আদম মালেক | শনিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট | 369 বার পঠিত
করোনা ভাইরাসে ধস নেমেছে পোশাক খাতে। বন্ধ হয়েছে অনেক কারখানা। কোথাও ঘটেছে শ্রমিক ছাঁটাই। ছাঁটাইয়ের হুমকিতে আছেন অনেক শ্রমিক। প্রধান পোশাক রফতানি বাজার ইউরোপের দেশগুলেতে দ্বিতীয় দফায় করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ায় আরো ধসের আশঙ্কা করছেন রফতানিকারকরা।
পোশাকখাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) পরিচালক মো. আতিক। তিনি বলেন, পোশাকখাতের অবস্থা খারাপ। করোনায় এমনিতেই অনেক রফতানি আদেশ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এ সংকট থেকে কিছুটা বেরিয়ে আসলেও আবারো নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইউরোপে দ্বিতীয় দফায় করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। নতুন করে আবারও লকডাউনের কবলে পড়তে যাচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। এ কারণে পোশাক রফতানিতে আরো ধস নামবে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) আরেক পরিচালক কেএম রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, পোশাক রফতানিতে এমনিতে নিম্নমুখী প্রবণতা। করোনায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত পোশাকখাত। অস্তিত্ব রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে এ খাত সংশ্লিষ্টরা। ইউরোপে নতুন করে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ায় পোশাকখাত আরো বড় সমস্য পড়বে। সহসা এ সংকট থেকে পরিত্রাণের উপায় দেখছি না।
যুক্তরাজ্য, কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশ পোশক রফতানির প্রধান বাজার। এর মধ্যে ফ্রান্স ২য় দফায় লকডাউন জারি করেছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও পুনরায় লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন। লকডাউনের প্রহর গুনছে অনেক দেশ। এ কারণে এসব দেশ থেকে রফতানি আদেশ কমছে হচ্ছে। আবার নতুন বাজারের মধ্যে ভারত মারাত্মক করোনা কবলিত। এখানে রফতানি কমেছে অস্বাভাবিক। অস্বাভাবিক রফতানি কমার তালিকায় রয়েছে ব্রাজিল চিলি চীন মেক্সিকো ও জাপান। তবে অস্ট্রেলিয়া রাশিয়া ও তুরস্কে রফতানি বেড়েছে।
পোশাক কারখানা মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, রফতানিতে ৮৩ শতাংশ আয় করা পোশাক খাত চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে আয় করেছে ১০ দশমিক ৪৫০ বিলিয়ন ডলার (১ বিলিয়ন=১০০০ মিলিয়ন), যা আগের বছরের এই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ২০ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের আলোচ্য সময়ে এই খাতের রফতানি আয় ছিল ১০ দশমিক ৫৭৭ বিলিয়ন ডলার।
গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে নতুন বাজারে মোট রফতানি হয়েছিল ১ হাজার ৮১৪ মিলিয়ন ডলার (১ মিলিয়ন=১০ লাখ), যা ওই সময়ের মোট রফতানির ১৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। কিন্তু চলতি অর্থবছরের একই সময়ে নতুন বাজারে ১০ দশমিক ০৮ শতাংশ রফতানি কমেছে। গত জুলাই-অক্টোবরে সেখানে রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৬৩১ মিলিয়ন ডলার, যা মোট রফতানির ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ।
২০০৮ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় ইউরোপ ও আমেরিকার নাগরিকদের ভোগক্ষমতা এবং চাহিদা কমে আসে। প্রচলিত এ দুই বাজার হারানোর শঙ্কায় নতুন বাজারের সন্ধানে নামে সরকার এবং উদ্যোক্তারা। নতুন নতুন দেশ বা অপ্রচলিত বাজারে রফতানি উৎসাহ জোগাতে প্রচলিত বাজারের বাইরে নতুন বাজারে রফতানিতে ৪ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা ঘোষণা করে সরকার। ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে এই প্রণোদনা প্যাকেজ কার্যকর হয়। এ সুবিধায় অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, ভারতসহ অন্তত ৩০টি দেশে পোশাক রফতানিতে গতি আসে। গত অর্থবছরের করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর পূর্ব পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত ছিল। করোনাকালে এসব বাজারে রফতানিতে নতুন করে ধাক্কা লাগে। এজন্য গত ৪ মাসে নতুন বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের হিস্যা কমতে শুরু করেছে।
Posted ৪:৪৮ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed