আবুল কাশেম | বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই ২০২২ | প্রিন্ট | 219 বার পঠিত
ঢাকা শহর ক্রমেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। নগরবাসীর অসহনীয় দুর্ভোগ দিনদিন রেড়েই চলছে। এই দুর্ভোগ সহসা কমবে না, বরং বাড়বে। একসময় ঢাকা শহরকে বলা হতো মসজিদের শহর। এখন পরিণত হয়েছে যানজট, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, জলাবদ্ধতা এবং অবৈধ রিকশার শহরে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলাচলের বৈধতা দেওয়ার জন্য দুই সিটিতে ৪ লাখ ৬১ হাজার রিকশা ও ভ্যানের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে এক লাখ ৯১ হাজার রিকশা, ভ্যান, ঠেলা গাড়ী, ঘোড়ার গাড়ীসহ অযান্ত্রিক পরিবহনের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে ঢাকা উত্তর সিটিতে পৃথকভাবে আরো ২ লাখ ৭০ হাজার রিকশা ওভ্যানের লাইসেন্স দেওয়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগের এক কর্মকর্তা ২ লাখ ৭০ হাজার রিকশার লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্তের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ওই কর্মকর্তা জানান, ডিএনসিসির মেয়রের নির্দেশে রিকশার লাইসেন্স ইস্যুর সঙ্গে সঙ্গে ৫ বছরের ফি একত্রে আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে নগরীতে অবৈধ রিকশা নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। প্রতিটি রিকশার ডিজিটাল নম্বর ও প্লেট থাকবে। তিনি আরো বলেন, ২০১৬ সালের আইন আইনে নগরীতে রিকশার লাইসেন্স ফি প্রতি বছরের জন্য ৫০০ টাকা , আবেদন ফি ১০০ টাকা, অন্যান্য ফি ১ হাজার টাকা এবং ডিজিটাল নম্বর প্লেট ফি ২ হাজার টাকা গ্রহণের জন্য প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে রিকশার এই ফি ৫ বছরের জন্য একত্রে আদায়ের বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে ।
অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপসের মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছির এই প্রতিনিধিকে অবৈধ রিক্শা নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আরআইডি’ প্রযুক্তিতে নতুন রিকশা, ভ্যানসহ অযান্ত্রিক পরিবহনের ডিজিটাল লাইসেন্স ইস্যু করা হচ্ছে। ডিএসসিসি’র ওয়েব সাইটে রিকশার নাম্বর, মালিকের নাম, ছবিসহ প্রয়োজনীয় তথ্য থাকবে। ন্যাশনাল আইডিকার্ডে মতো স্কেন করা মাত্রই রিকশা ও ভ্যানের সঠিক নম্বরসহ যাবতীয় তথ্য দেখা যাব। এক নম্বরে একাধিক রিকশা ও ভ্যান চালানোর আর সুযোগ থাকবে না।
তিনি আরো বলেন, ডিএসসিসিতে বর্তমানে লাইসেন্স প্রাপ্ত ভাড়ায় চালিত রিকশা এক লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৮টি, ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত রিকশা ৬ হাজার ৪৫৬টি, ভ্যান ২৫ হাজার ৬৭১টি, ঠেলা গাড়ী ২৮৬টি, চালী গাড়ি ৪০১টি, পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ঘোড়ার গাড়ী ৩০৬টি।
জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছির বলেন, গত বছর ২০২১ সাল থেকে এই কর্মসূচির কার্যক্রম চলছে। প্রতিবছর ১১০০ টাকা করে রিকশার ফি নেয়া হচ্ছে। এই বছরও রিকশা, ভ্যানসহ অযান্ত্রিক পরিবহনের লাইসেন্স নবায়নের ফি নেওয়া হচ্ছে। তবে ডিজিটাল সার্ভারে সংযুক্ত করার কার্যক্রম চলছে। এই কার্যক্রম শেষ হলেই প্রত্যেক রিকশা, ভ্যানসহ অযান্ত্রিক পরিবহনের মালিককে ডিজিটাল নাম্বর প্লেট সরবরাহ করা হবে। লাইসেন্স প্রাপ্ত ও তালিকার বাইরের সব অবৈধ রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ীসহ অযান্ত্রিক পরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হবে। ফলে নগরীতে দ্রুত রিকশা, ভ্যানসহ অযান্ত্রিক পরিবহন নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে এবং যানজটও অনেকটা কমবে।
সূত্র মতে, ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে লাইসেন্স প্রাপ্ত রিকশা, ভ্যান, টালিগাড়ি, ঘোড়ার গাড়ির সংখ্যা ছিল প্রায় ৯০ হাজারের মতো। এরবাইরে আরো কয়েক লাখ রিকশা ও ভ্যান চলতো। ঢাকা শহরের যানজটের মূল কারণ হিসেবে প্রথমেই অবৈধ রিকশা, ভ্যান আর রাস্তা ও ফুটপাতের হকারদের দায়ী করা হয়। নগরীতে প্রায়ই অবৈধ রিক্শা, ভ্যান আটকের অভিযান চোখে পড়ে। হকারদের বিরুদ্ধেও মাঝে মধ্যে উচ্ছেদের অভিযান চালায় ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। কিন্তু নগরীর গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, সদরঘাট, বকশিবাজার, লালবাগ, আজিমপুর, নিউমার্কেট, ঝিগাতলা, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ি, মিরহাজীবাগ,বাসাবো, খিলগাঁও, রামপুরা, মগবাজার, মালিবাগ, পুরো মিরপুর, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, রায়েরবাজার, ফার্মগেট, রাজাবাজার, নাখালপাড়া, প্রভৃতি এলাকা অবৈধ রিক্শা, ভ্যান আর হকারদের দখলে। যতই দিন যাচ্ছে যানজটের ভয়াবহ পরিস্থিতি আরো বাড়ছে।
সূত্র মতে, নগরীতে জনদুর্ভোগের অনেকগুলো বাস্তব কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে, রাস্তা ও গলিপথের সংস্কারের নামে সারাবছরই খোঁড়াখুঁিড়র পাশাপাশি ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত অবৈধ ও অবৈধ রিকশা, ভ্যান, সিএনজি, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস এবং যাত্রীবাহীবাস ও মিনিবাস চলছে। শুধু তাই নয়, নগরীর ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাসহ অধিকাংশ এলাকার রাস্তা, ফুটপাত ও গলিপথের দুই পাশেই রয়েছে হকারদের দোকান। সবকিছু মিলে ঢাকা শহর এখন ভয়াবহ যানজটের নগরীতে পরিণত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সরে জমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রচণ্ড তাপমাত্রা ও গরমের মধ্যে রাস্তায় ঘন্টার পর পর ঘন্টা যানজটে আটকে রয়েছে লোকজন। সড়কের পরিস্থিতি সহ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে দিন দিন।
ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেছেন, দীর্ঘ ৫০ বছরেও ঢাকা সিটি করপোরেশনকে কোনও অভিভাবকত্ব দেওয়া হয়নি। ঢাকার মেয়রকে নগরপিতা বলা হয়। একটি উন্নত রাজধানী গড়ার জন্য কোনও উন্নয়ন পরিকল্পনা কোনও সময়ই নেয়নি। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ যে সকল সরকারি সংস্থা পরিষেবা দিয়ে থাকে, তাদের প্রকল্পনির্ভর পরিকল্পনার ওপরে সিটি করপোরেশন চলেছে। গত ২০ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম’ আয়োজিত ‘রাজধানীর উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক নগর সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এসব কথা বলেন।
Posted ৬:৫৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই ২০২২
bankbimaarthonity.com | rina sristy