের কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী চিকিৎসা কর্মীদের মনোবল চাঙা রাখতে তাদের মৃত্যুঝুঁকির জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ জন্য জরুরিভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য রেট অ্যান্ড ট্রামসসহ বীমা পলিসি চালুর জন্য ইউরোপসহ বিশ্বে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুনর্বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা হয়। যোগাযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ফ্রান্সভিত্তিক পুনর্বীমা প্রতিষ্ঠান এএক্সএ ফ্রান্স ভিয়ার কাছ থেকে রেট অ্যান্ড ট্রামস্সহ প্রস্তাব পাওয়া গেছে।’

ফ্রান্সের পুনর্বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবনার ওপর সাধারণ বীমা করপোরেশন কিছুটা সংশোধন করে বীমার প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে। এ প্রস্তাব অনুয়ায়ী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে বীমার আওতায় ডাক্তাররা ক্ষতিপূরণ বাবদ পাবেন ১০ লাখ টাকা। নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী পাবেন ৫ লাখ টাকা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে হাসপাতালে ভর্তির কাগজ প্রয়োজন হবে না। এ ক্ষেত্রে বীমায় অংশ গ্রহণকারীদের বয়স সর্বোচ্চ ৭০ বছর হতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাধারণ বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যানের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বের উন্নত কয়েকটি দেশের পুনর্বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগের পর ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠান এ স্বাস্থ্যবীমা চালুর বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে। ইতোমধ্যে প্রডাক্ট তৈরি করে ফেলেছি। এটা অনুমোদনের জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে পাঠানো হয়েছে। সরকার যদি আমাদের গ্রিন সিগন্যাল দেয় তাহলে হাসপাতালগুলোয় বীমার বিষয়টি পাঠাব।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রিমিয়ামের একটা অংশ আমরা আমাদের সিএসআর থেকে বহন করব। বাকিটা সরকার বা যেসব ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী এ বীমায় অংশগ্রহণ করবেন তারা বহন করবেন। বাৎসরিক প্রিমিয়াম মাত্র ডাক্তারদের ক্ষেত্রে ৭ হাজার টাকা এবং নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষেত্রে ৩ হাজার টাকা। প্রিমিয়াম সরকার যদি নাও দেয় তাহলেও একজন ডাক্তার মাত্র ৭ হাজার টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে ১০ লাখ টাকা এবং অন্যরা ৩ হাজার টাকা দিয়ে ৫ লাখ টাকা পাবেন।’

এদিকে গত ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এবং দেশের অন্যান্য কর্মীদের জন্য সরকার তাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য বিশেষ প্রণোদনা দেবে। এ ছাড়া দায়িত্ব পালনের সময় কেউ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে তাদের জন্য ৫-১০ লাখ টাকার একটি স্বাস্থ্যবীমা থাকবে। কেউ মারা গেলে স্বাস্থ্যবীমার পরিমাণ পাঁচগুণ বেশি হবে।

কিন্তু বীমার আওতায় ক্ষতিপূরণ পেতে অনেক সময় লেগে যায়, তাই সরকার বীমার পরিবর্তে সরাসরি আর্থিক ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দেয়। গত ২৩ এপ্রিল এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। পরিপত্রে বলা হয়, “নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ এ সংক্রান্ত সরকারঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারী দায়িত্ব পালনকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ সরাসরি আর্থিক সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার।’

এ ক্ষেত্রে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হলে গ্রেডভেদে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা পাবেন। সরকারি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে এর পাঁচগুণ আর্থিক সহায়তা পাবেন।

পরিপত্রে বলা হয়, ‘২০১৫ এর বেতনস্কেল অনুযায়ী ১৫-২০তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে তিনি ক্ষতিপূরণ পাবেন পাঁচ লাখ টাকা, আর মারা গেলে পাবেন ২৫ লাখ টাকা। ১০-১৪তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন সাড়ে সাত লাখ টাকা এবং আর মারা গেলে পাবেন সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রথম-নবম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন ১০ লাখ টাকা এবং মারা গেলে পাবেন ৫০ লাখ টাকা।’

পরিপত্রে আরও বলা হয়, ক্ষতিপূরণের আওতায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যসেবাকর্মী, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে লকডাউন ও সরকারঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে নিয়োজিত মাঠপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এ সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।

এবার সাধারণ বীমা করপোরেশন ফ্রান্সভিত্তিক পুনর্বীমা প্রতিষ্ঠান এএক্সএ ফ্রান্স ভিয়াকে (AXA France Vie) সঙ্গে নিয়ে স্বাস্থ্যবীমা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ৫:৩৪ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১২ মে ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11389 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।