নিজস্ব প্রতিবেদক | রবিবার, ২৪ মে ২০২০ | প্রিন্ট | 455 বার পঠিত
করোনা ধাক্কায় বড় ধরনের ধস নেমেছে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায়। পরিচালন মুনাফার দীর্ঘদিনের ধারাবাহিকতা নষ্ট করে দিয়েছে কোভিড-১৯। এক মাসের ব্যবধানে বেশিরভাগ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা নেমে এসেছে এক-তৃতীয়াংশে। যা ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি অশুভ সংকেত।
যানা যায়, এপ্রিল মাসে বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২০ কোটি টাকা। কিন্তু এক মাস আগেও তা ছিল ৬০ কোটি টাকা। একই অবস্থা সাউথইস্ট ব্যাংকের। এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ৫৩ কোটি টাকা কমেছে। এপ্রিল মাসে মাত্র ২২ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা হয়েছে সাউথইস্ট ব্যাংকের। আরও করুণ অবস্থা বেসরকারি খাতের ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের। এপ্রিল মাসে মাত্র ১০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা হয়েছে ব্যাংকটির। কিন্তু মার্চ মাসে পরিচালন মুনাফা ছিল ৫০ কোটি টাকা।
করোনার আঘাতে বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বড় ব্যাংকটির মুনাফা পুরোপুরি অর্ধেকে নেমে এসেছে। মার্চ মাসে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালন মুনাফা ছিল ১৬০ কোটি টাকা। কিন্তু এপ্রিল মাসে এসে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮০ কোটি টাকায়। মার্চ ও এপ্রিল মাসের হিসাব অনুযায়ী, পূবালী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা নেমেছে ৭২ থেকে ৩৪ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৫৬ থেকে ১০ কোটি, ব্যাংক এশিয়ার ৭০ থেকে ৩৩ কোটি, শাহ্জালাল ইসলামি ব্যাংকের ৬৩ থেকে ১৮ কোটি, যমুনা ব্যাংকের ৬৩ থেকে ৩০ কোটি, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ৫১ থেকে ১৪ কোটি, ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ৭২ থেকে ২৭ কোটি, আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংকের ৭০ থেকে ৩০ কোটি, সোস্যাল ইসলামি ব্যাংকের ৪২ থেকে ২০ কোটি, এনসিসি ব্যাংকের ৬৫ থেকে ৩১ কোটি, উত্তরা ব্যাংকের ৪২ থেকে ২১ কোটি এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ৪০ থেকে ১৮ কোটি টাকা।
এদিকে, করোনার প্রাদুর্ভাবে বোনাস নয়; বরং বেতন পেতেই হিমশিম খাচ্ছেন কর্মীরা। আবার গোদের ওপর বিষফোঁড়া হিসেবে এসেছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান। এর প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি এখন ত্রাণনির্ভর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
করোনার প্রভাবে সাধারণ ছুটিতে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে গড়ে মোট অনুমিত চলতি ক্ষতির পরিমাণ দিনে কমপক্ষে ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এ হিসাবে ২৬ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৩১ দিনের অবরুদ্ধ অবস্থায় অনুমিত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় কমপক্ষে ১ লাখ ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। মে মাস শেষে অনুমিত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ১৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের দেশীয় উৎপাদনের প্রায় ৯ শতাংশ।
দেশের বিপণিবিতানগুলোতে প্রতিবছর ৮০ হাজার কোটি টাকার ঈদ পোশাকসহ অন্য সাজসজ্জার পণ্য বিক্রি হতো। কিন্তু চলতি বছরে ঈদে মাত্র দুই সপ্তাহ আগে কেনাবেচার অনুমোদন পাওয়া যায়। আর অনুমোদন পাওয়া গেলেও পাইকারি পণ্যের সরবরাহ না থাকায় বিক্রি হাজার কোটি টাকাও না হওয়ার আশঙ্কা করছেন দোকান মালিক সমিতির নেতারা।
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে পালে হাওয়া লেগেছে প্রবাসী আয়ের। চলতি মাসের (মে) প্রথম ২১ দিনে ১১২ কোটি ১০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৯ হাজার ৫২০ কোটি টাকা (১ ডলার সমান ৮৫ টাকা)। গত এপ্রিলে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। তবে গত বছরের (২০১৯) মে মাসের তুলনায় কম। আগের বছরের মে মাসে ১৭৪ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
জাকাত ও ফিতরার প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা, তৈরি পোশাকের ৩৫ হাজার কোটি, ভোগ্যপণ্যের বাজার ২৫ হাজার কোটি এবং ঈদ বোনাস, পরিবহন ও অন্যান্য মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা সরাসরি ঈদকেন্দ্রিক লেনদেন হয় প্রতিবছর। এ ছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ২৭ হাজার কোটি টাকার কিছু অংশ ঈদকেন্দ্রিক লেনদেন হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার আর্থিক লেনদেন হয়। কিন্তু চলতি বছরে করোনার প্রাদুর্ভাবে এর কোনোটাই হয়নি। বরং অন্য সময়ের চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ঈদ অর্থনীতি ব্যতীত সাধারণ সময়ে দৈনিক ৩ হাজার কোটি টাকার পণ্য কেনাবেচা হতো। কিন্তু করোনার প্রভাবে গত এপ্রিলে মাসে দৈনিক বিক্রি পরিমাপ করা হয়নি।
Posted ২:২১ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৪ মে ২০২০
bankbimaarthonity.com | saed khan