শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

Ad
x

প্রিমিয়ার লিজিংয়ে অস্থির আর্থিক প্রতিষ্ঠান

আদম মালেক   |   শনিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২০   |   প্রিন্ট   |   473 বার পঠিত

প্রিমিয়ার লিজিংয়ে অস্থির আর্থিক প্রতিষ্ঠান

অস্থিরতা বিরাজ করছে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে। প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সে প্রশাসক নিয়োগ অস্থিরতা আরো বাড়িয়ে দেয়। লাল তালিকাভুক্তির পর প্রতিষ্ঠানটি গভীর খাদে নিমজ্জিত । নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেও শেষ রক্ষা অনিশ্চিত। খারাপ অবস্থায় আরো অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অবসায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েও পুনর্গঠনের জন্য হামাগুড়ি দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি আজও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

জানা গেছে, ঋণ বিতরণে অব্যবস্থাপনা, সম্পত্তির ঝুঁকি ও তারল্য সংকটে দুরবস্থায় রয়েছে ‘রেড’ জোনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো। ঋণ বিতরণে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না এসব প্রতিষ্ঠান। অনেকে আমানতের তুলনায় ঋণ বিতরণ করেছে বেশি। ক্যাশ ফ্লো বা পরিচালন নগদ প্রবাহও ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। ফলে আমানতের টাকা সময়মতো গ্রাহককে ফেরতও দিতে পারছে না বলে অভিযোগ রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

৩৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চারটি ছাড়া সবক’টির অবস্থাই খারাপ। এর মধ্যে বিপদসীমার উপরে থাকায় প্রিমিয়ার লিজিং উদ্ধার করতে এসেছে প্রশাসক। ডুবন্ত পিপল্স লিজিং অবসায়নের সিদ্ধান্ত নিয়ে এখন পুনর্গঠনের পথ খুঁজছে। রেড জোনে (সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়) আছে আরো ১০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া ইয়েলো জোনে বা ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় ১৮টি।

আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে না পারায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশাসক নিয়োগ দিলো প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সে। দেশের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগের ঘটনা এই প্রথম।

২০১৯ সালের নিরীক্ষিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির মোট সম্পদের পরিমাণ কমে এক হাজার ৬৯৮ কোটি টাকায় নেমেছে। ২০১৭ সালে যা এক হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা ছিল। আমানতের ক্ষেত্রেও পতনমুখী প্রবাহ। ২০১৭ সালে কোম্পানিটির আমানত ছিল ৯৬৭ কোটি টাকা। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৫৩ কোটি হ্রাস পেয়ে তা ৮১৪ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এ আমানতের ৯০ শতাংশই প্রাতিষ্ঠানিক। যার বেশিরভাগই ফেরত দিতে পারছে না প্রিমিয়ার লিজিং। ঋণ বিতরণেও প্রতিষ্ঠানটির ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি। চার বছরে ঋণ বিতরণ কমেছে ১৬৫ কোটি টাকা।

প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হামিদ মিয়া এ বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টেলিফোনে তাকেও এ রকম একটি বিষয় জানানো হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নির্দেশনা তিনি পাননি। তিনি জানান, যতদূর শুনেছি কানাডা প্রবাসী ফারুক হোসেন নামে একজন আমানতকারী দুই কোটি টাকার জন্য উচ্চ আদালতে রিট করেন। সুদসহ গত ৮ মার্চ তার অর্থ ফেরত দেওয়া হয়েছে। এরপরও উচ্চ আদালতের একটি আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক হয়তো এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রিমিয়ার লিজিংয়ের চেয়ে মারাত্মক সংকটাপন্ন অবস্থায় পতিত হয় পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড। এজন্য গেল বছরের ১০ জুলাই আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে না পিপল্স লিজিং অবসায়নের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। হাইকোর্টের অনুমতিও নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে অবসায়নের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে কোম্পানিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু আমানতকারীরা আজও তাদের অর্থ ফেরত পায়নি।

এর আগে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স করপোরেশনকে (বিআইএফসি) অবসায়নেও সরকারের মতামত চেয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকার তাতে কোনো মতামত দেয়নি।

গত জুন পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণ করা মোট ঋণের ১৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। এর মধ্যে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানির বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৮৮৪ কোটি টাকা। বিতরণ করা ঋণের ৮৩ দশমিক ১২ শতাংশই খেলাপি।

পিপলস লিজিংয়ের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সিংহভাই খেলাপি। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের অবস্থা খুবই শোচনীয়। এটিকে পুনর্গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণের মধ্যে আড়াই হাজার কোটি টাকাই খেলাপি।

Facebook Comments Box
top-1
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Posted ১:০১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২০

bankbimaarthonity.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

রডের দাম বাড়ছে
(11389 বার পঠিত)

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

Sat Sun Mon Tue Wed Thu Fri
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
প্রধান সম্পাদক: মোহাম্মাদ মুনীরুজ্জামান
প্রকাশক : সায়মুন নাহার জিদনী
নিউজরুম:

মোবাইল: ০১৭১৫-০৭৬৫৯০, ০১৮৪২-০১২১৫১

ফোন: ০২-৮৩০০৭৭৩-৫, ই-মেইল: bankbima1@gmail.com

সম্পাদকীয় ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: পিএইচপি টাওয়ার, ১০৭/২, কাকরাইল, ঢাকা-১০০০।