বিশেষ প্রতিবেদক | সোমবার, ১৬ নভেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট | 1160 বার পঠিত
বীমা খাতের মুখ্য নির্বাহী হতে নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতা ও দক্ষতাকে মাণদণ্ড নির্ধারণ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। কেউ সিইও হতে চাইলে তাকে এসব শর্তপূরণ করতে হবে। কিন্তু এ শর্তে ঘাটতি থাকার পরও সিইও হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে। আবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি হলেও তা আমলে নেয়নি পরিচালনা পর্ষদ, অথচ ঋণ পরিশোধ না করায় আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ভারপ্রাপ্ত সিইও কামরুল হাসান খন্দকারের নিয়োগকে কেন্দ্র করে এমনটি জানা গেছে বিশ্বস্ত সূত্রে।
তথ্যমতে, বেসরকারি জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে চলতি বছরের ১ মার্চ মাসে চিফ মার্কেটিং অফিসার (সিএমও) হিসেবে যোগদান করেন কামরুল হাসান খন্দকার। যোগদানের কিছুদিন পর কোম্পানির সিইও বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডল পদত্যাগ করলে গত ৭ এপ্রিল ভারপ্রাপ্ত সিইও’র দায়িত্ব পান কামরুল হাসান। সিইও’র পূর্ণ দায়িত্বে তাকে অর্পণ করতে সম্প্রতি আইডিআরএ’র কাছে চিঠি দেয় কোম্পানির পরিচালকা পর্ষদ। অথচ সিইও হওয়ার ক্ষেত্রে আইডিআরএ’র নির্ধারিত মানদণ্ডেই উত্তীর্ণ হতে পারেননি তিনি।
সিইও নিয়োগ পেতে আইডিআরএ’র নির্ধারিত শর্তগুলোর একটি হচ্ছে, কোম্পানির মুখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত নিম্নপদে অন্যূন তিন বছর দায়িত্ব পালন করতে হবে। অথচ সিইওর অব্যবহিত নিম্নপদে তিন বছর দায়িত্ব পালনের কোনো নজির নেই। যদিও গোল্ডেন লাইফে থাকাকালীন ৭ মাস সিইও’র চলতি দায়িত্ব পালন করেছেন বলে জীবন বৃত্তান্তে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করে প্রাইম ইসলামী লাইফে সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (উন্নয়ন) হিসেবে যোগদান করেন।
তবে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার দায়ে মামলার আসামি হওয়া তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কেননা মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ ও অপসারণ বিধিমালা-২০১২-এর ৫(ঘ) অনুযায়ী প্রার্থীর অযোগ্যতা হলো- ‘তিনি কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ঋণখেলাপি হিসেবে ঘোষিত হন’।
এ বিষয়ে জানা যায়, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে চাকরিরত অবস্থায় ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানীর টিকাটুলি এলাকার কেএম দাস লেনে ফ্ল্যাট কিনতে প্রতিষ্ঠান থেকে ৩৭ লাখ টাকা ঋণ নেন। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে এমনকি এখন পর্যন্ত সেই ঋণের টাকা শোধ করেননি তিনি। ফলে ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে ঢাকা পঞ্চম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা (নং: মানি সু-৯/২০১৭) দায়ের করে মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ, যা এখনো চলমান।
এদিকে ব্যবসায়িক পারফরমেন্সের ক্ষেত্রেও অনেকটা পিছিয়ে আছেন কামরুল ইসলাম। ইতোপূর্বে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত অবস্থায় সাফল্য তেমনটা দেখাতে পারেননি। ফলে একমাত্র মেঘনা লাইফ ছাড়া অন্য কোথাও স্থির হতে পারেননি। প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতিতে দক্ষতা প্রদর্শনে ব্যর্থতায় ২০১৯ সালে সানফ্লাওয়ার লাইফ থেকে তাকে অব্যাহতি দিতে নির্দেশ প্রদান করেন কোম্পানি চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল মান্নান। এক্ষেত্রে জানা যায়, গত ১১ জুলাই ২০১৮ সালে কোম্পানিতে যোগদানের পর ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ে তার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ কোটি টাকা। কিন্তু মাত্র ৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন তিনি। অথচ একই সময়ে কোম্পানি থেকে বেতন-ভাতা বাবদ নিয়েছেন ১১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এমন পারফরমেন্সের দায়ে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে মাত্র ১ মাসের নোটিশ দিয়ে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতির নির্দেশ দেয় সে কোম্পানি।
এ নিয়ে খন্দকার কামরুল হাসানের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করলে তা হলুদ সাংবাদিকতা হবে।’ অনিয়মের বিষয়ে জেনেও সিইও হিসেবে নিয়োগ অনুমোদনের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থায় চিঠি দেয়ায় যমুনা লাইফের পর্ষদকে অভিযুক্ত করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। এমন অনিয়ম ঘটলে তা অন্য কোম্পানিকেও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করবে বলে মনে করেন তারা।
Posted ৩:২৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৬ নভেম্বর ২০২০
bankbimaarthonity.com | Sajeed