বিশেষ প্রতিবেদক | বুধবার, ০২ জানুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট | 2489 বার পঠিত
সরকারী অফিসার যায়, আবার নতুন একজন আসে কিন্তু নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা ফেনীর চিহ্নিত দালাল স¤্রাট মনৌজ ভৌমিক এর দালালি। অনিয়ম দুর্ণীতির মধ্যে দিয়ে বিআরটিএ বার বার আলোচনায় আসলেও কর্তৃপক্ষের সেল্টারে এই সব দালালরা নিয়মিত সাধারণ গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করছে অফিস খরচের নামে অতিরিক্ত চাঁদা। বিআরটিএ ফেনী সার্কেল নিয়ে আমাদের অনুসন্ধানি প্রতিবেদনের পাঁচ পর্বের আজ প্রথম পর্ব।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ফেনী অফিসটি দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। দালাল ছাড়া কোন কাজ করতে গেলে পদে পদে হয়রানীর শিকার হতে হয় গ্রাহকদের। এই বিআরটিএ চিহ্নিত দালালদের মধ্যে রয়েছে স্টার লাইন পরিবহনের ট্রান্সপোর্ট কর্মকর্তা মনোজ ভৌমিক, ও তার ছোট ভাই বিদ্যুৎ ভৌমিক। তাদের রয়েছে ফেনী শহরের কলেজ রোডে জে.সি টাওয়ার ৪র্থ তলায় রাণী এন্টারপ্রাইজ নামে একটি অফিস যার ভিজিটিং কার্ডে লিখা আছে “এখানে বিআরটিএর সকল কাজের পরামর্শ দেওয়া হয়” । খোঁজ নিতে অনুসন্ধানি টিম জে. সি টাওয়ারে গিয়ে দেখে অফিসটি বন্ধ রয়েছে। তখন গ্রাহক সেজে অফিসের বিদ্যুৎ ভৌমিকের সাথে ফোনে আলাপ করলে তিনি বারৈয়ারহাট এলাকায় গ্রাহকদের কাছ থেকে কাজ নিতে এসেছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ: ফেনী বিআরটিএ অফিসের দালালী করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র যার সাথে জড়িত আছেন উক্ত সার্কেলের কয়েকজন কর্মকর্তা। ড্রাইভিং লাইসেন্স ও সিলিন্ডার পরীক্ষা, গাড়ীর ফিটনেস, রুট পারমিট ইস্যুও নবায়নসহ প্রতিটি কাজের জন্য নির্ধারণ করা আছে ঘুষের পরিমান। দালালদের অভিযোগ এই টাকা তারা অফিসের কর্মকর্তাদের দিতে হয়। সরকারী ফি এর বাহিরে কত টাকা ঘুষ দিতে হবে তা নির্ধারণ করে দেয় কর্মকর্তারা। ঘুষের টাকার নিয়ন্ত্রন করে মোটরযান পরিদর্শক মাহবুবে রাব্বানি ও ম্যাকানিক্যাল অফিসার মোশারফ হোসেন। আর সেই টাকার অতিরিক্ত যা নেওয়া যায় তা দালালদের। ফিঙ্গার প্রিন্ট ছাড়া বাকী সব কাজ হোম ডেলিভারী দিয়ে থাকে দালালেরা এই কাজে সুনাম অর্জন করেছে বিআরটিএ এর দালাল সিন্ডিকেটের মনোজ ভৌমিক ও তার ছোট ভাই বিদ্যুৎ ভোমিক। যেসব কাজে গ্রাহক স্বশরীরে বিআরটিএ অফিসে উপস্থিত থাকার কথা তবে দালালদের কারণে সেসব ক্ষেত্রেও গ্রাহকদের আসতে হয় না। তার জন্য বাড়তি টাকা গুনতে হয় গ্রাহককে।
সিএনজি মালিকরা জানায় : একটি গাড়ির নাম পরিবর্তনের জন্য সরকারী ফি’র অতিরিক্ত ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা নেয়া হয়। সিলিন্ডার সনদের জন্য ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা, ৩শ’ টাকার বীমার জন্য ১ হাজার টাকা, মোটরসাইকেলের ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন ৪ হাজার টাকা দালালদের দিতে হয়।
সিএনজি গাড়ির সিলিন্ডার টেস্ট করানো হয় নোয়াখালীর জমিদারহাটে। টেস্ট করতে ফি নেয়া হয় ১ হাজার ২ শ’ টাকা। টেস্ট করাতে হলে ফেনী থেকে গাড়িগুলো জমিদার হাটে নিতে হয় এবং বড়ি খুলতে ৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়।
গাড়ির মালিক ফেনী বিআরটিএ অফিসের কর্মকর্তা ও দালালের হাতে টাকা তুলে দিলে ২/৩ দিনের মধ্যে সনদ এনে দেয় কোন ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই। ফলে গ্যাস সিলিন্ডারগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া সনদ দেয়ার কারণে ত্রুটি চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। ত্রুটিপূর্ণ সিলিন্ডার সিএনজি গাড়িতে থাকায় যে কোন সময়ে সিলিন্ডারে আগুন ধরে প্রাণহানীর ঘটনা ঘটতে পারে।
এছাড়াও পরিদর্শন ছাড়া ফিটনেস সনদ দেয়ার কারণে লক্কর-ঝক্কর যানবাহন বাড়ছে। যা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারন। তবে এই বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। দালালদের টাকা দিলে ঢাকা থেকে লোক এসে দিয়ে যায় নাম্বার প্লেট। কিভাবে হয় সেটা কারনটা অফিসিয়াল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন দালাল জানান, আমরা বাড়তি যে টাকা নিয়ে থাকি তার অধিকাংশই স্যারের হাতে (মোটরযান পরিদর্শক মাহবুব রাব্বানী) তুলে দিতে হয়। টাকা ছাড়া স্যার ফাইলে স্বাক্ষর করেন না। স্যার কত টাকা দিতে হবে তাও স্যার ঠিক করে দেন।
একটি মিনি ট্রাকের নাম্বার প্লেটের জন্য এসেছেন ছাগলনাইয়া উপজেলার জসিম উদ্দিন। তিনি জানান, তিনদিন অফিসে ধরনা দিয়ে আবেদন জমা দিতে পারেননি। এক অফিসারের নিকট গেলে বলে অন্যের কাছে যাওয়ার জন্য। আবার কারো কাছে পাঠালে দেখা যায় তিনি চেয়ারে নাই, কোথায় গেছে তাও জানেন না।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ফেনী বিআরটিএ সহকারী পরিচালক পার্কন চৌধুরী বলেন, সরকারী নিয়ম অনুযায়ী সব কাজগুলো করা হচ্ছে। অনেকে তাদের চাহিদানুযায়ী বেআইনী সুবিধা না পেয়ে এসব অপপ্রচার করছে।
Posted ১:১৬ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০২ জানুয়ারি ২০১৯
bankbimaarthonity.com | Sajeed