নাসির আহমাদ রাসেল | বুধবার, ২৫ মে ২০২২ | প্রিন্ট | 388 বার পঠিত
ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: ইসলামি বীমা বিধিমালা প্রণয়নের জন্য ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে আইডিআরএ। বিধিমালার একটি খসড়া পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। এই বিধিমালা প্রণীত হলে বীমা খাত কীভাবে সুফল পেতে পারে বলে মনে করেন?
পিপলু বিশ্বাস: মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণ শরীয়াহসম্মত বীমার প্রতি বেশি আগ্রহী। তারা চান শরীয়াহসম্মত একটি পলিসি করতে। সেক্ষেত্রে ইসলামি বীমা বিধিমালা প্রণয়ন হলে দ্রুত গতিতে বীমা গ্রাহকের সংখ্যা বাড়বে। আমরা যারা ইসলামি শরীয়াহভিত্তিক পলিসি বিক্রি করি তাদের জন্যও সুবিধা হবে। সুতরাং এই বিধিমালা ইসলামি বীমার সম্ভাব্য গ্রাহকদের যেমন বীমা সুরক্ষার আওতায় আনবে, তেমনি কোম্পানিগুলোকেও ব্যবসা সফল করতে সহায়ক হবে।
ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: কোম্পানির ইসলামি বীমা (তাকাফুল) উইন্ডো পরিচালনার ক্ষেত্রে বীমা চুক্তি, তহবিল গঠন, বিনিয়োগ ইত্যাদিতে ইসলামি শরীয়াহর বিধি-বিধান পরিপূর্ণভাবে প্রতিপালন সম্ভব হচ্ছে কী?
পিপলু বিশ্বাস: কোম্পানির ইসলামি বীমা (তাকাফুল) উইন্ডোর ক্ষেত্রে ইসলামি শরীয়াহ মোতাবেক পরিচালিত ব্যাংকে আমাদের আলাদা অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আইনি সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও শরীয়াহ কাউন্সিলের সাথে পরামর্শ করে, তাদের নির্দেশনা নিয়েই যতটা সম্ভব আমরা তাকফুল বীমা কার্যক্রম পরিচালনা করি।
ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: ইসলামি জীবন বীমা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত জানতে চাই।
পিপলু বিশ্বাস: ইসলামি জীবন বীমা ইতিমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। অন্য ধর্মাবলম্বীরাও ইসলামি বীমা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখছেন, গ্রাহক হচ্ছেন। বীমার প্রতি অনাগ্রহী মানুষরাও বীমা করছেন, বীমার প্রতি ঝুঁকছেন। আমরা যখন গ্রাহককে ইসলামি ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রিমিয়াম জমা দিতে বলি তখন তারা উৎফুল্ল হন। শরীয়াহ’র অনুসরণ ও আমানতের সুরক্ষার ব্যাপারে নিশ্চিত হন।
ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: ইসলামি ইন্স্যুরেন্সে আপনাদের বর্তমান ব্যবসায়িক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাই।
পিপলু বিশ্বাস: প্রচলিত বীমায় যে হারে আমাদের গ্রাহক বাড়ে বা প্রিমিয়াম জমা হয়, তার চেয়ে তিনগুণ বেশি গ্রাহক ইসলামি বীমার পলিসি কিনছেন, প্রিমিয়াম দিচ্ছেন। ইসলামি বীমা পলিসি বিক্রি করতে আমাদের খুবই সুবিধা হয়। আমরা যখন বলি তাদেরকে সুদ নয়, আমরা লভ্যাংশ দেব; তখন খুব সহজেই আমরা তাদের হৃদয় জয় করতে পারি। এর অন্যতম কারণ অধিকাংশ মানুষই সুদ এড়িয়ে যেতে চান।
ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতি: প্রচলিত বীমা এবং ইসলামি বীমার মধ্যে পার্থক্য কী বা ইসলামি বীমার বৈশিষ্ট্য কী?
পিপলু বিশ্বাস: ইসলামি জীবন বীমার প্রধানতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর স্বচ্ছতা। ইসলামী জীবন বীমা কোম্পানি তাকাফুল স্কিমে অংশগ্রহণকারী সকল সদস্যের প্রদত্ত অর্থের জিম্মাদার বা ট্রাস্টি। স্বভাবতই জমাকৃত অর্থ কিভাবে বিনিয়োগ করা হবে, কত অংশ জমাকারীর নিজস্ব হিসাবে জমা থাকবে, কত অংশ অনুদান বা তাবাররু হিসাবে জমা করা হবে; অংশগ্রহণকারীর নিজস্ব হিসাবের লভ্যাংশের কত ভাগ বীমা কোম্পানি গ্রহণ করবে, কতভাগ নিজস্ব হিসেবে জমা হবে, এসব ব্যাপারে খোলাসা করে চুক্তির সময় অর্থাৎ পলিসিতে সুস্পষ্ট উল্লেখ করতে হয়। সনাতন জীবন বীমা পলিসিতে এ ধরনের কোন বিষয় উল্লেখ করতে হয় না।
এছাড়া ইসলামি জীবন বীমার সম্পূর্ণ মূল্য নির্ণয় করা হয় সনাতন বীমার পদ্ধতি হতে ভিন্নতর পদ্ধতিতে। বীমা আইনে সম্পূর্ণ/ গ্যারান্টিকৃত সমর্পণ মূল্য নির্ণয়ের ফর্মুলা অ্যাকচ্যুয়ারি কর্তৃক নির্ধারিত হয়। ইসলামি জীবন বীমায় সমর্পণ মূল্য নির্ভর করবে অংশগ্রহণকারীর নিজস্ব হিসাবে লাভসহ কত জমা আছে তার ওপর শরীয়াহর নীতির আলোকে অ্যাকচ্যুয়ারিকে তা নিরুপণ করতে হবে। অপরদিকে ইসলামি বীমায় প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী ভুল তথ্য/ মিথ্যা তথ্য প্রদানের কারণে চুক্তি বাতিল হতে পারে, কিন্তু অংশগ্রহণকারীর প্রদত্ত অর্থ বাজেয়াপ্ত করা যায় না। সনাতন জীবন বীমা পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চুক্তি অনুসারে যদি প্রিমিয়াম দেয়া না হয় তাহলে বীমাপত্রটি বাতিল হয় এবং যদি বীমাপত্রটি পরিশোধিত মূল্য প্রাপ্ত না হয় (পেইড অব ভ্যালু) তাহলে জমা দেয়া টাকা ফেরত দেয়া হয় না। ইসলামি জীবন বীমায় যে কোন অবস্থায় ‘নিজস্ব হিসাবে’ জমাকৃত টাকা লাভসহ ফেরত দেয়া হবে। এমনকি বীমা গ্রাহক আত্মহত্যা করলেও নিজস্ব হিসাবে জমাকৃত টাকা লাভসহ প্রাপ্য হয়। তবে নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী সার্ভিস চার্জ কেটে রাখা যেতে পারে। আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, প্রচলিত বীমা ব্যবস্থায় বীমা গ্রাহকের মনোনীত ব্যক্তি/ব্যক্তিগণ পলিসির টাকা এককভাবে পাবার অধিকারী। কিন্তু ইসলামি জীবন বীমা ব্যবস্থায় মনোনীত ব্যক্তি ইসলাম ধর্মের অনুসারী হলে তিনি বীমা কোম্পানি হতে যে অর্থ প্রাপ্য হন তা ইসলামের উত্তরাধিকার আইন অনুসারে বণ্টন করার নিশ্চয়তা বিধান করতে হয়। প্রচলিত বীমায় লাভবিহীন পলিসি বিক্রয় করা যায়। কিন্তু ইসলামি জীবন বীমায় অংশগ্রহণকারী সবসময় লভ্যাংশের দাবিদার।
সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য ব্যাংক-বীমা-অর্থনীতির পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
Posted ৪:৩৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৫ মে ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy