| বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ ২০২২ | প্রিন্ট | 178 বার পঠিত
৪০ কোটি টাকার হাতিয়ে নিয়েছেন ’আল তাকদীর’ নামে এক ভুয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক আলমগীর হোসাইন। অবশেষে ৯ মার্চ দিবাগত রাতে রাজধানীর খিলগাঁও ও গুলশান এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতা আলমগীরসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। গ্রেফতার হওয়া ৩ জন হলেন; মো. আলমগীর হোসাইন (৪৮), মো. শফিকুল ইসলাম (৪৬) মো. ইমরান হোসাইন (৪৪)। সিআইডি কর্মকর্তারা এই অপরাধীদের কাছ থেকে ৬টি মোবাইল, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডারের কপি, সাপ্লায়ারদের সঙ্গে স্ট্যাম্প চুক্তিপত্রের কপি ও একটি ১ কোটি টাকা কাবিনের ফটোকপি জব্দ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) দুপুরে মালিবাগে অবস্থিত সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন এই চাঞ্চ্যকর তথ্য জানান। তিনি আরও জানান, গত ৮ মার্চ রাজধানীর গুলশান থানায় প্রতারক আলমগীর ও তার চক্রের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। মামলার পর ছায়াতদন্ত শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
তিনি জানান, রাজধানীর গুলশানে ’আল তাকদীর’ নামে একটি ভুয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের রাজকীয় অফিস চালু করেন প্রতারক আলমগীর হোসেন। পরে হাজার হাজার কোটি টাকার ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার তেরি করে সাপ্লায়ারদের আকৃষ্ট করতেন চক্রের সদস্যরা। সাপ্লায়াররা অফিসে কাজের চুক্তি করতে গেলে গুলশানের নামি-দামি রেস্টুরেন্ট থেকে শতাধিক আইটেম খাবার দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করতেন আলমগীর।
এভাবে সাপ্লায়ারদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে প্রজেক্টের বালির অর্ডার নিতো চক্রটি। সর্বশেষ সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে ব্রিজ প্রজেক্টের ৩০ েেকাটি সিএফটি বালি সাপ্লাইয়ের জন্য ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছে বলে প্রচারণা চালায়। এ বালি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সাপ্লায়ারদের সঙ্গে ভুয়া চুক্তি করে আলমগীর হোসাইনের চক্রটি। চুক্তি অনুযায়ী কমিশন হিসেবে সাপ্লায়ার কোম্পানির মালিকদের কাছ থেকে ৩৫-৪ কোটি টাকা নিয়ে নেয় চক্রটি। পরে এ টাকা আত্মসাৎ করে অফিস বন্ধ করে পালিয়ে যায় চক্রের মূলহোতা আলমগীরসহ বাকিরা।
সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আলমগীর হোসাইন গুলশানে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে একটি অফিসে নেন। সেখানে আল তাকদীর ইন্টারন্যাশনাল নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলেন। প্রতিষ্ঠানটি খুলে ৮ হাজার কোটি টাকার ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছেন বলে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। সর্বশেষ ২০২১ সালে সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে ব্রিজ প্রজেক্টের ৩০০ কোটি সিএফটি বালি সাপ্লায়ার ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছে বলে প্রচারণা চালায়।
তার নিজস্ব অনলাইন টিভি (তাকদীর টিভি) চ্যানেলে ব্যাপকভাবে এ প্রচারণা চালায়। এসব প্রচারণা দেখে প্রলুব্ধ হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার প্রায় ৩০০ আগ্রহী সাপ্লায়ার তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। ১ সিএফটি বালিতে ১০ টাকা লাভ হবে বলে সাপ্লয়ারদের তিনি বলেন। এভাবে সাপ্লায়ারদের সঙ্গে ভুয়া চুক্তি করে কমিশন হিসেবে সাপ্লায়ারদের কাছ থেকে ৩৫-৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।
সিআইডি কর্মকর্তা ইমাম হোসেন বলেন, প্রতারক আলমগীর হোসাইন নিজেকে অতি বড় মাপের কন্ট্রাক্টর প্রমাণের জন্য গুলশান-১-এ অফিস নিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে অফিসের ডেকোরেশন করে। গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে ১১০ আইটেমের খাবার পরিবেশন করে সাপ্লায়ারদের আপ্যায়ন করে। বড় সাপ্লায়ারদের নিয়ে বিভিন্ন রিসোর্টে কয়েকবার বড় ধরনের পার্টির আয়োজন করে।
প্রজেক্ট এলাকায় সাপ্লায়ারদের নিয়ে ‘প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে ব্রিজের বালি সরবরাহের নিজস্ব ডাম্পিং পয়েন্টের শুভ উদ্বোধন’ লেখা ব্যানারে যমুনা সেতুর পাশে লালগালিচা বিছিয়ে ধুমধাম করে কাজ উদ্বোধন করেন। যার অনেক ছবি ও ভিডিও চিত্র বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে রয়েছে। এ প্রোগ্রামে নামি-দামি অনেক ব্যক্তিদের হাস্যোজ্জ্বল উপস্থিতি দেখা যায়। তার এ ধরনের কার্যকলাপ দেখে বিশেষ করে টাঙ্গাইল এলাকাসহ দেশের অন্যান্য এলাকার অনেক সাপ্লায়ার কাজ পাওয়ার আশায় প্রতারক আলমগীরের অফিসে এসে চুক্তি করে প্রতারিত হয়েছে। পরে সবার টাকা আত্মসাৎ করে অফিস ও মোবাইল ফোন বন্ধ করে উধাও হয়ে যান আলমগীর। এসব চাঞ্চল্যকর অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৯ মার্চ (বুধবার) রাতে আলমগীরসহ চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন বলেন, প্রতারক আলমগীর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে। প্রতারণার কাজ চলার মধ্যেই লেনদেনের সূত্র ধরে সালমা সুলতানা সুইটি নামে ইস্টার্ন ব্যাংকের এক নারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে ওই নারীর সঙ্গে তার সখ্য গড়ে উঠে। ওই নারী ব্যাংক কর্মকর্তা নিজে গ্রান্টার হয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে ২ হাজার কোটি টাকার এলসি, ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ক্যাশ করে দেবেন বলে আলমগীরকে আশ্বস্ত করেন। এমন আশ্বাস পেয়ে আলমগীর তার ১ম স্ত্রীকে না জানিয়ে ব্যাংকার সালমা সুলতানা সুইটিকে দাবি মোতাবেক ১০ কোটি টাকা কাবিন দিয়ে গত বছরের জুলাই মাসে বিয়ে করেন। বিয়ের পর গুলশানের একটি বাসায় মাসিক ২ লাখ টাকা ভাড়ায় ২য় স্ত্রীকে নিয়ে থাকা শুরু করেন।
এদিকে মানুষকে প্রতারিত করে আত্মসাৎ করা টাকা দিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীকে চাহিদা মতো কোটি টাকার গহনা ও নগদ টাকাসহ প্রায় ৪ কোটি টাকা দেন তিনি। পরে এলসি না হওয়ায় আলমগীর ও তার দ্বিতীয় স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হয়। একপর্যায়ে গত বছরের নভেম্বর মাসে আলমগীরকে ডিভোর্স দিয়ে ১০ কোটি টাকা দেনমোহর আদায়ের জন্য তার দ্বিতীয় স্ত্রী আদালতে মামলা করেন।
সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি গণমাধ্যমকে আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে প্রতারক আলমগীর আগেও নানা কৌশলে বিভিন্নভাবে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আলমগীর আগে বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল নামে ট্রাভেল এজেন্সি খুলে সৌদি আরবের জাল ১৫০টি ভিসা নিয়ে প্রতারণা করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। তার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার ও প্রতারণার অভিযোগে ডজন খানেক মামলা রয়েছে বলে জানান সিআইডির এই কর্মকর্তা।
Posted ৪:৪৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy